শরণার্থী-আশ্রয়প্রার্থীদের গড়ে ৬৮৯ দিন আটকে রাখে অস্ট্রেলিয়া
দেশে আগত শরণার্থী-আশ্রয়প্রার্থীদের গড়ে দুই বছর ধরে আটকে রাখার রেকর্ড গড়েছে অস্ট্রেলিয়া। দেশটির এমন ইমিগ্রেশন ডিটেনশন (অভিবাসন হেফাজত) নীতির নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ায় বর্তমানে শরণার্থীদের গড়ে ৬৮৯ দিন আটকে রাখা হয়!
সার্বিয়ান টেনিস তারকা নোভাক জোকোভিচকে অস্ট্রেলিয়ান ডিটেনশন হোটেলে আটকে রাখার এক মাস পর এসব তথ্য প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
সংস্থাটির মতে, অভিবাসীদের আটকে রাখার এই নীতি অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও নিপীড়ণমূলক। জোকোভিচ যে হোটেলে ছিলেন, সেখানে এখনো ৩২ জন শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী আটক আছেন বলে জানিয়েছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
করোনাভাইরাসের টিকা না নেওয়ায় জোকোভিচের অস্ট্রেলিয়ার ভিসা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। পাঁচ দিন মেলবোর্নের ওই হোটেলে আটক ছিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জোকোভিচ জানিয়েছেন, আরও কয়েকটি গ্র্যান্ড স্লাম বাদ গেলেও জোর করে কোভিড ভ্যাকসিন নেবেন না তিনি।
জোকোভিচের সাথে একই ভবনে আটক ছিলেন ২৪ বছর বয়সী ইরানি শরণার্থী মেহদি আলি। দুই বছর ধরে হোটেলে আটক থাকার পরেও তার মুক্তির কোনো নির্দেশনা আসেনি।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে আসা মেহদি বলেন, "এই ভবনের বাসিন্দারা স্বাধীনতা চায়, মুক্তি চায়।"
কিন্তু মেহদি নিজেই নয় বছর যাবত কর্তৃপক্ষের নিয়মের বেড়াজালে বন্দি। হোটেলের ভেতরে থাকা তার জন্যে একটি দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের পর বছর আটক থাকতে থাকতে ভবনের বাসিন্দাদের মধ্যে আত্মঘাতী মনোভাব প্রবল হয়ে উঠেছে বলেও জানান তিনি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়া সরকারের গত সেপ্টেম্বর মাসের প্রতিবেদন থেকে শরণার্থীদের তথ্য নিয়েছে তারা। ৬৮৯ দিন আটকে রাখার বিষয়টি সেখান থেকেই পাওয়া গেছে যা পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।
অন্যান্য দেশগুলো যেখানে শরণার্থীদের সাধারণ মানুষের সাথেই চলাফেরা করার সুযোগ দেয়, অস্ট্রেলিয়া সেখানে সমুদ্রপথে আগত শরণার্থীদের বাধ্যতামূলক আটকে রাখে।
এই মুহূর্তে দেশটির ডিটেনশন প্রক্রিয়ায় আটক আছেন ১৪৫৯ জন, যাদের ভবিষ্যতের কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এ প্রসঙ্গে গবেষক সোফি ম্যাকনিল বিবিসিকে বলেন, "এসব পরিসংখ্যান দেখেই বোঝা যায় অভিবাসী ও শরণার্থীদের ক্ষেত্রে সমমনা দেশগুলোর চাইতে অস্ট্রেলিয়ার নীতি কতটা আলাদা। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, ইমিগ্রেশন ডিটেনশন কোনো শাস্তি হিসেবে নয়, বরং একটি বৈধ লক্ষ্য অর্জনের জন্য শেষ পন্থা হিসেবে দেখা উচিত।"
২০১৩ সাল থেকেই সমুদ্র উপকূল দিয়ে দেশে আগত সব শরণার্থীকে আটকে রাখার নিয়ম করেছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। বৈধ শরণার্থী হোক বা অবৈধ, কাউকেই তারা দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার দাবি, মানুষকে অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় খুঁজতে নিরুৎসাহিত করার জন্যই এমন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। উপকূলে অভিবাসী নৌকা আটক করায় সমুদ্রে ডুবে মারা যাওয়ার হারও কমেছে।
কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য শরণার্থীদের হোটেলে আটকে রাখার মাধ্যমে তাদের 'মানসিক নির্যাতন' করা হচ্ছে। গত এক দশকে ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে আধডজন ব্যক্তি আত্মহত্যা করার চেষ্টাও করেছেন। তবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন, তাদের অনেককে লাখ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণও দিয়েছে সরকার।
সূত্র: বিবিসি