যেসব ইউরোপীয় দেশ রাশিয়ান গ্যাসের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল
রাশিয়ার গ্যাসের ওপর সদস্য দেশগুলোর গভীর নির্ভরশীলতা থাকায় উৎসটি বর্জনের চেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের। অতিপ্রয়োজনীয় একটি জ্বালানির সবচেয়ে বড় সরবরাহক মস্কোর সাথে সম্পর্কের অবনতি করে, ইইউ সদস্য অনেক দেশই এখন তাদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
এরমধ্যেই ইউরোপের কিছু দেশ তাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনাগুলো এগিয়ে নিতে জোর দিচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরো জোটের পক্ষে সম্পূর্ণভাবে রাশিয়ার গ্যাস বর্জন সম্ভব নয়, এবং তা বাস্তবসম্মতও হবে না। হাঙ্গেরি তাই ইইউ সদস্য হয়েও মস্কোর সাথে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করছে।
ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশের মধ্যে অবশ্য রাশিয়ার গ্যাস আমদানির পরিমাণ ও নির্ভরশীলতায় ব্যাপক তারতম্য রয়েছে। মার্কিন সরকারের জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে দ্য হিল- এ প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে নির্ভরশীল দেশগুলির একটি তালিকা তুলে ধরা হলো:
(২০২১ সালের আমদানির তথ্যানুসারে)
জার্মানি বার্ষিক এক লাখ ৭০ হাজার কোটি ঘনমিটার রাশিয়ার গ্যাস আমদানি করে। ইতালি করে ৯২ হাজার কোটি ঘনফুট। ফ্রান্স ও পোলান্ডের ক্ষেত্রে তা যথাক্রমে ৬২ ও ৩৭ হাজার কোটি ঘনফুট।
২০২১ সালে জার্মানি রাশিয়ার মোট গ্যাস রপ্তানির ১৬ শতাংশ কেনে। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইতালি কেনে ১২ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে থাকা ফ্রান্স ৮ আর নেদারল্যান্ডস কিনেছে ৫ শতাংশ। অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি কিনেছে যথাক্রমে ৫, ৪ ও ৩ শতাংশ।
মহাদেশটির অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি হওয়ায়, রাশিয়ার গ্যাসের সবচেয়ে বড় ক্রেতা জার্মানি, ইতালি ও ফ্রান্স। এই জ্বালানি তারা কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শীতে ঘর উষ্ণ রাখতেই নয় বরং শিল্প-কারখানায় উৎপাদন সচল রাখতেও সরবরাহ করে।
একারণেই গত সোমবার জার্মানির অর্থমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডার মতপ্রকাশ করেন যে, পূর্ণমাত্রার জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা দিলে রাশিয়ার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে জার্মানি। তাই তেল বা গ্যাস আমদানিতে নয়, গত মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার কয়লা আমদানিতে নতুন এক দফা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে বেশি রাশিয়ার গ্যাস আমদানিকারক দেশের সাথে অধিক নির্ভরশীল দেশগুলোর সমীকরণ এক নয়। বিগত কয়েক বছরে ইউরোপের অন্যান্য বড় অর্থনীতির তুলনায় শতাংশ হিসাবে তাদের আমদানির পরিমাণ কম হলেও, নির্ভরশীলতা বেড়েছে।
ইউরোপীয় কমিশনের ইউরোস্ট্যাট সাইট অনুসারে অতি-নির্ভরশীল এমন ১০ দেশের তথ্যই বলে দেয় সে পার্থক্য। কারণ তাদের জাতীয় চাহিদা সূচক ১০০ ধরা হলেও, কিছুক্ষেত্রে শতভাগের বেশি হয়েছে পরিশোধিত জ্বালানি পণ্য বিদেশে রপ্তানির কারণে। অর্থাৎ, তাদের অর্থনীতির একটি বড় খাত এ ধরনের পুনঃরপ্তানি।
হাঙ্গেরি: ১১০.৪ শতাংশ
লাটভিয়া: ১০০.১ শতাংশ
ফিনল্যান্ড: ৯২.৪ শতাংশ
এস্তোনিয়া: ৮৬.৫ শতাংশ
চেক রিপাবলিক: ৮৬ শতাংশ
স্লোভেনিয়া: ৮১ শতাংশ
স্লোভাকিয়া: ৭৫.২ শতাংশ
বুলগেরিয়া: ৭২.৮ শতাংশ
জার্মানি: ৫৮.৯ শতাংশ
অস্ট্রিয়া: ৫৮.৬ শতাংশ
হাঙ্গেরিকেই রাশিয়ার গ্যাসের ওপর সবচেয়ে নির্ভরশীল দেশ বলা যায়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান তার ইইউ সহকর্মী অন্যান্য দেশের সরকার প্রধানের সাথে সম্পর্ক তিক্ত করে হলেও, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে নিজের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিন্ন করেননি।
হাঙ্গেরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইইউ আরোপিত নিষেধাজ্ঞায় সায় দিলেও, গত বুধবার জোটের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে ভিক্টর ওরবান জানান, রাশিয়া দাবি করলে দেশটি থেকে কেনা গ্যাস চালানের মূল্য রুবলে পরিশোধ করা হবে।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই ইউরোপিয় ইউনিয়নকে গ্যাস আমদানির মূল্য রুবলে পরিশোধের দাবি জানান ভ্লাদিমির পুতিন। তবে ইইউ তা মানতে অস্বীকার করেছে।
ইউরোপীয় কমিশনের একজন মুখপাত্র বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, "গ্যাসের মূল্য ডলার ও ইউরোতে পরিশোধের চুক্তি থাকায় ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো রাশিয়ার দাবি মানতে বাধ্য নয়।"
রাশিয়ার গ্যাসের ওপর আরেকটি অতি-নির্ভর দেশ স্লোভাকিয়া অবশ্য জানিয়েছে, তারা ইইউ- এর সাথে একযোগে সিদ্ধান্ত নেবে এবং গ্যাসের মূল্য ইউরোতে পরিশোধ অব্যাহত রাখবে।
স্লোভাকিয় প্রধানমন্ত্রী এডগার্ড হেজের এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, "এই সংকট কালে একতাই শক্তি। আমরা তাদেরকে (রাশিয়া) চুক্তিতে উল্লেখিত শর্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ইউরোতে মূল্য নেওয়ার তাগিদ দিচ্ছি।"
- সূত্র: দ্য হিল