১৬ মাস পর ‘ঘরে’ ফিরছে চীনের ভবঘুরে হাতির পাল
১৬ মাস ধরে ঘর ছেড়ে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছিল চীনের একপাল হাতি। অবশেষে বাড়ি ফিরছে সেই হাতির পাল।
দক্ষিণ-পশ্চিমের থাইল্যান্ডের সীমান্তের কাছে থাকত এই দলছুট হাতিগুলো। এদেরকে ঘরে ফেরাতে দিনরাত খেটেছেন বনবিভাগের প্রায় চল্লিশ জন দমকলকর্মী। ড্রোনের সাহায্যে পালটির ওপর চব্বিশ ঘণ্টা নজর রেখেছেন তারা।
হাতিগুলো কোনো লোকালয়ে প্রবেশ করলেই উদ্ধারকারী দলটি সে এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়েছেন, যাতে পশুগুলো দুর্ঘটনাবশত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট না হয়। লোকালয়ের কাউকে ঘরের বাইরে থাকতে দেওয়া হয়নি।
প্রায় এক বছর আগে এই পথহারা পালটি বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
হাতিদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়াটা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এরা সাধারণত কম দূরত্বের পথ পাড়ি দেয়।
কিন্তু, এই হাতির পালটি এক বছরের বেশি সময় ধরে চীনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। জঙ্গলের মূল 'ভিটে' ছেড়ে প্রায় পাঁচশো কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছে এরা।
অনেকের ধারণা, এই হাতিরা চীনের ইউনান প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জিশুয়াংবানা এলাকার মেংইয়াংজি নেচার রিজার্ভ বনাঞ্চল থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। বনাঞ্চলটি চীনের মিয়ানমার ও লাওস সীমান্ত সংলগ্ন। গত কয়েক মাসে হাতিগুলো দেশটির বেশ কিছু গ্রাম ও শহরের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছে।
দীর্ঘ এই যাত্রায় ওরা কখনও খেতখামারের ওপর দিয়ে, কখনও বুনো পথে, কখনও লোকালয়ের ব্যস্ত রাস্তা ধরে, আবার কখনোবা মহাসড়কের ওপর দিয়ে চলেছে। এই পুরোটা সময় চীনা মিডিয়া এদের নিয়ে খবর পরিবেশন করেছে।
অবশেষে ১৬ মাস পর ঘরে ফিরছে হাতিগুলো। দিনরাত খেটে এদেরকে নিজ আস্তানায় ফেরাচ্ছেন দমকলকর্মীরা।
গত জুনে সংবাদমাধ্যম এপি জানিয়েছিল, হাতিগুলোর ওপর নজর রাখার জন্য জরুরি ও পুলিশ বিভাগের ৪১০ জন সদস্য, ১৪টি ড্রোন এবং বিশটির মতো যানবাহন মোতায়েন করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ।
হাতিগুলোর বাড়ি ফিরতে অবশ্য আরও কয়েক মাস লেগে যাবে। হাতিরা সাধারণত দিনে ১৮ মাইল পথ পাড়ি দেয়।
হাতিগুলো নিজেদের আস্তানা ছেড়েছিল কেন, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় আছেন বিশেষজ্ঞরা। পালটিতে প্রথমে ১৬টি হাতি ছিল। পরে দুটি হাতি ঘরে ফিরে যায়, আরেকটিকে জিশুয়াংবানা ন্যাশনাল নেচার রিজার্ভে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এই যাত্রায় পালটিতে দুটো বাচ্চারও জন্ম হয়েছে।
সফরকালে কিছু মজার কাণ্ডও ঘটিয়েছে হাতিগুলো। একবার এক বাচ্চা হাতি গাঁজিয়ে রাখা শস্যে মুখ দেয়। গাঁজানো শস্য থেকে উৎপন্ন অ্যালকোহল পেটে যাওয়ায় বাচ্চাটি মাতাল হয়ে পড়েছিল। ফলে দলছুট হয়ে পড়েছিল সে। নেশা কেটে যাওয়ার একদিন পর সে আবার পালে ফিরে আসে।
এখন পর্যন্ত এই পালটি ১ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ফসল নষ্ট করেছে। গত মার্চে যে দুটো হাতি নিজে থেকে বাড়ি ফিরে গেছে, ফেরার পথে ওদের পায়ের নিচে পিষ্ট হয়ে মারা যান এক ব্যক্তি।
চীনে কোনো হাতির এত দূরের পথ পাড়ি দেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। বিজ্ঞানীরা একমত যে, এটা হাতিদের স্থান পরিবর্তন নয়। কারণ এই পালটি কোনো নির্দিষ্ট পথ ধরে এই যাত্রা করেনি, উদ্দেশ্যহীন ঘুরে বেড়িয়েছে।
বর্তমানে পৃথিবীর খুব অল্প কয়েকটি জায়গায় হাতির বংশবৃদ্ধি হচ্ছে। সেসব জায়গার একটি চীন। এর কারণ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে দেশটির বিশাল উদ্যোগ। হাতি শিকার দেশটি কঠোর হাতে দমন করেছে। এর ফলে ইউনান প্রদেশে বন্য হাতির সংখ্যা ১৯৩ থেকে বেড়ে প্রায় ৩০০টি হয়েছে।
- সূত্র: ইনসাইডার ডটকম