দেশের উন্নয়ন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে কাজে লাগাতে হবে: শুভ জন্মাষ্টমীতে রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জনে দেশের বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কাজে লাগানোর জন্য সব ধর্মের অনুসারীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
শুক্রবার জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বঙ্গভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এ আহবান জানান।
বিষ্ণুর অষ্টম অবতার কৃষ্ণের জন্মদিন জন্মাষ্টমী উৎসব উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, “বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল থেকে এ দেশে সকল ধর্মের অনুসারীরা পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করে আসছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তাই আমাদের সুমহান ঐতিহ্য। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই ঐতিহ্য অব্যাহত রেখে জাতীয় অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনে তা কাজে লাগানোর জন্য আমি দেশের সকল ধর্মাবলম্বীদের প্রতি আহবান জানাই।”
জন্মাষ্টমী উৎসবকে শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা ও আনন্দোৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এর আবেদনকে একটি কল্যাণকামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজে লাগানোর আহবান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, তা হলেই একটি সুখি-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, সমাজ থেকে অন্যায়-অত্যাচার, নিপীড়ন ও হানাহানি দূর করে মানুষে মানুষে অকৃত্রিম ভালবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলাই ছিল শ্রীকৃষ্ণের মূল ভাবনা।
তিনি বলেন, হিন্দুধর্ম মতে অধর্ম ও দুর্জনের বিনাশ এবং ধর্ম ও সুজনের রক্ষায় সমাজ সংস্কারে শ্রীকৃষ্ণ যুগে যুগে আবির্ভূত হয়েছেন।
সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই ঐতিহ্য অব্যাহত রেখে জাতীয় অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনে তা কাজে লাগানোর জন্য রাষ্ট্রপতি দেশের সকল ধর্মাবলম্বীদের প্রতি আহবান জানান।
অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতি দরবার হলে ঘুরে ঘুরে অভ্যর্থনায় উপস্থিত অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
হিন্দু ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন পেশার লোকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা জন্মাষ্টমী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতিকে ফুলের তোড়া উপহার দেন।
সংসদ সদস্যবৃন্দ, রাষ্ট্রদূতগণ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার, হিন্দু সম্প্রদায়ের সিনিয়র সাংবাদিক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ওদিকে, যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উৎসবের মধ্যদিয়ে শুক্রবার রাজধানীসহ সারাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্মাষ্টমী উদযাপিত হয়েছে।
হিন্দু পুরান মতে, ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টম তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। সনাতন ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস, পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সে-শক্তিকে দমন করে মানবজাতির কল্যাণ এবং ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করে।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শুক্রবার ছিল সরকারি ছুটি। সাপ্তাহিক ছুটি থাকা সত্ত্বেও সরকার এদিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার এবং বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে সম্প্রচারিত হয় জন্মাষ্টমীর বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
এছাড়াও রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি দেশবাসীকেও জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানান।
এদিকে শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দু’দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুত্রবার সকাল ৮ টায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে গীতাযজ্ঞ এবং বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে জন্মাষ্টমীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। এছাড়া শুক্রবার রাতে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয় কৃষ্ণপূজা।
এবার জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এ শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আগামী ১ সেপ্টেম্বর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। ওইদিন বিকেল ৩টায় এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
এদিকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটারর্জী এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট কিশোর রঞ্জন মন্ডল বৃহস্পতিবার এক যুক্ত বিবৃতিতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশবাসীকে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানান।