ইউক্রেন: রাশিয়ার সামরিক শক্তি কত বড়?
ট্যাংক-কামান থেকে শুরু করে অস্ত্রশস্ত্র ও বিমানবাহিনী, সম্পূর্ণ যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হয়েই ইউক্রেন সীমান্তে অবস্থান নিয়েছে ১০০,০০০ রাশিয়ান সৈন্য। এই মুহূর্তে গোটা বিশ্ব রাশিয়া-ইউক্রেন সম্ভাব্য যুদ্ধ নিয়ে শঙ্কিত থাকলেও, ইউক্রেন দখলের পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে যাচ্ছে রাশিয়া।
কিন্তু কৌতূহলী জনসাধারণের মনে প্রশ্ন থেকেই যাবে, তাহলে এই বিপুল পরিমাণ সৈন্য সমাবেশ করার মানে কি? আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্র রাশিয়ার সামরিক শক্তি ঠিক কত বড়? এই মুহূর্তে ইউক্রেন সীমান্তে কোন কোন অবস্থানে কি পরিমাণ সৈন্য জড়ো করেছেন পুতিন?
এগিয়ে চলছে সেনাবহর
এই মুহূর্তে প্রায় ৩৫,০০০ রাশিয়ান সৈন্য স্থায়ীভাবে আস্তানা গেড়েছে ইউক্রেন সীমান্তে।
বুধবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায় ইউক্রেন সীমান্তের খুব কাছেই, রোস্তভের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রুশ মিলিটারি ইউনিট। রাশিয়ান ফারইস্ট অঞ্চল থেকে প্রায় ৪০০০ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে নতুন কিছু ইউনিটও এখানে এসে পৌঁছেছে বলে জানায় বিবিসি।
বিভিন্ন সূত্রের হিসাব অনুযায়ী, ইউক্রেনের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব সীমানা মিলিয়ে প্রায় ১০০,০০০ রাশিয়ান সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ইউক্রেনের এক হিসাব অনুযায়ী শুধু স্থলপথেই রাশিয়ান সৈন্যের সংখ্যা ১ লাখ ৬ হাজার; এবং নৌ ও বিমানবাহিনী মিলিয়ে আছে ২১,০০০।
গত মঙ্গলবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, "ইন্টেলিজেন্স সূত্রে স্পষ্টভাবেই জানা গেছে যে ইউক্রেন সীমান্তে এখন ৬০টি রাশিয়ান ব্যাটল গ্রুপ রয়েছে, যা মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ।"
নিয়মিত সেনাবাহিনী ছাড়াও আরও ১৫,০০০ বিচ্ছিন্নতাবাদী রাশিয়ান সৈন্য ইউক্রেনের লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কিছু পশ্চিমা বিশ্লেষকের মতে, স্থলপথে আক্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই রাশিয়া জড়ো করেছে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। কিছু এলাকায় মোবাইল ফিল্ড হাসপাতালের অনুপস্থিতির দিকে আঙুল তুলেছেন তারা।
স্যাটেলাইটের ছবি কি বলে?
রাশিয়ার সেনা মোতায়েন নিয়ে বাড়তি কিছু তথ্য দিয়েছে স্যাটেলাইটের ছবি।
সৈন্যদের তাঁবুর রঙ দেখে তাদের অবস্থান বোঝা গেছে ছবিতে। যেসব তাঁবুতে সৈন্য রয়েছে সেগুলো হিটারের মাধ্যমে গরম রাখা হয়েছে। ফলে তাঁবুর উপর থেকে বরফ সরে গিয়ে আসল রঙ বোঝা গেছে। কিন্তু বাকি তাঁবুগুলো বরফাবৃত অবস্থায় দেখা গেছে।
এছাড়াও, সাঁজোয়া যানগুলোকে এদের আকৃতি দেখে বোঝা গেছে। রাস্তায় কাদার উপর গাড়ির চাকার দাগ দেখে বোঝা যায় যে গাড়িগুলো কোন দিকে গেছে।
বেলারুশে সেনা সমাবেশ
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জয়েন্ট মিলিটারি এক্সারসাইজের (সম্মিলিত সামরিক মহড়া) উদ্দেশ্যে কয়েক হাজার সৈন্যসহ একটি রাশিয়ান ফোর্স রওনা হয়েছে বেলারুশের দিকে।
বেলারুশিয়ান নেতা আলেক্সান্ডার লুকাশেংকো ইতোমধ্যেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
উদ্বেগের বিষয় হলো, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে বেলারুশ সীমান্তের দূরত্ব ১০০ মাইলেরও কম।
পশ্চিমা পর্বেক্ষকদের মতে, Allied Resolve নামের এই মিলিটারি এক্সারসাইজ রাশিয়াকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আক্রমণের মহড়া দেওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে।
অনলাইনে প্রকাশিত কিছু ছবিতে সাঁজোয়া যান, ট্যাংক ও রকেট সিস্টেম এবং সামরিক সরঞ্জামের ছবি দেখিয়ে দাবি করা হয়েছে যে এগুলো বেলারুশের দিকেই যাত্রা করেছে।
এদিকে বেলারুশে এয়ার-ডিফেন্স সিস্টেম, অস্ত্র-গোলাবারুদ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর পাশাপাশি অত্যাধুনিক এসইউ-৩৫ ফাইটার প্লেন নিয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া।
সমুদ্রে সেনা সমাবেশ
চলতি মাস থেকেই আটলান্টিক থেকে প্যাসিফিক সাগর পর্যন্ত, বিশ্বব্যাপী নেভাল ড্রিলের আয়োজন করেছে রাশিয়া, যা চলবে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। রাশিয়ার এই আয়োজনের মধ্যে রয়েছে ১৪০টি জাহাজ ও সাপোর্ট ভেসেল, ৬০টি এয়ারক্রাফট ও ১০,০০০ নৌ-সদস্য।
যুদ্ধট্যাংক, নৌবাহিনীর সদস্য ও সাঁজোয়া যান বহনে সক্ষম ৬টি রাশিয়ান নৌ-তরী ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে ভূমধ্যসাগরে প্রশিক্ষণের জন্য যাচ্ছে। তবে কৃষ্ণ সাগর ও ইউক্রেন উপকূলই তাদের মূল গন্তব্য কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়।
কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, স্থল ও সমুদ্র, উভয় পথেই আক্রমণ করা রাশিয়ার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। তাই নৌবাহিনীর মাধ্যমে কৃত্রিম আক্রমণের ভান করে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করতে পারে রাশিয়া।
সূত্র: বিবিসি