মারিউপোল দখল, আজভ বাহিনীকে অস্ত্র সমর্পণের সময় বেঁধে দিয়েছে রাশিয়া
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোল সম্পূর্ণভাবে দখল করে নেওয়ার দাবি করেছে রাশিয়া। সেইসঙ্গে রুশ সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত ইউক্রেনীয় ও আজভ বাহিনীকে তাদের অস্ত্র সমার্পণের সময় বেঁধে দিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
রাশিয়ার দাবি, মারিউপোলের শহুরে এলাকা এখন রুশ সামরিক বাহিনীর দখলে। তবে, ইউক্রেনীয় বাহিনীর ছোট একটি দল অবরুদ্ধ শহরের স্থানীয় একটি ইস্পাত কারখানার ভিতরে অবস্থান করছে। শনিবার (১৬ এপ্রিল) আল জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের পর মারিউপোলই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বড় শহর, যা রাশিয়া দখল করে নেওয়ার দাবি করছে। তবে গণমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ বলেছেন, "মারিউপোলের পুরো শহুরে এলাকা দখলে নেওয়া হয়েছে ... ইউক্রেনীয় বাহিনীর অবশিষ্টাংশ বর্তমানে আজভস্টাল ইস্পাত কারখানায় সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।"
"তাদের জীবন বাঁচানোর একমাত্র উপায় হল, স্বেচ্ছায় অস্ত্র তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করা", যোগ করেন তিনি।
কোনাশেনকভ আরও জানিয়েছেন, মারিউপোল দখলের পথে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪৬৪ জন ইউক্রেনীয় সেনা আত্মসমর্পণ করেছে।
এদিকে, মারিউপোলে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে রাশিয়া। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, মস্কোর স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৬টা থেকে যেসব ইউক্রেনীয় যোদ্ধা তাদের অস্ত্র সমর্পণ করবে তাদের জীবন রক্ষা পাবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "আজোভস্টাল ইস্পাত কারখানায় যে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ মানবিক নীতির ওপর ভিত্তি করে রুশ সশস্ত্র বাহিনী ১৭ এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৬টা (মস্কোর সময়) থেকে ন্যাশনালিস্ট ব্যাটালিয়ন এবং বিদেশি ভাড়াটে জঙ্গিদের শত্রুতা বন্ধ করে অস্ত্র সমার্পণের প্রস্তাব দিচ্ছে।"
"যারা তাদের অস্ত্র জমা দেবে তাদের সকলের জীবন রক্ষা পাবে, এই নিশ্চিয়তা দেওয়া হচ্ছে", বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে।
স্থানীয় সময় শনিবার (১৬ এপ্রিল) রাশিয়ার প্রস্তাবিত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, আজভস্টাল ইস্পাত কারখানায় অবস্থারত অবশিষ্ট যোদ্ধাদের সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ১ টার মধ্যে (মস্কোর সময়) অস্ত্র এবং গোলাবারুদ ছাড়াই জায়গা ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ ওই বন্দরনগরীর ইস্পাত কারখানায় ইতোমধ্যেই সাংবাদিকরা পৌঁছেছেন। তারা জানিয়েছেন, সেখানকার দুটি ইস্পাত কারখানার মধ্যে একটির ভূগর্ভস্থ টানেল এবং বাঙ্কারে ইউক্রেনীয় যোদ্ধারা অবস্থায় করছে।
গেলো ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা করে সেখানে 'বিশেষ সামরিক অভিযান' চালানোর ঘোষণা দেয় রাশিয়া। পরবর্তীতে দ্রুতই এই অভিযান ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ ও বড় শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। সাত সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলতে থাকা এই সংঘাত থামার চেষ্টায় কয়েক দফা শান্তি আলোচনায় বসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন। তবে আলোচনায় কোনো সমাধান বের হয়নি চলমান সংকটের।
- সূত্র: আল জাজিরা