ভাইরাসজনিত সাধারণ ঠান্ডা-কাশি কমাতে পারে কোভিডের ঝুঁকি: গবেষণা
ভাইরাসজনিত সাধারণ ঠান্ডা-কাশিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধী টি-সেল নামের শ্বেত রক্তকণিকা বেশি পরিমাণে থাকে, তাদের মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। সম্প্রতি ন্যাচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের প্রকাশিত একটি গবেষণার গবেষকরা বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে সুরক্ষা দিতে পারে এবং ওমিক্রন ও ডেল্টার মতো ভ্যারিয়েন্ট বা ভবিষ্যতে দেখা দিবে এমন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিবে এমন ভ্যাকসিন তৈরিতে সহায়ক হবে এ গবেষণার ফলাফল।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষকরা বলছেন, কোভিড প্রতিরোধে উচ্চ মাত্রার টি-সেলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। তবে শুধু এই বিষয়টির ওপর নির্ভর না করে কোভিডের বিরুদ্ধে সর্বোত্তম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
টি-সেল হলো এক ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা যা মানবদেহে বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
গবেষণাটির প্রধান গবেষক ও ইম্পেরিয়াল ন্যাশনাল হার্ট অ্যান্ড লাংস ইনস্টিটিউটের গবেষক রিয়া কুন্ডু বলেন, "সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংস্পর্শে আসলেও সবসময় সংক্রমণ ছড়ায় না। আমরা এই বিষয়টিই বোঝার চেষ্টা করেছি,"
"আমরা দেখতে পেয়েছি অন্যান্য করোনাভাইরাসজনিত অসুখ যেমন কমন কোল্ডে আক্রান্ত হওয়ার ফলে কারো দেহে আগে থেকেই উচ্চ মাত্রার টি-সেল থাকলে তা কোভিডের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে," বলেন তিনি।
কোভিড আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন এমন ৫২ জন মানুষের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করেন গবেষকরা। এরমধ্যে অর্ধেক মানুষই আক্রান্তর সংস্পর্শে আসলেও আক্রান্ত হননি। কোভিড প্রতিরোধে অন্যান্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেহে প্রতিরোধী টি-সেল উৎপন্ন হওয়ার ভূমিকা দেখা গেছে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হন গবেষকরা।
অ্যান্টিবডির তুলনায় টি-সেল মানবদেহে আরও বেশিদিন টিকে থাকে ও আক্রান্ত কোষ ধ্বংসে ভূমিকা রাখে, এর ফলে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কমে আসে। যুক্তরাজ্যের সায়েন্স মিডিয়া সেন্টারের প্রকাশিত গবেষণাটিতে ব্রিটিশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের পাবলিক হেলথ মেডিসিন কমিটির সাবেক চেয়ার পিটার ইংলিশ উল্লেখ করেন, অ্যান্টিবডির তুলনায় আরও বিভিন্ন প্রজাতির রোগ সংক্রামক জীবাণু ধ্বংস করে টি-সেল, এর ফলে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস বা একই ভাইরাসের বিভিন্ন স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে বাড়তি সুরক্ষা পাওয়া যায়।
শুধু এটিই যথেষ্ট নয়
ন্যাশনাল হার্ট অ্যান্ড লাংস ইনস্টিটিউটের ড. রিয়া কুন্ডু বলছেন, 'এটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হলেও এটি এক ধরনের সুরক্ষা মাত্র। কারো শুধু এর ওপর নির্ভর করে বসে থাকা উচিৎ নয়।
গবেষণাটির কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। গবেষণাটি ছোট পরিসরে করা হয়েছে, অংশগ্রহণকারীরা সবাই ছিলেন শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় জাতিসত্ত্বার। কোভিডের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর সুরক্ষা পাওয়ার উপায় ভ্যাকসিন নেওয়া, সম্ভব হলে বুস্টার ডোজও, বলেন ড. রিয়া।