রাশিয়ার দখলে ডনবাস! জেলেনস্কি বললেন, ডনবাস আবারও তাদের হবে
ডনবাস অঞ্চলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে কয়েকদিন ধরেই ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে তুমুল লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা লুহানস্কের একমাত্র শহর সেভেরোদোনেৎস্ককে প্রায় ঘিরে ফেলেছে রাশিয়া। শহরের বেশ কয়েকটি গ্রাম দখলের খবর এসেছে গণমাধ্যমে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আজভস্তালের পর দ্বিতীয় মারিউপোল হতে চলেছে পূর্বাঞ্চলীয় এ শহর।
এদিকে, রুশ বাহিনীর দখলের মুখে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদোমোর জেলেনস্কি দেশের জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, 'ডনবাস আবারও ইউক্রেনীয়দের হবে'। শুক্রবার (২৭ মে) রাতে এক ভিডিও বার্তায় ডনবাসের বর্তমান পরিস্থিতিকে তিনি 'খুবই কঠিন' হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, রাশিয়া এ অঞ্চলে ক্রমাগত শক্তি প্রয়োগ করে চলেছে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারী অস্ত্র সরবরাহের অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্র এই অনুরোধ সময়মতো রাখবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।
পশ্চিমা গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত কয়েকদিন ধরেই সেভেরোদোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ নিতে শহরজুড়ে ভারী বোমা হামলা চালিয়ে আসছে রুশ বাহিনী। হামলায় ইতোমধ্যে শহরের প্রায় ৬০ শতাংশ আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শহরের প্রায় সমস্ত ভবনই।
সেভেরোদোনেৎস্ককের মেয়রের দাবি, অন্তত দেড় হাজার মানুষ মারা গেছে দুই বাহিনীর মধ্যকার হামলা-পাল্টা হামলায়। সাধারণ মানুষকে শহর থেকে সরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা উল্লেখযোগ্যভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা যায় মেয়র ওলেকসান্দ্র স্ত্রিউকের বক্তব্য থেকে। আল-জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, গেল বৃহস্পতিবার (২৬ মে) মাত্র ১২ জনকে ঝুঁকিপূর্ণ ওই অঞ্চল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনও ১০ হাজারের বেশি মানুষ সেখানে আটকা পড়ে রয়েছে বলে জানা যায়।
সেভেরোদোনেৎস্ক এবং লাইসিচানস্ক ডনবাসের লুহানস্ক অঞ্চলের একমাত্র অংশ, যা এখনও ইউক্রেন সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবার (২৭ মে) সেভেরোদোনেৎস্কের পশ্চিমে লাইমান শহরের দখল নিয়েছে মস্কোপন্থী বাহিনী। এরপর তাদেরকে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামতোর্স্ক শহর দখলের পথে অগ্রসর হতে দেখা গেছে।
এদিকে, পুরো সেভেরোদোনেৎস্ক রুশ বাহিনী ঘিরে ফেলেছে বলে দাবি করেছে রাশিয়া। কিন্তু রাশিয়ার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন লুহানস্ক অঞ্চলের গভর্নর।
শুক্রবার (২৭ মে) গভর্নর সেরহি হাইদাই বলেন, এ পর্যন্ত শহরের একটি হোটেল ও একটি বাস স্টেশন দখল করেছে রুশ বাহিনী। তবে রাশিয়ার আগ্রাসনের অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে শহর থেকে ইউক্রেনের সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, "হয়তো ঘেরাও করা হবে না, তবে আমাদের চলে যেতে হতে পারে।"
এছাড়া, সেভেরোদোনেৎস্ককের সঙ্গে ইউক্রেন সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের যোগাযোগের রাস্তা ধ্বংস করতেও হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। তবে সে রাস্তা এখনও ব্যবহার উপযোগী রয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে চলমান রয়েছে রুশ আগ্রাসন। এরমাঝে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা শান্তি আলোচনার পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। উপরন্তু, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের যোগ দেওয়ার ইস্যুতে নতুন দ্বন্দ্বের দিকে মোড় নিতে চলেছে ইউরোপের রাজনৈতিক পরিস্থিত।
ন্যাটোভুক্ত মুসলিম দেশ তুরস্ক চায়না পশ্চিমা সামরিক জোটের সদস্যপদ পাক এই দুই নর্ডিক দেশ। অন্যদিকে, এ ব্যাপারে রাশিয়ারও দেশ দুটির প্রতি হুঁশিয়ারি জানিয়েছে। এরপরেও সপ্তাহখানেক আগে ন্যাটোর সদস্যপদ পেতে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। সব মিলিয়ে ইউরোপের রাজনীতিতে নতুন এক স্নায়ুদ্বন্দ্বের উপস্থিতি লক্ষ্য করছেন বিশেষজ্ঞরা।