অনিশ্চিত বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফর
বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফর চূড়ান্ত হয়েছে গত মাসে। দুই দফায় করোনা পরীক্ষার পর আগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ক্রিকেটারদের হোটেলে ওঠার কথা। ২১ সেপ্টেম্বর দলীয় অনুশীলন শুরু। কয়েকদিন অনুশীলনের পর ২৭ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার বিমান ধরার কথা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল ও হাই পারফরম্যান্স দলের (এইচপি)।
চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রাথমিক দলটি ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত করা হয়েছে, বাকি কেবল আনুষ্ঠানিক ঘোষণার। কিন্তু সফরের সময় যতোই ঘনিয়ে আসছে, বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফর নিয়ে ততোই অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এ পথে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা। যা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আর এতেই তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
এরআগে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন করার কথা জানিয়েছিল শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জানায় ৭ দিনের কোয়ারেন্টিনের কথা। বিসিবি এই ব্যাপারে এতটাই অনড় যে, কোনোভাবেই ৭ দিনের বেশি কোয়ারেন্টিনের পক্ষে নয় দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
এ বিষয়টি চূড়ান্ত করার এখতিয়ার নেই শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের। বিসিবির দাবির পর তারা জানায়, সাতদিন হলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে তাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুমতি দিলেই কেবল এটা সম্ভব হবে। এর এখানেই বেধেছে জটিলতা। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনের কথা জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট। পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আরও কিছু পর্যবেক্ষণের কথা বিসিবিকে জানিয়েছে তারা।
রোববার এক বৈঠকের পর বিষয়টি জানিয়েছেন বিসিবি পরিচালক নাঈমুর রহমান দুর্জয়। তিনি বলেন, 'জাতীয় দল এবং এইচপির একসাথে শ্রীলঙ্কায় খেলার আমাদের যে পরিকল্পনা, সেটাতেই আমরা আছি। শ্রীলঙ্কা বোর্ড ও আমাদের বোর্ড অনেক ক্ষেত্রে একমত ছিল। সেখানে শ্রীলঙ্কান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। যে কারণে আমাদের একটু ধীরে এগোতে হচ্ছে।'
বিসিবিরও পর্যবেক্ষণ রয়েছে, যা শ্রীলঙ্কাকে জানানো হবে। দুর্জয় বলেন, 'পর্যবেক্ষণগুলো পাওয়ার পর আজ আমরা বসেছি, আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণগুলো তাদেরকে দিব। শ্রীলঙ্কান বোর্ড তাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে জানালে বোঝা যাবে। আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমরা দুই বোর্ডই পর্যবেক্ষণ দিচ্ছি। যেহেতু এখানে শ্রীলঙ্কান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সুতরাং তাদের আদেশের বাইরে তো যাওয়া যাবে না। সেই আলাপ আলোচনাই চলছে।'
দুই বোর্ড ৭ দিনের কোয়ারেন্টিনে একমত হলেও শ্রীলঙ্কান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কারণে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দুর্জয় আরও বলেন, 'সবকিছু শ্রীলঙ্কান বোর্ড করতে পারছে না। দুই বোর্ড এখন পর্যন্ত একমত হয়েছে ৭ দিনের কোয়ারেন্টিনে। শ্রীলঙ্কান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বলছে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন।'
পরিবর্তন এসেছে আরও। আগে জানানো হয়েছিল কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থাতেই অনুশীলন করা যাবে। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে কোয়ারেন্টিন চলাকালীন হোটেলবন্দি থাকতে হবে। এমনকি বাংলাদেশ দলের সদস্য সংখ্যা কমানোর কথাও জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট।
দুর্জয় বলেন, 'বলা হয়েছিল কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় অনুশীলন করতে পারব। কিন্তু এখন এটাতেও নিষেধাজ্ঞা এসেছে। কাজেই আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণগুলো তাদের জানাচ্ছি। এটা শ্রীলঙ্কা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, আর্মি, অনেক ব্যাপার আছে। সফরে সদস্য সংখ্যাও কমানোর চিন্তা ভাবনা করছে তারা। সেটাও একটা ইস্যু। সেখানে আমরা আরও বাড়ানোর পর্যবেক্ষণ দিচ্ছি।'
পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলে সিরিজটি খেলার ব্যাপারে নতুন করে ভাববে বিসিবি। দুর্জয়ের কথায় তেমনই আভাশ, 'শঙ্কা নয়, আসলে আপনি খেলতে চাচ্ছেন কিন্তু খেলার পরিবেশটা তো থাকতে হবে। সেই পরিবেশ তৈরি এবং সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে যেন আমরা খেলতে পারি। ৬-৭ মাস খেলার বাইরে, এটা আবার টেস্ট ম্যাচ। টেস্টের প্রস্তুতি ঠিকভাবে নিতে না পারলে কঠিন হবে। আমরা দুই বোর্ডই আন্তরিক আছি, সবকিছু ঠিকঠাক করে যেন মাঠে নামতে পারি।'