গ্যাসের মূল্য রুবলে পরিশোধে পুতিনের দাবি মেনে নিয়েছে ইউরোপ
ইউরোপের জ্বালানি কোম্পানিগুলো শেষপর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দাবি মেনে নতুন একটি ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য পরিশোধে রাজি হয়েছে। এর আগে রুবলে মূল্য না দেওয়ায় ইইউ সদস্য দুটি দেশে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে রাশিয়া।
এ ছাড়ের মাধ্যমে আরও সরবরাহ বন্ধের ঝুঁকি এড়াচ্ছে তারা। দিনশেষে তাতে পুতিন জয়ী হলেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো আর্থিক শক্তিও পেতে চলেছেন।
নতুন পেমেন্ট ব্যবস্থায় রাশিয়ার গ্যাজপ্রমব্যাংকে দুটি একাউন্ট খোলা হবে। সেখানে ইউরোপের কোম্পানিগুলো তাদের কেনা গ্যাসের মূল্য জমা দিবে। এভাবে তারা একদিকে ইউরোতেই মূল্য দিচ্ছে এমন দাবি করতে পারবে, অন্যদিকে রাশিয়াও বলতে পারবে মূল্য রুবলেই পাচ্ছে।
এর আগে পুতিন ইউরোপের 'অবন্ধুসুলভ' দেশগুলোর প্রতি রুবলে মূল্য পরিশোধের দাবি জানান। নাহলে তাদের সরবরাহ বন্ধের হুমকি দেন। ইইউ এসময় বলেছিল, তারা রাশিয়ার দাবির সামনে মাথানত করবে না এবং বিদ্যমান চুক্তির অধীনে তারা ডলার বা ইউরোতে মূল্য পরিশোধ করবে।
অর্থনীতিবিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নিজ দেশের মুদ্রা রুবলকে আরও শক্তিশালী করতেই পুতিন ইউরোপের অন্য দেশগুলোর প্রতি এ দাবি জানান। সহজ বিকল্প না থাকায় তারা রাশিয়ার গ্যাস কিনতে বাধ্য হচ্ছে। আর এখন রুবলে গ্যাসের দাম দিয়ে মুদ্রাটির মান বাড়াতে সাহায্যই করেবে। এভাবে নিজ উদ্দেশ্যে সফল হচ্ছেন পুতিন।
রুবলে গ্যাসের দাম দিলে রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিজস্ব নিষেধাজ্ঞাকেই ভঙ্গ করা হবে কিনা সে বিষয়ে আগে থেকেই রেখেঢেকে বক্তব্য দিয়েছেন ইইউ নেতৃবৃন্দ। কীভাবে বিকল্প উপায়ে দাম দেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা ইউরোপীয় জোটটির ঐক্যকেও পরীক্ষায় ফেলে। ফলে কয়েক সপ্তাহ ধরে মতবিরোধ চলেছে ইইউ সদর দপ্তর ব্রাসেলসে। তবে এই গোলযোগের সময় কোন দেশের কতটুকু রাশিয়ার গ্যাস আমদানি করা দরকার- গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়টি জানায় তারা।
কৌতুকের বিষয়- একইসাথে তারা রাশিয়ার তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া নিয়েও আলোচনা করেছে।
সহজ কথায়, জ্বালানি সংকট এড়ানোই ছিল সবার কাছে প্রধান গুরুত্বের। এজন্য তারা কিছু ছাড় দিতেও রাজি হয়েছে।
তাতে অবশ্য ক্রেমলিনের যুদ্ধে তারা একদিকে অর্থের যোগান দিবে- আরেকদিকে, ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়ার পাশাপাশি রাশিয়ার নিন্দাও করবে।
রুবলের মান বাড়াতে এর মধ্যেই দেশের বাইরে বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাওয়া বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে রাশিয়া। মৌল ভিত্তির সুদহারও বড় পরিসরে বাড়ানো হয়েছে। এখন ইউরোপও রুবলে মূল্য দিতে রাজি হলো, ফলে মুদ্রাটির মান আরও বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে।
- সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট