ফেস মাস্কে শিল্পী ও শিল্পকর্ম
সঙ্কট, দুর্যোগ ও বিপন্নদশায় কোনো না কোনাভাবে শিল্পী ও তাদের শিল্পকর্ম মানুষের পাশে দাঁড়ায়। এ সময় ফ্লোরেন্সের তুসকান শহরের রাস্তায় দেখা হয়ে যেতে পারে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির সাথে, প্যারিসের মপারনাসের রাস্তা পার হচ্ছেন মোনালিসা, ভেনাসের দেখা পেতে পারেন ইনানি সমুদ্র সৈকতে। বিশ্বব্যাধি করোনাভাইরাসের কারণে ফেস মাস্কে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বসেরা শিল্পী ও তাদের শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম।
পেইন্টিং হচ্ছে কবিতা যা যতোটা না অনুভব করা যায় তার চেয়ে বেশি দেখা যায় আর কবিতা হচ্ছে পেইন্টিং যা দেখার বদলে অনুভব করা যায়।' কথাটি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির। দ্য ভিঞ্চি কবিতাও লিখতেন, তার পক্ষে এই অনুধাবন যথার্থ। তিনি তিন ধরনের মানুষ আবিষ্কার করেছেন: যারা দেখেন, দেখানো হলে যারা দেখেন এবং যারা দেখেন না। দ্য ভিঞ্চির একটি দার্শনিকী উপলব্ধি: আমি ভেবেছিলাম আমি বাঁচতে শিখেছি, আসলে আমি মরার শিক্ষা নিচ্ছিলাম। দ্য ভিঞ্চি লিখেছেন, মুখোশ সত্যকে লুকায়।
লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ দেখেছেন; এই ছবি নিয়ে সবচেয়ে বেশি লেখালেখি হয়েছে; ছবিটি চুরি হয়েছে, উদ্ধার হয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো দেশে যেকোনো মানুষকে একটি পেইন্টিং-এর উল্লেখ করতে বলা হলে মোনালিসাই হয়ে উঠবে অপ্রতিদ্ব›দ্বী প্রথম। ১৫০৩ থেকে ১৫০৬ সময়কালে ছবিটি আঁকা, শিল্পী কালো থেকে শুরু সবুজ কয়েকটি রঙ ব্যবহার করেছেন। এ কথা মানতেই হবে মোনালিসাতে রঙের আতিশয্য নেই। কিন্তু দুর্ভেদ্য একটি রহস্যময়তা এই নারীকে ঘিরে আছে।
সান্দ্রো বতিচেল্লি: ১৪৪৫-১৫১০
ইতালির রেনেসা শুরু হবার আগের যে অবস্থা 'আর্লি রেনেসাঁ' তারই প্রধান প্রাণপুরুষ সান্দ্রো বতিচেল্লি ফ্লোরেন্সের স্বর্ণযুগের সন্তান। ক্যানভাসে টেম্পেরা ১৪৮৫-র বার্থ অব ভেনাস, কাঠের উপর টেম্পেরা ১৪৭৮-এর প্রাইমাভেরা ১৮৭৬-৭৭-এর ফ্রেসকো বার্থ অব ক্রাইস্ট-এমন প্রাণবন্ত ছবি পৃথিবী আগে দেখিনি। তাঁর ছবির সুনাম এতোটাই ছড়িয়ে পড়েছিল যে পোপ তাঁকে ভ্যাটিকানে আমন্ত্রণ জানিয়ে সিস্টিন চ্যাপেলের অলঙ্করণের কাজ হাতে নিতে অনুরোধ করেন। যে ক'মাস তিনি এই চ্যাপেলে কাজ করেছেন, এ সময়টুকু ছাড়া কখনো ফ্লোরেন্সের বাইরে তিনি যাননি। তাঁকে চিহ্নিত করা হযেছে ইতালির চিত্রকলার মূলধারায় মিশে যাওয়া এক বহিরাগত শিল্পী হিসেবে।
ভালোবাসার দেবী ভেনাস সমুদ্র সৈকতে পৌঁছেছেন। ঝিনুকের উপর দাঁড়িয়ে, ডান হাতে স্তন বা হাতে দীর্ঘ চুল টেনে লজ্জাস্থানে ফেলেছেন, জলদেবী এগিয়ে আসছেন তার নগ্নতা ঢোকে দেবার পোষাক হাতে। ১৮৮২ থেকে ১৮০৫-র মধ্যে আঁকা এই ভেনাস ইতালির রেনেসাঁর প্রধান একটি আইকন হয়ে আছে। মেডিসি পরিবারের লরেঞ্জোর প্রাসাদে টাঙ্গানো ভেনাসের জন্ম ও প্রাইমাভেরা। ছবি দুটো সেখানেই দেখেছেন প্রথম শিল্প-ইতিহাস রচয়িতা ভাসারি।
মাইকেলেঞ্জেলো: ১৪৭৫-১৫৬৪
সারাদিন ছবি এঁকে সময় নষ্ট করা এবং নিজের পড়া না শেখার নিত্যদিনের অপরাধে মাইকেলেঞ্জেলোকে তার বাবা নিয়মিতই পেটাতেন। কোনো ভদ্র পরিবার তাদের সন্তানকে শিল্পী হবার অনিশ্চিত পথে ছেড়ে দিতে পারে না। ভদ্র পরিবারের মেয়ের বাইজি কিংবা বারবণিতা হবার মতো পুত্র সন্তানের শিল্পী হওয়াও ছিল পরিবারের জন্য অত্যন্ত সম্মানহানিকর বিষয়। সেই পুত্র মাইকেলেঞ্জেলো সব প্রতিকুলকা ডিঙ্গিয়ে হয়ে উঠলেন পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দু'জন শিল্পীর একজন, অন্যজন তাঁর চেয়ে তেইশ বছর আগে জন্ম নেওয়া লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। মাইকেলেঞ্জেলো অবশ্য ভিঞ্চির ব্যাপারে নেতিবাচক ছিলেন। সত্তর বছরের বেশি দীর্ঘ শিল্পী জীবনে তিনি হয়ে উঠেছিলেন কিংবদন্তী; রেনেসাঁ-মানবের যে বহুমুখী প্রতিভা ও অবদান, মধ্যযুগ থেকে পৃথিবীকে টেনে এনে আগামীর সড়কে তুলে দেবার যে প্রয়াস প্রয়োজন সবই তাঁর ছিল। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মতো তিনিও ছিলেন সম্পূর্ণ রেনেসাঁ-মানব।
রাফায়েল: ১৪৮৩-১৫২০
রেনেসাঁর ট্রিনিটি- তিন স্তম্ভের একটি রাফায়েল নিজে আর দুটি স্তম্ভ লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি এবং মাইকেলেঞ্জেলো। পেইন্টিং এর ইতিহাসে সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় রেনেসাঁ শিল্পীর নাম রাফায়েল, তিনি পোর্ট্রেট আঁকিয়ে এবং ড্র্রাফটসম্যান হিসেবে সকলকে ছাড়িয়ে গেছেন। ইতালির ভরা রেনেসাঁর অন্যতম প্রধান চিত্রশিল্পী রাফায়েল, পৃথিবীরও অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী তিনি। একবার ভাবুন তো ইতালির ভরা রেনেসাঁয় একই সাথে চারজন শিল্পী কাজ করে যাচ্ছেন: মাইকেলেঞ্জেলো, রাফায়েল, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি এবং তিশ্যান। রাফায়েল সেকালের একজন দক্ষ স্থপতিও। তাঁর শিল্পকর্ম নিজেরাই কথা বলে। সহজ ও স্পষ্ট তাঁর প্রতিটি কাজ। মানুষের জাঁকালো মাহত্ম্য তাঁর আঁকা ছবিকে আরো প্রাণবন্ত করে তোলে। অবশ্য মাইকেলেঞ্জেলো রাফায়েলের বিরুদ্ধে নকল করার অভিযোগ এনেছেন, শিল্পের যা কিছু তিনি জানেন সবই আমার কাজ থেকে নেওয়া।' তিনি মাইকেলেঞ্জেলো প্রভাবিত এটা যেমন সত্য মৌলিকত্বেও যে তিনি হাতে গুণা প্রায় দু'চারজনের একজন তাতেও সন্দেহ নেই।
টিশ্যান: ১৪৯০-১৫৭৬
রঙের জাদুকর টিশ্যানের হাতে স্লিপিং ভেনাস কিংবা ভেনাস অব উরবিনোসহ অনিন্দসুন্দর নারী আঁকা হয়েছে। তাঁর রঙের জাদু নিয়ে চিত্রসমঝদারগণ অনেক প্রশংসা করলেও তিনি বলছেন: 'উজ্জ্বল রঙ নয় ভালো ড্রইং-ই সুন্দর ফিগার তৈরি করে। রঙ নিয়ে তাঁর অনেক কথা: (ক) ভালো পেইন্টারের মাত্র তিনটি রঙ প্রয়োজন-কালো সাদা এবং লাল। (খ) সব পেইন্টারেরই রঙ লাগাবার মেধা থাকে না, আসলে সমস্যার মুখোমুখি হলে অনেক পেইন্টার হতাশ হয়ে পড়েন, তিনি চাপ সহ্য করতে পারেন না, প্রয়োজনীয় মেধার ঘাটতি থাকা শিল্পী কেবল ছবির ফর্ম নষ্ট করতে পারেন।
ষোড়শ শতকের ভেনেশিয়ান স্কুলের প্রধান শিল্পী ইতালিয় রেনেসাঁর অন্যতম অবদানকারী তিজিয়ানো ভেসেল্লি (কিংবা ভেসেল্লিও) ইউরোপে যার পরিচিতি টিশ্যান, তাঁর পেইন্টব্রাশ সম্পর্কে বলা হয় টিশ্যানের হাতে যখন ব্রাশ তা আপনাতেই অনুভূতিপ্রবণ হয়ে উঠে। তিনি মনে করেন শিল্পীকে তার অবজেষ্ট-এর নির্যাস অবশ্যই পেতে হবে। শিল্পী যা আঁকছেন তাতে বস্তুর চরিত্র ও আবেগের প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে।
পিটার পল রুবেন্স: ১৫৭৭-১৬৪০
পিটার পল রুবেন্স ব্যারোক ঐতিহ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী ফ্লেমিশ চিত্রকর। নিজের কল্পনাশক্তি ও দক্ষতার উপর তিনি আস্থাশীল ছিলেন বলেই বলতে পেরেছেন: যত বড় কাজই হোক না কখনো আমার সাহসকে অতিক্রম করে যেতে পারেনি। তিনি মনে করতেন তাঁর প্রেরণা পার্থিব নয়, ঐশ্বরিক-'আমি একজন সাধারণ মানুষ আমার পুরোনো তুলি নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ঈশ্বরকে বলি প্রেরণা দাও', রুবেন্সকে মনে করা হয় রেনেসাঁ মানব।
আপাদমস্তক ক্যাথলিক রুবেন্সের বিশ্বাসবোধ প্রবল। বাইবেল নির্দেশিত পথে জীবন ও প্রকৃতি, মৃত্যু ও পুনরুত্থান এবং শিল্প ও মৃত্যুকে প্রকাশ করেছেন, রুবেন্স অষ্ট্রিয়ার আর্চডাসেস ইসাবেলা, ফ্রান্সের রাণী মেরি, ইংল্যান্ডের প্রথম চার্লস এবং স্পেনের রাজার জন্য এঁকেছেন, আবার তাঁর কালের বিভিষীকাকেও ক্যানভাসে নিয়ে এসেছেন।
রেমব্রাঁ: ১৬০৬-১৬৬৯
ছবি আঁকা শিখতে হলে কাকে গুরু মানবেন? রেমব্রাঁ বলেছেন, কেবল একমাত্র গুরু-প্রকৃতি। তিনি আরো বলেছেন পেইন্টিং হচ্ছে প্রকৃতির দৌহিত্র, এর সাথে ঈশ্বরের সম্পর্ক। কিংবা একটি পেইন্টিংকে তখনই সমাপ্ত বলা হয়েছে যখন এর উপর ঈশ্বরের ছায়া পড়ে।
চিত্র-সমালোচকদের জন্য রেমব্রাঁ: পেইন্টিং নাকে শুকাবার জন্য নয়। নতুন শিল্পীদের জন্য তাঁর কথা: যা জানো তার চর্চা করতে থাকো, এটাই তোমার কাছে স্পষ্ট করে দেবে তুমি কি জানো না।
যে সব বড় শিল্পীর সাথে এক নিঃশ্বাসে রেমব্রাঁর নাম উচ্চারিত হয় তারা ইতালির। রেমব্রাঁ ডাচ; হল্যান্ডের মানুষ। চিত্র শিল্পের ইতিহাসের দিকে যাদের নজর তারা খুব ভালোভাবেই জানেন সপ্তদশ শতকের 'ডাচ গোল্ডেন এজ'-এর স্রষ্টাদের নাম বলতে শুরু করলেই রেমব্রাঁর নাম এসে যায় এবং প্রায় সকলে সেই সোনালি যুগে আঁকা নাইট ওয়াচ চিত্রটির উদাহরণ দেন। অথচ এ ছবিটির জন্য তিনি লাঞ্ছিত হয়েছেন। ছবির বিষয় রাতের প্রহরা, অর্থের বিনিময়ে যাদের জন্য এটি আঁকতে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন তারা কেউই রেমব্রাঁর কাজটি পছন্দ করেননি।
এই ছবিতে আলো পড়েছে ঠিক মাঝখানে, দু'জন অফিসারের উপর আর বর্ষাধারী রক্ষীরা সব আঁধারে অস্পষ্ট। ফরমায়েশটা তাদেরই, অথচ তাদের ভালো করে দেখা যাবে না আর তারা চাঁদা তুলে শিল্পীর টাকা দেবে এটা তো হতে পারে না। খুব বদনাম হলো শিল্পীর। ছবি আঁকার ফরমায়েশ পাওয়া মারাত্মক হ্রাস পেল। স্বচ্ছল পরিবার থেকে আসা একটু বেহিসেবে গোছের এই শিল্পী দেওলিয়া হয়ে গেলেন, বাড়ি বিক্রি করলেন, পারিবারিক অশান্তিও তাঁকে ছাড়ল না। সেই নাইট ওয়াচ-এর দাম এখন কত মিলিয়ন ডলার হতে তা গবেষণার বিষয়।
পিয়েরে অগাস্ত রেনোয়া: ১৮৪১-১৯১৯
শিল্পের কারবার আবেগ নিযে, শিল্পকে যদি ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন হয় তা হলে একে আর শিল্প বলা যায় না।' চিত্রশিল্পের তত্ত্বকে তুচ্ছ করে রেনোয়া বললেন, 'তুমি তোমার সকল তত্ত্ব নিয়ে প্রকৃতির কাছে এসো, প্রকৃতি সবগুলোকে কুপোকাৎ করে দেবে'। তিনি আরো বললেন, ছবির যা ব্যাখ্যাতীত তাই ছবির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কালো রঙ নিয়ে রেনোয়া বলেন, 'আমি চল্লিশ বছর ধরে আবিষ্কার করেছি সব রঙের জননী হচ্ছে কালো।'
ইপ্রেশনিস্টদের অন্যতম প্রধান শিল্পী পিয়েরে-অগাস্ত রেনোয়ার এক সময় রঙ কেনার অর্থ ছিল না। এমনিতেই দরিদ্র পরিবারের সন্তান, যে পোর্সেলিন ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন, তাও এক সময় বন্ধ হয়ে যায়। রোনোয়া থেমে থাকেন নি। এক সময় তিনিই হয়ে উঠেন তাঁর সময়ের সবচেয়ে বাণিজ্য-সফল পেইন্টার। তিনি নিজেকে আর্টিস্ট বলতেন না, বিনা ভনিতায় বলতেন, আমি রঙ করি। তাঁর সঙ্গীরা যখন ইপ্রেশনিজম নিয়ে ব্যস্ত, তিনি সময়ের চেয়ে এগিয়ে গেলেন, বললেন, তুমি যদি সময়ের সম্মুখ যাত্রা থামাতে চাও তাহলে তোমাকে যথেষ্ট বোকা হতে হবে।
মেধাবী শিল্পীকে তিনি সীমা লঙ্ঘনের পরামর্শ দিয়েছেন: সময় সময় কাউকে তার ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে যাবার উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
পাবলো পিকাসো: ১৮৬১-১৯৬৩
কিউবিস্ট, সুররিয়েলিস্ট- বিংশ শতকের অবিসংবাদিত প্রধান শিল্পী স্পেনের পাবলো পিকাসো জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কেন এমনভাবে ছবি আঁকেন যা জনগণের পক্ষে বোঝা এতো কঠিন? পিকাসোর জবাব; সবাই পেইন্টিং বুঝতে চান, তারা পাখির গান কেন বুঝতে চান না? না বুঝেই তারা কেন রাত, ফুল, চারপাশের সবকিছু ভালোবাসেন? পেইন্টিং এর বেলায় মানুষ কেনো সব বুঝতে হবে?-আমি এভাবে ছবি আঁকি কারণ এগুলো আমার চিন্তার ফলাফল। এখানে পৌঁছতে আমি বছরের পর বছর ধরে কাজ করেছি। আমি যদি এখান থেকে এক পা পিছিয়ে যাই তা হবে অপমানজনক। বিমূর্ত শিল্প বলে কিছু নেই। আপনাকে অবশ্যই একটা কিছু নিয়ে শুরু করতে হবে, তারপর বাস্তবতায় চিহ্নগুলো তুলে দেবেন।
শিল্পীকে কি মনে করেন? পিকাসোর প্রশ্ন; উত্তরও তিনি দিয়েছেন। শিল্পী একটি রাজনৈতিক সত্তা, যে সব ঘটনা হৃদয় ভেঙ্গে দেয়, যে সব ঘটনা আবেগময় এবং আনন্দের যে সব ঘটনা পৃথিবীতে ঘটে শিল্পী সার্বক্ষণিক সে সম্পর্কে সচেতন, সেসব ঘটনার ইমেজে নিজেকে প্রস্তুত করে নেন। অ্যাপার্টমেন্ট সাজাবার জন্য পেইন্টিং করা হয় না; পেইন্টিং হচ্ছে যুদ্ধের অস্ত্র।
পিকাসোর শুরুটা যখন সেই শৈশবের দিনগুলোতেও তাঁর তুলির আঁচড় এবং রঙের ব্যবহার ওল্ড মাস্টারদের মাস্টারপিস পেইন্টিং এর কথাই মনে করিয়ে দিত।
সালভাদর দালি: ১৯০৪-১৯৮৯
প্রতিদিন সকালে আমি যখন জেগে উঠি আমি আমার সেই সর্বোচ্চ আনন্দ লাভ করি-সালভাদর দালি হওয়ার আনন্দ।
কতোটা দূর প্রত্যয়ী হলে একজন শিল্পী এমন কথা বলতে পারেন! সালভাদর দালি বলেছেন, সাফল্য মাপার থার্মোমিটার হচ্ছে চারদিকের অতৃপ্ত মানুষের ঈর্ষা। তাঁর সমালোচনার ঘাটতি কখনো পড়েনি। তিনিও বলেছেন আমার শত্রুরা একে অন্যকে খেয়ে ফেলুক।
আত্মম্ভরিতা মনে হলেও এ কথা তাকেই মানায়: আমার কখনো এমন দিনও আসে যখন মনে হয় তৃপ্তির ওভারডোজের কারণে আমার মৃত্যু হবে।
দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে- এই ছিল তাঁর লক্ষ, তাই হরেক রকম পোষাক পরতেন, মেয়েদের মতো মাঝখানে সিঁথি, ভেলভেটের জামা কখনো পা ঢাকা রেইনকোট; যৌবনে চলাফেরার সময় হাতে ঘণ্টা রাখতেন। যখনই মনে হতো তার দিকে পথচারীদের নজর কম তখনই ঘণ্টা বাজাতে শুরু করতেন।