বিজ্ঞানীকে কামড়ালো কোভিড আক্রান্ত ইঁদুর, সতর্কাবস্থা তাইওয়ানের ল্যাবে
তাইওয়ানের সর্বোচ্চ তদন্ত ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে একটি ইঁদুরের কামড়, যা থেকে নতুন করে কোভিড-১৯ সংক্রমণ হতে পারে বলে ধারণা করছে দেশটি। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ল্যাবরেটরির কর্মী কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর দ্বীপরাষ্ট্রটিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত এক মাসে তাইওয়ানে স্থানীয় পর্যায়ে তিনিই প্রথম কোভিড রোগী।
গতকাল বৃহস্পতিবার তাইওয়ানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী চেন শিহ-চুং এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, কোভিড আক্রান্ত ওই নারী তাইওয়ানের শীর্ষস্থানীয় ল্যাবরেটরি একাডেমিয়া সিনিকার একজন কর্মী এবং তার বয়স বিশের কোঠায়। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ল্যাবে কাজ করার সময় তিনি ভাইরাসে আক্রান্ত হন। চলতি সপ্তাহে তার কোভিড পরীক্ষা করা হলে তা পজিটিভ আসে। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ঐ নারী সম্প্রতি দেশের বাইরে ভ্রমণ করেননি এবং মডার্না ভ্যাকসিনের দুই ডোজ নেওয়া সম্পন্ন করেছেন।
একই সংবাদ সম্মেলনে কোভিড সংক্রান্ত দায়িত্বে থাকা অন্য এক কর্মকর্তা স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোকে জানান, ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় ওই নারীকে ল্যাবের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একটি ইঁদুর কা্মড়ে দেয়। তবে ওই ইঁদুরের কামড় থেকেই তার দেহে ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে কিনা তা জানতে হলে তদন্ত করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। তাইওয়ান কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস, ওই নারী কোভিডের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন।
করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই কোভিড সংক্রমণ রুখে দিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে তাইওয়ান। এমনকি ভাইরাস মোকাবিলায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা চীন ও হংকংকেও পেছনে ফেলেছে। কিন্তু ল্যাব-লিকেজের খবর ছড়িয়ে পড়ায় তাইওয়ানের সেই কষ্টার্জিত সাফল্য বর্তমানে হুমকির মুখে।
বৃহস্পতিবার ওই নারী কোভিড আক্রান্ত হওয়ার আগে স্থানীয় পর্যায়ে তাইওয়ানে সর্বশেষ কোভিড রোগীর দেখা পাওয়া গিয়েছিল গত ৫ নভেম্বর। সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ ও কঠোর কোয়ারেন্টাইন মানার পাশাপাশি, গত কয়েক মাসে তাইওয়ান সরকার ধীরে ধীরে দেশের অভ্যন্তরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করেছে। ফলে দেশের অভ্যন্তরে দৈনন্দিন কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলতে শুরু করেছে।
মহামারি শুরুর পর থেকে তাইওয়ানে এখন পর্যন্ত কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ১৪,৫০০ এবং মৃতের সংখ্যা ৮৪৮।
এরই মধ্যে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ৯৪ জন ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে যারা ওই ল্যাবকর্মীর সংস্পর্শে এসেছেন। এদের মধ্যে ওই নারীর সহকর্মী ও ঘনিষ্ঠজনদের সংখ্যাই বেশি এবং তাদেরকে আলাদাভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে আটজন কোভিড নেগেটিভ শনাক্ত হয়েছেন। জানা গেছে, চলতি মাসের শুরুতেই ওই নারী ল্যাবের চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন।
তাইওয়ানের মোট ১৮টি বায়োসেফটি লেভেল-৩ ল্যাবরেটরির একটি একাডেমিয়া জিনোমিক রিসার্চ সেন্টারে অবস্থিত, যেখানে কোভিড আক্রান্ত ওই নারী কাজ করতেন। নিরাপত্তা বিবেচনায় এটিকে তাইওয়ানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নিরাপদ ল্যাবরেটরি ধরা হয়। প্যাথোজেন সংগ্রহ ও এর সংখ্যাবৃদ্ধি করা, কোষভিত্তিক মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ও ইমিউনোলজিক্যাল পরীক্ষা করা এবং ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করার মতো কাজগুলো এই ল্যাবে করা হয় বলে ল্যাবের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে।
ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানিয়েছে, এযাবত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, প্রাণীদের থেকে মানুষের শরীরে কোভিড ছড়ানোর মাত্রা খুবই কম। তবে বিভিন্ন প্রাণীর উপর ভাইরাস প্রভাব ফেলে কিনা এবং কি ধরনের প্রভাব ফেলে তা বুঝতে হলে আরও গবেষণা করা দরকার।
সিডিসি আরও জানায়, এ ধরনের ঘটনা বিরল হলেও, কিছু করোনাভাইরাস যদি প্রাণীদের আক্রান্ত করে, তাহলে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর আগে প্রাণী থেকেই তা মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ তারা SARS-CoV-2 ভাইরাসের কথা জানায় যা বাদুর থেকে উৎপত্তি হয়েছিল।
সিডিসি বলে, মহামারি শুরুর পর থেকে এখনো পর্যন্ত প্রাণীরাই কোভিড ছড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গত বছর চ্যাপেল হিলের নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিজ্ঞানীকে ইঁদুরে কামড়ে দেয়। মিডিয়া আউটলেট প্রোপাবলিকার একটি প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ইঁদুরটির মধ্যে কোভিড-১৯ ভাইরাসের একটি স্ট্রেইন বা ভ্যারিয়েন্ট জন্মানো হয়েছিল। ফলে ওই বিজ্ঞানীও ভাইরাসের সেই স্ট্রেইনের সংস্পর্শে আসেন। ইঁদুরের কামড়ে বিজ্ঞানীর শরীরে কোনো ক্ষত সৃষ্টি না হলেও তাকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়। কিন্তু এরপরে ওই ইঁদুর বা বিজ্ঞানীর শারীরিক অবস্থা কি হয়েছি, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি।