২০১৯ থেকেই বিলের সঙ্গে বিচ্ছেদের পরিকল্পনা করেন মেলিন্ডা
গত সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হওয়ার ঘোষণা দেন বিল গেটস এবং মেলিন্ডা। তবে, হুট করে ভাঙছে না তাদের সংসার। দীর্ঘসময় ধরেই বিচ্ছেদের পরিকল্পনা করে আসছিলেন মেলিন্ডা।
বিল গেটসের সাথে বিচ্ছেদের আবেদন করার প্রায় দুবছর আগেই আইনজীবীদের পরামর্শ নিয়েছিলেন মেলিন্ডা গেটস। তিনি জানান, তাদের মধ্যকার বৈবাহিক সম্পর্ক এমনভাবে ভেঙে গেছে যে তা আর জোড়া লাগানো সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য এবং বিচ্ছেদ আবেদনের নথিপত্রের ভিত্তিতে এমনটাই জানিয়েছে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
২৫ বছরের দীর্ঘ সময়ের বিবাহ বন্ধন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ২০১৯ সাল থেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একাধিক আইনজীবীর সাথে সাক্ষাৎ করেন ৫৬ বছর বয়সী সমাজকর্মী মেলিন্ডা।
গত সোমবার, বিলিয়নিয়ার এই যুগল বিবাহের সমাপ্তি টানার ঘোষণা দেন। টুইটারে এক যৌথ বিবৃতিতে তারা লেখেন, "যুগল হিসেবে আমরা আমাদের জীবনের পরবর্তী ধাপে আর একসাথে আগাতে পারব বলে মনে হয় না।"
তবে, ঠিক কী কারণে বিচ্ছেদের পথে হাঁটছেন, সে বিষয়ে খোলাসা করেননি কেউ। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশনের সাবেক একজন কর্মী এবং অন্যান্যদের বক্তব্য অনুসারে একটি সূত্রের মত হলো, ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনের সাথে স্বামীর যোগাযোগের কারণে উদ্বিগ্ন ছিলেন মেলিন্ডা। যৌন নিপীড়নের দায়ে দোষী সাব্যস্ত জেফরি কারাবাসে থাকাকালে ২০১৯ সালে অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। ফাউন্ডেশনের সাবেক ঐ কর্মী জানান, ২০১৩ সাল থেকেই বিলের সাথে জেফরির সম্পর্ক নিয়ে মেলিন্ডা চিন্তিত ছিলেন।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিচ্ছেদ নিয়ে সমঝোতা করেছিলেন এই যুগল। তাদের তিন সন্তানের বয়সই এখন আঠারোর ওপর।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের অক্টোবরে মেলিন্ডা গেটস তার উপদেষ্টাদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেন। সে সময় এপস্টেইনদের সাথে গেটসের নিয়মিত যোগাযোগের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, এপস্টেইনের ম্যানহাটনের বাড়িতে একবার দীর্ঘসময় ধরে রাত কাটান বিল গেটস।
বিল গেটসের মুখপাত্র ব্রিজিট আরনল্ড সেসময় জানান, ২০১৯ সালে জনসেবামূলক কাজের সূত্র ধরে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন বিল এবং এপস্টেইন। আরনল্ড বলেন, "বিল গেটস এপস্টেইনের সাথে যেকোনো ধরনের যোগাযোগের জন্য অনুশোচনায় ভুগছেন। সেই সঙ্গে বিষয়টি তিনি পর্যালোচনার ত্রুটি হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন।"
শিশু-কিশোরদের যৌন পাচারের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে সাজা খাটছিলেন জেফরি এপস্টেইন। জেলে থাকাকালে ২০১৯ সালের আগস্টে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশনের সাবেক কর্মী আরও জানান, ২০১৩ সালে এপস্টেইনের সাথে বিল এবং মেলিন্ডার সাক্ষাৎ হয়। নারী ও শিশু বিষয়ক বৈশ্বিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা মেলিন্ডা সে সময় স্বামীকে জানিয়েছিলেন যে তিনি এপস্টেইনের সাথে সহজ বোধ করেন না।
কিন্তু, মেলিন্ডা উদ্বিগ্ন থাকার পরও বিল এবং ফাউন্ডেশনের কয়েকজন কর্মী এপস্টেইনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখেন।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের কাছে এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেন, "তার সাথে আমার দেখা হয়েছে। কিন্তু, আমাদের মধ্যে কোনো বন্ধুত্বপূর্ণ বা ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল না।"
৬৫ বছর বয়সী বিল গেটসের একজন মুখপাত্র শুক্রবার বলেন, বিল ২০১৯ সালে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া বিবৃতির বিষয়ে স্থির আছেন। তবে, বিচ্ছেদের কারণ সম্পর্কে জানতে যাওয়া হলে মেলিন্ডার মুখপাত্র কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
২০২০ সালের শুরুতে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে বিশ্বনেতা ও ব্যবসায়ীদের বার্ষিক সম্মেলনের আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দেন বিল এবং মেলিন্ডা। দীর্ঘ সময় ধরে এই যুগল সম্মেলনটিতে অংশগ্রহণ করে আসছেন। সেসময়, আমন্ত্রণ গ্রহণ না করায় চমকে গিয়েছিলেন অনেকেই।
গত সপ্তাহে তাদের বিচ্ছেদের বিষয়টি প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আসে।
- সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল