শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার
মন্ত্রিপরিষদের কয়েক ডজন সদস্যের পদত্যাগের পর শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপাকসে। এর আগে, অর্থনৈতিক সংকটকে কেন্দ্র করে চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিল শ্রীলঙ্কা সরকার।
তবে চাপের মুখে মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) রাতে শেষ পর্যন্ত জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে নেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপাকসে। এদিকে, দেশের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামলে নিতে কারফিউ জারি করা হয়েছিল কলোম্বোতে। কিন্তু তা অমান্য করেই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে শ্রীলঙ্কাবাসী। এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার; তবে ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানেই তা আবার তুলে নেয়।
গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রেসিডেন্টের বাড়ির সামনে সামরিক বাহিনীর দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা; পাশাপাশি 'চলে যাও গোতা, চলে যাও' স্লোগানও দিতে থাকেন তারা। প্ল্যাকার্ড হাতে সাধারণ জনগণ সরকারের পদত্যাগের দাবি তোলেন। শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সেদেশের অধিকাংশ মানুষ প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবারকে দায়ী করছেন।
শ্রীলঙ্কার বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির পরিস্থিতি ১৮.৭ শতাংশ। দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে, দিনের বেশিরভাগ সময়ই থাকছে না বিদ্যুৎ, পাওয়া যাচ্ছে না জ্বালানি। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এমন সংকটের সম্মুখীন আগে কখনও হননি এই দেশের মানুষ।
পরিস্থিতির সামলে নিতে গত ১ এপ্রিল দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্র জুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপাকসে। কারণ ৩ এপ্রিল দেশজুড়ে আরও বড় আকারে আন্দোলনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তা ঠেকাতেই মূলত 'পাবলিক সিকিউরিটি অর্ডিন্যান্স' জারি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট। কারফিউ জারি ছিল সারা দেশে। তবে তা অমান্য করেই চলেছে প্রতিবাদ। বিক্ষুব্ধ জনতা শীর্ষ নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করে আর্থিক সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন। বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস এবং জলকামানের ব্যবহার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারও করা হয়েছে অনেক লোককে।
এরপরই শ্রীলঙ্কায় ২৬ জন মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) দেশটির ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা সব দলকে সঙ্গে নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ডাক দিয়েছে। বিরোধীদেরও সরকারে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। তবে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন বিরোধীরা। চলমান পরিস্থিতিতে সংসদে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। চরম সংকটের মুখে শাসকগোষ্ঠীর ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেছেন অনেক সদস্য। জোটের শরিক দল অনেক আগেই হাত ছেড়েছে সরকারের। সবকিছু মিলিয়ে ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি।
- সূত্র: আল জাজিরা, দ্য হিন্দু