২০ বছর পর আফগানিস্তান ছেড়ে গেল সর্বশেষ আমেরিকান সেনা
২০ বছর ধরে চলা মিশনের ইতি টেনে কাবুল ত্যাগ করেছে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সর্বশেষ ফ্লাইট। সোমবার এক মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গত ১৪ আগস্ট তালেবান আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার আগে থেকে এখন পর্যন্ত মোট এক লাখ ২২ হাজার লোককে বিমানযোগে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, তালেবানের ক্ষমতায় ফেরার পর ঝুঁকিতে থাকা আমেরিকান এবং আফগানদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য পাঠানো সব মার্কিন সেনাদের কাবুল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা দেন যে, ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তানে উদ্ধার অভিযান শেষ করবে যুক্তরাষ্ট্র; ফলে আফগানিস্তান তালেবানের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কাবুল বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের হাতে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের পাশাপাশি অনুবাদক, স্থানীয় দূতাবাসের কর্মকর্তা, নাগরিক অধিকার কর্মী, সাংবাদিক এবং ঝুঁকিতে থাকা আফগানদের সরিয়ে নিতে থাকে।
এদিকে পশ্চিমা জোট ও তালেবান উভয়ের শত্রু ইসলামিক স্টেট (আইসিস-কে) এর দায় স্বীকার করা আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৩ মার্কিন সেনা এবং বিমানবন্দরের আশেপাশে অবস্থানরত শতাধিক আফগান নাগরিক নিহত হলে মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া জটিলতর হয়ে উঠে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাইডেনের বেঁধে দেয়া সময়সীমার আগেই লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হলো।
কাবুল বিমানবন্দরে জোড়া বিস্ফোরণের পর জো বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এ ঘটনার পেছনে জড়িতদের খুঁজে বের করবেনই। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চড়া মূল্য দিতে হবে বলেও সেসময় উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এদিকে মার্কিন সেনা বহরের প্রত্যাহারের মধ্যে দিয়ে দেশের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ফিরে পাওয়ায় তালেবান সমর্থকরা কাবুল জুড়ে উদযাপন করেছে।
বিবিসির সূত্র মতে, কাবুলে তালেবানের কিছু সমর্থক মঙ্গলবার ভোরে বাতাসে গুলি ছোঁড়ে এবং উচ্চ আওয়াজে গাড়ির হর্ন বাজিয়ে উল্লাস করে।
মধ্যরাতে কাবুল বিমানবন্দর ত্যাগ করে আমেরিকান সেনাদের শেষ ফ্লাইটটি। তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, সে মুহূর্তটিতেই আফগানিস্তান 'পূর্ণ স্বাধীনতা' লাভ করে।
আরেকজন শীর্ষ তালেবান কর্মকর্তা আনাস হাক্কানীকে উদ্ধৃত করে এএফপি জানিয়েছে, তিনি এই 'ঐতিহাসিক মুহূর্তের' সাক্ষী হতে পেরে 'গর্বিত'।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার জেনারেল ম্যাকেঞ্জি বলেছেন, "আফগানিস্তান থেকে আমাদের প্রত্যাহারের সমাপ্তি এবং আমেরিকান নাগরিক, তৃতীয় দেশের নাগরিক এবং দুর্বল আফগানদের সরিয়ে নেওয়ার সামরিক মিশন শেষ করার ঘোষণা দিচ্ছি আমি।"
"সর্বশেষ সি -১৭ বিমানটি হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আজ (৩০ আগস্ট) বিকাল ৩টা বেজে ২৯ মিনিটের দিকে উড্ডয়ন করে"।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার বিবৃতিতে আফগানিস্তানে কর্মরত মার্কিন বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আর কোনো আমেরিকান নাগরিকের প্রাণহানি ছাড়াই আফগানিস্তান থেকে সময়মত এ 'বিপজ্জনক অপসারণ' কার্যকর করার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ দেন তিনি।
তিনি বলেন, "গত ১৭ দিন আমাদের সৈন্যরা মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এয়ারলিফটের মাধ্যমে মার্কিন নাগরিক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফগান মিত্রসহ মোট ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে। অতুলনীয় সাহস, পেশাদারিত্ব এবং সংকল্পের সাথে তারা এ কাজ সম্পন্ন করেছে।" মঙ্গলবার তিনি জাতির কাছে আফগানিস্তান সম্পর্কে একটি ভাষণ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
বাইডেন আরেকবার বলেন, "অবশেষে আফগানিস্তানে আমাদের ২০ বছরের সামরিক উপস্থিতির সমাপ্তি ঘটল।"
এদিকে পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি সোমবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, গত জুলাই মাস থেকে এ সপ্তাহের সোমবার পর্যন্ত ১ লাখ ২২ হাজারেরও বেশি মানুষকে এয়ারলিফট করা হয়েছে।
ম্যাকেনজি সিএনএনকে জানান, ১,০৬৪ জন মার্কিন নাগরিক এবং ২,০১৭ জন ঝুঁকিপূর্ণ আফগান বা বিশেষ অভিবাসী ভিসা আবেদনকারীদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য আগস্টের ১৪ তারিখ থেকে পেন্টাগন বিশেষ মার্কিন অপারেশন বাহিনী মোতায়েন করে। তার এ বাহিনী ৬ হাজারেরও বেশি মার্কিন নাগরিককে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ম্যাকেনজি বলেন, কাবুল থেকে শেষ পাঁচটি ফ্লাইটে কোনো মার্কিন নাগরিক ছিল না। যখন শেষ দুই মার্কিন কর্মকর্তা- জেনারেল ক্রিস্টোফার ডোনোহু এবং দূতাবাসের চার্জ ডি'অ্যাফেয়ার রস উইলসন সর্বশেষ মার্কিন বিমানে করে আফগানিস্তান ছেড়ে গেলেন তখন সেখানে দেশত্যাগ করার মত কোনো ব্যক্তি বাকি ছিল না বলেও জানান তিনি।
বর্তমানে আফগানিস্তানে কোনো মার্কিন কূটনীতিক অবশিষ্ট নেই। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে ব্লিংকেন জানান, "আফগানিস্তানে আমেরিকার কাজ অব্যাহত রয়েছে। আমাদের এখনো কিছু পরিকল্পনা রয়েছে, এবং তা বাস্তবায়ন করবো আমরা।" তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে তাদের কূটনৈতিক কার্যক্রম কাতারের দোহায় নিয়ে যাবে।
ব্লিংকেন আরও জানান, আমেরিকা সে সকল আফগানদেরও দেশত্যাগে সাহায্য করবে যারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কাজ করেছে।