২০১২ সালে ওবামার ২০.৫% কর দেওয়া নিয়ে সমালোচনা করেন ট্রাম্প, সেবছর তিনি নিজেই কর দেননি
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পূর্বসূরি বারাক ওবামা ২০১২ সালে মাত্র ২০.৫% আয়কর দিয়েছিলেন বলে ইতোপূর্বে এক টুইট বার্তায় অভিযোগ করেছিলেন। সেই অভিযোগে নতুন করে আলোকপাত করেছে প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন। সেখানে বলা হচ্ছে, বিগত কয়েক বছর ধরেই করফাঁকি দিয়ে আসছেন বর্তমান এ প্রেসিডেন্ট। কিছু পরিমাণে দিলেও তা আয়ের হিসাবে শূন্যের কোঠায় রয়েছে- বলা চলে।
নিজ টুইটে ২০১২ সালে ওবামার প্রদত্ত আয়কর তথ্যই তুলে ধরেছিলেন ট্রাম্প। যার বরাতে তিনি জানান, ওই বছর মোট ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৬৭৪ ডলার আয়ের বিপরীতে তিনি এক লাখ ৬২ হাজার ৭৪ ডলার কর দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারকে।
তথ্যটি দিয়ে নিজের মন্তব্য যোগ করে ট্রাম্প লেখেন, ''@বারাক ওবামা আমাদের সকলের কর বাড়াতে চান। অথচ তিনি নিজে ৭ লাখ ৯০ হাজার ডলারের চাকরি করে মাত্র ২০.৫% করে দিয়েছেন। (আয়কর বিবরণীর ওয়েব লিঙ্ক) এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়, তিনি যা করতে বলেন তা নিজেই মানেন না।''
উল্লেখ্য, তিনি যে লিঙ্কটি যোগ করেছিলেন, তা এখন আর কার্যকর নয়।
ওই সময়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে রিপাবলিকান দলে নিজের সম্ভাবনার পাল্লা ভারি করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন ট্রাম্প। এসময় তিনি একের পর এক অভিযোগ এনেছেন ওবামার বিরুদ্ধে। একজন শত কোটি ডলারের মালিক ব্যবসায়ী হিসেবে নিজের ইমেজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছিলেন তিনি।
কিন্তু, নিউ ইয়র্ক টাইমসের বিস্ফোরক প্রতিবেদনটি মার্কিন আয়কর বিভাগের সূত্র উল্লেখ করে জানায়, ট্রাম্প অন্যের কর নিয়ে মাতামাতি করলেও, দীর্ঘদিন ধরে নিজের আয়কর বিবরণী জনসাধারণের কাছে গোপন করে আসছেন। এমনকি তিনি প্রায় এক দশক ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য আয়করও পরিশোধ করেননি।
বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত নিজ ব্যবসায়িক উদ্যোগে বিপুল লোকসানের কথা উল্লেখ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ১৮ বছরের মধ্যে ১১ বছরই কোনো আয়কর দেননি। দৈনিকটি এসব বছরের আয়কর নথি পরীক্ষা করে বিষয়টি নিশ্চিত করে।
এমনকি ২০১৫ সালে নির্বাচনে প্রার্থীতার জন্য নাম লেখানোর আগের চার বছর কর দেননি ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ট্রাম্প। সেই হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ২০১২ সালেও তিনি নিজে কর না দিয়েই ওবামার বিরুদ্ধে ব্যঙ্গাত্মক টুইট করেছেন।
২০১৫ এবং ২০১৬ সালে ট্রাম্প মাত্র সাড়ে ৭শ! ডলার কর দেন। যা একজন গড়পড়তা মার্কিন কর্মীর প্রদত্ত করের চাইতেও যৎসামান্য। অথচ নির্বাচনী প্রচারণার সময় বলেছেন, একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে অভিজ্ঞতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে তিনিই সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি।
তবে নির্বাচনী বিধিমালার মৌলিক শর্ত হিসেবে ট্রাম্পকে বাধ্য হয়েই তার আয়কর বিবরণী জমা দিতে হয়। সেটাই সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমসের হাতে আসে।
২০১২ সালের ট্রাম্পের টুইটের পর ওবামার কর রিটার্ন নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল। এবারও আগামী নভেম্বরের নির্বাচনের ঠিক আগে ট্রাম্পের গোমড় ফাঁস করে দিল মার্কিন দৈনিকটি। যার সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে ট্রাম্প এত কম হারে কর দেন, যা ছিল তার ব্যক্তিগত সহকারীর প্রদত্ত করের চাইতেও কম।
ওই সময় পুনঃনির্বাচনের জন্য লড়ছিলেন বারাক ওবামা। তিনি রিপাবলিকান দলের প্রতি বৈষম্যমূলক করনীতি প্রণয়ন নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন, এবং পুনঃনির্বাচিত হলে এগুলো দূর করার প্রতিশ্রুতি দেন।
তাই ওবামার বিরুদ্ধে করফাঁকির অভিযোগের পরই রিপাবলিকান দলে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বাড়ে। এবং চূড়ান্ত প্রার্থীতার দৌড়ে তিনি বেশ এগিয়ে যান এরফলে। রিপাবলিকান দলের ক্রমাগত আক্রমণের মুখে ওই সময় হোয়াইট হাউজ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ওমাবা বিশ্বাস করেন তার আরও কর পরিশোধ করা উচিৎ ছিল।
যদিও ওবামার আয়কর প্রসঙ্গ নির্বাচনী ইস্যুতে সমালোচিত হওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কারণ, প্রায় ৩৯টি দাতব্য সংস্থায় ওবামা এক লাখ ৭২ হাজার ১৩০ ডলার অনুদান দেন। সেকারণেই তার কর হার কম নির্ধারণ করেছিল কেন্দ্রীয় আয়কর বিভাগ।