অভিনয়টা শিখলে অধিনায়কত্ব লম্বা হতে পারতো: মুশফিক
১৭ বছরের এক কিশোর। ব্যাট হাতে নেমে পড়লেন ক্রিকেটের মক্কা লর্ডসে। শুরুটা রাঙানো হলো না, কিন্তু স্বপ্নের যাত্রার শুরুটা হলো। এরপর কয়েক বছর টিকে থাকার লড়াই। উইকেটের পেছনটা সামলে ব্যাট হাতে অনবরত যুদ্ধ। একটা সময় এলো, থিতু হলেন। এখন তিনি জাতীয় ক্রিকেট দলের ব্যাটিং কান্ডারি; মুশফিকুর রহিম।
২০০৫ সালের ২৬ মে শুরু করা ১৭ বছরের কিশোর মুশফিক এখন ৩৩ বছরের পরিণত, লড়াকু ক্রিকেট সৈনিক। বাংলাদেশের হয়ে ৭০ টেস্ট, ২১৮ ওয়ানডে ও ৮৬টি টি-টোয়েন্টি খেলা উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আজ ১৫ বছর পূর্ণ হলো।
লম্বা এই সফরটা কেমন ছিল, ক্যারিয়ারের কঠিনতম সময়, টেস্ট অধিনায়কত্ব হারানোর প্রক্রিয়া, চান্দিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে বৈপরীত্ব সম্পর্ক, টিম ম্যানেজমেন্টের অপেশাদার আচরণ, সতীর্থদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কঠিন অধ্যায়সহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছেন মুশফিক।
টিবিএস: ঘরবন্দি অবস্থায় লম্বা সময় কাটাতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঠিক কেমন লাগছে, কীভাবে সময় কাটছে?
মুশফিকুর রহিম: একই রকম। এখন তো আসলে অপশন নেই। বাসায় থাকলে অপশন খুবই কম। পরিবারের সাথে সময় পার করা, নিজের ফিটনেস নিয়ে কাজ করা, রোজার সময় রোজা রাখা; এভাবেই সময় গেছে এবং যাচ্ছে আর কি।
টিবিএস: লকডাউনের শুরু থেকেই ফিটনেস নিয়ে নিয়মিতভাবে কাজ করে আসছেন। সেটা কি এখনও একই ছন্দে আছে?
মুশফিক: তা তো অবশ্যই। রোজা ছিল তো কী হয়েছে। রোজা রেখে আমি ইনশা আল্লাহ খেলেছিও। আমার জন্য তেমন কিছু না। আগে যেটা করেছি, রোজাতেও সেটাই করছি। হয়তো শুধু সময়ে পরিবর্তন। আগে যেটা সকাল ৯টা সাড়ে ৯ টায় করতাম, রোজায় সেহেরি খেয়ে, নামাজ পড়ে ঘুমাতে হয়েছে, তাই ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে একটু দেরি হয়েছে। ১২টা সাড়ে ১২টার দিকে করা হয়েছে। তবে একই কাজ করেছি। কোনো পার্থক্য ছিল না।
টিবিএস: তামিম ইকবালের সঙ্গে আপনি প্রথম লাইভ করেছেন। লাইভে বলছিলেন,ব্যাটগুলো কাঁদছে। পরের লাইভে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বলেছেন, এভাবে আর কদিন গেলে মুশফিক মারাই যাবে। এতোদিন হয়ে গেল, ব্যাট ধরতে পারছেন না। এটা কতটা কঠিন হচ্ছে আপনার জন্য?
মুশফিক: খারাপ তো লাগছেই। এখানে কিছু করার নেই। এটা তো আমার হাতে নেই। কিছু জিনিস আছে যেটা আপনার হাতে নেই, কষ্ট হলেও সেসব মেনে নিতে হয়। ওটা নিয়ে আসলে চিন্তা করে লাভ নেই। সত্যি বলতে প্রথম দিকে অনেক কষ্টই হচ্ছিল। এখন কোনো সুযোগ নেই। যখন দেখি আমাদের আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী, ডাক্তার-নার্স, স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরা এতো কষ্ট করছেন, এতো স্যাক্রিফাইজ করছেন, তখন মনে হয় তাদের জীবনের একটা মূল্য আছে।
আমাদের মতো মানুষরা যদি ঘরে না থাকি, তাদেরকে সেই যথার্থ সম্মানটা দেওয়া হবে না। তাদের কথা চিন্তা করে হলেও ঘরে থাকা উচিত সবার। আর আশা করছি আল্লাহ দ্রুতই এটা ঠিক করে দেবেন, তখন আবার মাঠে ফিরতে পারব।
টিবিএস: নিজ নিজ জায়গা থেকে অনেক ক্রিকেটারই দুস্থ-অসহায়দের সাহায্য করছেন। এর মধ্যে আপনি অন্যতম। এটা খেলোয়াড় হিসেবে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে করা নাকি একেবারেই ব্যক্তিগত ভাবনা?
মুশফিক: না, এটা শুধু খেলোয়াড় বলে দেওয়া উচিত সেটা নয়। আমার কাছে মনেহয় যেহেতু আল্লাহ একটু হলেও সামর্থ্য দিয়েছেন, তো অবশ্যই করা উচিত। শুধু ক্রিকেটার হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে সবারই এটা দায়িত্ব। আর মুসলমান হিসেবে তো আরও সবার আগে দায়িত্ব। কারণ আপনার একজন ভাই-বোন কষ্টে থাকবেন আর আপনি সাহায্য করবেন না, এটা তো হয় না। আমার কাছে মনে হয় নিজেরটা স্যাক্রিফাইজ করে হলেও তাদেরকে সাহায্য করা উচিত এমন কঠিন মুহূর্তে।
এটাই প্রথম নয়, এরআগে আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্য থেকে অনেকেই সাহায্য করেছেন এবং সেটা অব্যাহত আছে। আর এখানে শুধু আমি নই, অনেক খেলোয়াড়ই অনেকভাবে কন্ট্রিবিউট করছে। তো এটা একটা খুবই ভালো দিক। হয়তো আগে অনেক কিছুই করেছি কিন্তু ওসব কেউ জানে না। এখন এই কারণে কিছু কিছু জানানো উচিত বলে মনে করি যেন আমাকে দেখে অন্যরাও একটু অনিুপ্রাণিত হন। আমাকে দেখে আমার ভক্ত বা শুভাকাঙ্খিরাও যদি ১০-২০ টাকা কন্ট্রিবিউট করেন, আমার সেটা ভালো লাগবে। এতে আরও ২০-৩০ জন মানুষের সাহায্য হবে।
টিবিএস: করোনাভাইরাসের এই সঙ্কটময় সময়েও কোনো ইতিবাচক দিক খুঁজে পান কিনা, যেটা মানবিকতার কথা বলে।
মুশফিক: যেটা আগে বললাম এটা তো আমাদের হাতে নেই। কবে ঠিক হবে সেটা আল্লাহ জানেন। আমি ইতিবাচক দিক হিসেবে বলব নিজেদের যথেষ্ট সুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকা সত্ত্বেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী, পুলিশ, ডাক্তার-নার্সরা যেভাবে আমাদের সুরক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, এটা বড় একটা ইতিবাচক। এই সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরা যেভাবে একজন আরেকজনকে সাহায্য করছেন, এটাও একটা ইতিবাচক দিক বলে আমি মনে করি।
সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হচ্ছে আমরা সব সময় সুযোগ পাই না পরিবারের সাথে সময় কাটানোর জন্য, এটা হয়তো একটা ওসিলা ছিল। যদিও চাইনি নিজেদের কষ্ট হবে, এভাবে বাসায় বসে থাকব। তবু বাসায় থাকার এতদিন সময় হয়েছে, ছেলে বা স্ত্রীর সাথে সময় কাটাতে পেরেছি, এটাও একটা বড় ইতিবাচক দিক।
টিবিএস: এই সময়ে হয়তো সবাই ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু ম্যাচ, ম্যাচ প্র্যাকটিস থেকে সবাই অনেকদিন ধরে দূরে আছেন। এই অবস্থা শেষে ক্রিকেটে ফেরাটা ক্রিকেটারদের জন্য কঠিন হবে কিনা?
মুশফিক: সমস্যা তো অবশ্যই হবে। অনেক ভিডিও দেখছি, মানসিক কাজগুলো করার চেষ্টা করছি, সব সময় অ্যানালিস্টের সংস্পর্শে আছি যেন আমার কিছু জায়গা আরও শক্ত করা যায়। অনেকগুলো তথ্য যোগাড় করার চেষ্টা করছি এবং তার সাথে আলোচনা করছি কোন জায়গায় আমার আরও কাজ করার সুযোগ আছে ভবিষ্যতে শুরু হওয়ার পর মানিয়ে নেওয়ার জন্য। শুধু আমি নাই, আমি মনে করি সবার জন্যই এটা কঠিন হবে।
আমরা যখন ইনজুরির কারণে ২-১ মাস বা ১৫-২০ দিন পরে ফিরি, সেখান থেকে ফেরার একটু আলাদা পরিবেশ বা আত্মবিশ্বাসের লেভেল একটু নিচে থাকে। এটা একটু ঝামেলাই হবে। তবে একই সময় আমার মনে হয় আমরা যখন শুরু করে দিব, হয়তো প্রথম দুই-এক সপ্তাহ সমস্যা হতে পারে। তবে আমাদের সিস্টেমের ভেতরই যেহেতু এটা আছে, আমার মনে হয় না বেশি সময় লাগবে। আমার বিশ্বাস ২-৩ সপ্তাহের মধ্যেই আমরা আমাদের লক্ষ্যের জায়গায় যেতে পারব। আমাদের ম্যাচ ফিটনেসে একটু ঘাটতি থাকবে। পাশাপাশি ইনজুরির প্রবণতা হয়তো একটু বেশি থাকতে পারে। কারণ আমরা যে কাজের চাপে অভ্যস্ত, সেটা আমরা অনেক মাস ধরে নিতে পারছি না।
তো যখনই শুরু হোক আমরা যদি দুই-তিন সপ্তাহর একটা ভালো ক্যাম্প বা অনুশীলনের সুবিধা আমরা ভালোভাবে করতে পারি, আশা করি একটু হলেও রিকভার করতে পারব। এত বড় গ্যাপ আমি আমার ক্রিকেট জীবনে পাইনি। ইনজুরির কারণে হয়তো এক মাসের মতো পেয়েছিলাম। আমাদের জন্য স্কিল ট্রেনিংটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। শুরু না হওয়া পর্যন্ত কঠিন হবে। বিশেষ করে পেসারদের জন্য। কারণ তারা যতই ফিটনেস নিয়ে কাজ করুক না কেন, বোলিং ফিটনেস একটা আলাদা বিষয়। তাদের হয়তো বোলিংয়ে ছন্দে আসতে সময় লাগবে। এই চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের নিতে হবে। যেহেতু অনেক বছর খেলছি, আশা করছি খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
টিবিএস: ২৬ মে আপনার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ১৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। লম্বা এই সফর নিয়ে একটু বলবেন। এ সময়ে যেভাবে পরিকল্পনা করেছেন, তার কতটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন? সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ার নিয়ে কতটা তৃপ্ত?
মুশফিক: আলহামদুলিল্লাহ। প্রথমত আমি মনে করি, বাংলাদেশের হয়ে ১৫ বছর খেলাটা মজার কোনো বিষয় না। কারণ বাংলাদেশের মতো জায়গায় নিয়মিতভাবে তিন ফরম্যাটে খেলা খুবই কঠিন। আমার ১৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে, এটা আমার জন্য অবশ্যই একটা বড় পাওয়া বলে মনে করি। এখানে অনেক মানুষকেই ধন্যবাদ দিতে হয়, যারা আমার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। আমি যতুটুকই অর্জন করেছি, এখানে কোচ, আমার স্কুল পর্যায়ের শিক্ষক, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমার পরিবার-বন্ধুদের সবার অবদান আছে। কারণ এদের সমর্থন ছাড়া এতোদূর আসা কখনই সম্ভব নয়।
দর্শকদেরও এখানে ধন্যবাদ দিতে হয়। তারাও আমাকে যথেষ্ট সমর্থন দিয়েছেন যখনই খেলতে গিয়েছি বা মাঠের বাইরে। যখনই দেখা হয়েছে, অনেক কথা বলেছেন তারা। আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে উত্থান-পতন স্বাভাবিকভাবেই থাকবে। সবাই চায় নিজের জায়গা থেকে সেরা পারফরম্যান্স করতে। হয়তো অনেক সময় হয়, অনেক সময় হয় না। আর এটা একটা হিউম্যান ন্যাচারই, যদি ৫০ এভারেজ থাকে আপনার মনে হবে কেন ৫২ বা ৫৫ হলো না।
আফসোস একটু থেকেই যায়। যদিও আমার এতো গড় না, আমি মনে করি আমার প্রথম ৫-৬ বছর নিয়ে আমার একটু আফসোস আছে। হয়তো আমার সামর্থ্য অনুযায়ী আমি খেলতে পারিনি তখন। তবে ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অন্যরকম একটা সফর মনে হয়েছে আমার কাছে। এই অংশটায় আফসোস করার কিছু নেই। আমার পরিসংখ্যানও সেটা শো করে। আল্লাহর কাছে অশেষ রহমত যে শেষ সাত-আট বছর এভাবে খেলেছি। যে কয় বছরই খেলব এটা যদি নিয়মিত করতে পারি, তাহলে ক্যারিয়ার শেষে হয়তো আমি আরও খুশি থাকব।
টিবিএস: অধিনায়কত্ব পাওয়া নাকি হারানো কোনটা কঠিন মনে হয়েছে?
মুশফিক: দুটিই আসলে কঠিন। কারণ যখন অধিনায়কত্ব পেলাম অন্যরকম একটা ভালো লাগা ছিল। কারণ নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা যেকোনো খেলোয়াড়ের জন্য স্বপ্ন। আমারও সেই স্বপ্ন ছিল। যেহেতু আমার অনূর্ধ্ব-১৭, ১৯ সব পর্যায়েই অধিনায়কত্ব করার একটা অভিজ্ঞতা ছিল, তো স্বাভাবিকভাবেই একটা স্বপ্ন ছিল। জাতীয় দলে এসে এটা পূরণ হওয়ায় ভালো লেগেছে। যদিও আমার অধিনায়কত্বের রেকর্ড হয়তো ওই রকম এক্সট্রা অর্ডিনারি কিছু নয়, তারপর আমি চেষ্টা করেছি। আমি যে দল পেয়েছি, সেটা নিয়ে চেষ্টা করেছি।
আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কয়েকটা টেস্ট ম্যাচ জিতেছে। এটা আমার জন্য বড় অর্জন ছিল। যেহেতু আমি ওই সময় অধিনায়ক ছিলাম, আমার নেতৃত্বে বড় বড় কয়েকটা দলের সাথে আমরা জিততে সক্ষম হয়েছিলাম। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ের মতো দলের বিপক্ষে বেশ কয়েকটা টেস্ট ম্যাচ জিতেছি। এটা আমার কাছে ভালো লাগে। আর অধিনায়কত্ব হারানো, এটা তো একটা সময় আসবে যখন আপনাকে ছাড়তে হবে বা আপনার থেকে নিয়ে নেওয়া হবে; এটাই স্বাভাবিক। এটাই একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
তবে আমি মনে করি যেভাবে হওয়া উচিত ছিল, সেভাবে হয়নি। যতটুকু সম্মানের প্রাপ্য ছিলাম, সেটা হয়তো আমি পাইনি। এ জন্য একটু আফসোস আছে। কিন্তু অধিনায়কত্ব চলে গেছে, সেই কারণে কোনো আফসোস নেই। কারণ এটা এমন একটা জিনিস যেটা আপনার কাছে আজীবন থাকবে না। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকবে। তবে যেভাবে গিয়েছে, সেটা হয়তো আমি আশা করিনি। এবং আমি এখনও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমার আরেকটু সম্মান পাওয়া অবশ্যই উচিত ছিল। প্রক্রিয়া মেনে গেলে আমার জন্য হয়তো ভালো লাগতো। অধিনায়ক হিসেবে আমি সৎ ও ডেডিকেশনের সাথে বাংলাদেশকে সার্ভিস দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তো সেখানে যখন সম্মানটা সেভাবে পাইনি, তো একটু হলেও আফসোস আছে নিজের ভেতর।
টিবিএস: আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি এবং বড় বড় টেস্ট ম্যাচ জিতেছে। কিন্তু আপনার অধিনায়কত্ব গেছে অপেশাদার প্রক্রিয়ায়। সেটা আপনার জন্য কতটা ধাক্কার ছিলে এবং এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলেন কিনা?
মুশফিক: সত্যি বলতে বাংলাদেশের মতো জায়গায় খুব কম খেলোয়াড়ই পেরেছে সম্মানের সাথে অবসর নিতে। কিংবা সম্মানের সাথে অধিনায়কত্ব পেয়েছে বা সম্মানের সাথে অধিনায়কত্ব চলে গিয়েছে, এটা খুব কম। সেদিক থেকে আমি হয়তো বেশি সম্মান চেয়েছিলাম, এটা আমি পরে বুঝতে পেরেছি। কারণ বাংলাদেশের মতো জায়গায় খুব কমই আছে এটা, ভাগ্যবান না হলে এটা পাওয়া খুব কঠিন। তবে এভাবে অধিনায়কত্ব চলে যাবে এটা আশা করিনি। হঠাৎ করে যে চলে যাবে, এটা ভাবিনি। কারণ আমাকে যেভাবে বা যে অপবাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমার কাছে মনে হয়েছে এটা পুরোপুরি অনৈতিক।
আমার কাছে কখনই মনে হয়নি যে আমি এই কাজগুলো করেছি এবং এই কারণেই আমার অধিনায়কত্ব গিয়েছে। যখন দল পারফর্ম করবে সেটার গুরুদায়িত্ব যেমন অবশ্যই অধিনায়ককে নিতে হবে, কোচকেও ঠিক সেইভাবেই নিতে হবে। এটা পুরো দলেরই একটা ব্যর্থতা। আবার যখন ভালো করবে, আমি কখনই মনে করি না এটা কেবল অধিনায়কের একার হাত। এটা একক কোনো খেলা নয়, যেখানে আপনি একাই খেলবেন আর আপনি একাই জিতিয়ে দেবে। এটা টিম স্পোর্টস, এখানে সবার অবদান থাকে। যারা খেলে না ত্রয়োদশ বা চতুর্দশ খেলোয়াড়, সবার অবদান থাকে।
আমার মনে হয় জয়ের সময় সবাই কৃতিত্বটা নিতে চাই, হারার সময় দায়টা কেউই নিতে চায় না। এটাই হচ্ছে আমাদের বাস্তবতা। সেই জায়গায় আমি কিছুটা আনলাকি ছিলাম যে কোচের কাছ থেকে তেমন সমর্থন আমি কখনই খুব একটা পাইনি। শেন জার্গেনসেনের সময় হয়তো পেয়েছি, তারপরে কোচ বা ম্যানেজম্যান্টের কাছ থেকে আমি সাহায্য পাইনি। বলতে পারেন আমাকে একাই লড়তে হয়েছে স্রোতের বিপরীতে।
টিবিএস: অধিনায়কত্বের সময়ে পাওয়া কোন শিক্ষাটাকে জীবনের ক্ষেত্রে খুব জরুরী মনে হয়?
মুশফিক: হয়তো অনেক কথা আমি অনেক সময় বলেছি, যেটা হয়তো বলা উচিত হয়নি। অনেকেই অনেক ভুল করেছে, সেটা হয়তো হজম করে বসে থাকা উচিত ছিল। হয়তো সেটা বলে ফেলেছি। এই জিনিসগুলো বলা উচিত হয়নি। অধিনায়কত্ব করার সময়ে পাওয়া বড় লেসনটা হচ্ছে, আমার হয়তো অভিনয়টা করতে শিখতে হতো, যেটা আমি কখনও পারিনি আমার পুরো জীবনে। আমার অধিনায়কত্ব চলে যাওয়ার পর আমার এই উপলব্ধিটা এসেছে যে, যদি একটু অভিনয় করতে পারতাম বা শিখতে পারতাম তাহলে হয়তো আমার অধিনায়কত্ব আরও অনেকদিন থাকতে পারত।
অধিনায়ক হিসেবে হয়তো আরও ভালো পারফরম্যান্স করতে পারতাম। কিন্তু এটা আমার পছন্দ না। আমার যেটা মনে হয় সেটা আমি মুখের ওপর বলতে পছন্দ করি বা সামনা সামনি কথা বলতে পছন্দ করি। অধিনায়কত্ব যাওয়ার পর আমার এটা মনে হয়েছে যে, এটা হলে হয়তো আরও কিছুদিন থাকতে পারতাম। তবে আমি যেটা বললাম অধিনায়কত্ব চলে যাওয়া নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, এটা যাবেই। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় আমারটা গেছে, এটা আমার কাছে আফসোসের। সেটা এখনও আছে।
টিবিএস: অধিনায়ক মুশফিককে আপনি ১০ এর মধ্যে কতো দেবেন?
মুশফিক: অধিনায়ককে যখন আপনি কোনো দাঁড়িপাল্লায় দাঁড় করাবেন তখন আপনি প্রথমেই দেখবেন, আপনার নেতৃত্বে কতগুলো ম্যাচ জিতেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে আমি হয়তো সে রকম সফল অধিনায়ক নই। কিন্তু টেস্টের সাফল্যে হয়তো আমার ধারে কাছেও কেউ নেই। হয়তো ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে আমি যেভাবে চেয়েছি, সেভাবে পাইনি। সব মিলিয়ে যদি চিন্তা করি নিজেকে ৭ দিতে পারি।
টিবিএস: চান্দিকা হাথরুসিংহের সঙ্গে আপনার রসায়ণটা সেভাবে জমেনি। বেশ কিছু বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে আপনার মতের অমিলের জায়গা ছিল। হয়তো সেসময় অনেক কিছুই আপনার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব সময়ই একটা চাপ আপনার ওপর ছিল। ওই সময়টাই আপনার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন সময় কিনা? না হলে কোনটা সবচেয়ে কঠিন সময়?
মুশফিক: এটা আসলে স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। একটা দলে নতুন খেলোয়াড় আসবে। তার সাথে আপনাকে মানিয়ে নিয়ে ওই দলে আপনাকে খেলতে হবে। নতুন, পুরনো অনেকের সাথে মানিয়ে নিতে হবে। আমার যখন অভিষেক হয় তখন অনেক সিনিয়র খেলোয়াড় ছিলেন, তাদের সাথে মানিয়ে নিয়ে আমাকে খেলতে হয়েছে। ম্যানেজমেন্টেও একই। আমার এতটুকু ক্যারিয়ারে আমি ৭-৮ জন কোচ পেয়েছি ইতোমধ্যে। সবার একেক ধরনের দর্শন থাকে, এক ধরনের সামর্থ্য থাকে, ক্রিয়েটিভিটি থাকে।
তো আমি মনে করি যে আমি যেভাবে তাকে বোঝাতে চেয়েছি, সেইভাবে তিনি বোঝেননি। কিংবা তার দর্শন হয়তো একটু অন্যরকম ছিল যা আমার কাছে ভিন্ন লাগতো। অনেক সময় ভালো লেগেছে, অনেক সময় ভালো লাগেনি। আমাদের মধ্যে হয়তো একটু দূরত্ব হয়তো ছিল, যেটা স্বাভাবিক। এটা আসলে অস্বীকার করার কিছু নেই। কিন্তু এমন হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ আমি বলতে পারব না। কোন ঘটনার কারণে সে আমাকে পছন্দ করতেন না সেটা আমি জানি না।
হয়তো আমি তাকে সরাসরি অনেক কথা বলতাম, এসব না বলে যদি আমি চুপচাপ থাকতাম বা সে যা বলতো সেগুলোয় হ্যাঁ হ্যাঁ বা জ্বি হুজুর করতাম তাহলে হয়তো তার সাথে আরও ভালো কাজ করতে পারতাম। তবে আমার কাছে এটা কখনও মনে হয়নি। আমার কাছে মনে হয়েছে দল আগে এবং দলের ভালোর জন্য যদি কারও সাথে লড়াই করতে হয় বা কথা বলতে হয়, অবশ্যই আমি সেটা করব। একজনকে আপনি অন্যায়ভাবে নেবেন একজনকে অন্যায়ভাবে বাদ দিয়ে দেবেন, এটা কখনও প্রক্রিয়া হতে পারে না।
আমি সব সময় চেষ্টা করেছি ন্যায্য, সৎভাবে কাজ করার। হয়তো এই যাত্রায় অনেক সময় আমি সমর্থন পেয়েছি, অনেক সময় পাইনি। আমি খুবই আনলাকি যে আমি খুব কমই সমর্থন পেয়েছি। খেলোয়াড়দের কাছ থেকেও তখন খুব কম সমর্থন পেয়েছি। যখন ম্যানেজমেন্টের সাথে আপনার ঝামেলা চলবে, তখন দলের অন্য খেলোয়াড়দের সাহায্য চাইবেন আপনি। কিন্তু আমি খুব কমই পেয়েছি সেই সমর্থনটা।
তবে এরচেয়ে কঠিন সময় আমার এসেছে যখন আমি একবার জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ি। এরচেয়ে তো বড় কঠিন সময় আর হতে পারে না। আমার কাছে মনেহয় হাথুরুসিংহের সময়টায় আমাকে কঠিন সময় পার করতে হয়েছে, তবে আমি সেটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছি এবং মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছি। কারণ ওই সময়টা আমার নিজের পারফরম্যান্স যে খুব খারাপ হয়েছে সেটা নয়। হয়তো অধিনায়ক হিসেবে আমি সেভাবে সফল হতে পারিনি। অধিনায়ক হিসেবে সফল হতে অনেকেরই সমর্থন লাগে। যখন আপনার দল রেজাল্ট করে না, তখন আরও বেশি সমর্থন লাগে।
যেটা কিনা আমি একদমই পাইনি। কোচ বা ম্যানেজমেন্ট, কোনো জায়গা থেকেই পাইনি। উল্টো অপবাদ পেয়েছি যে, তোমার কারণে এটা হয়েছে, তোমার কারণে ওটা হয়েছে। আমি সব সময়ই স্বীকার করি আমার কারণে হয়েছে, অপবাদ নিতে আমি ভালোবাসি, এটা সমস্যা না। কিন্তু অপবাদ দেওয়ার আগে সবাইকে অন্তত চিন্তা করতে হবে যে এটা ওর একার সিদ্ধান্ত নয়, এটা সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। যেটা ম্যাচে অনেক সময় বাস্তবায়ন হয়, অনেক সময় হয় না। দৃঢ়ভাবে আমি বলতে পারি বাংলাদেশের মতো জায়গায় কেউ একা কখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এই অধিকার কাউকে কখনও দেওয়া হয় না।
টিবিএস: পারফরম্যান্স, চাপে পড়ে যাওয়া, অধিনায়কত্ব চলে যাওয়া: এসবের পেছনে হাথুরুসিংহের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের কোনো ভূমিকা ছিল কিনা?
মুশফিক: এটা আমি সেভাবে পরিস্কার করে বলতে পারব না। কারণ ম্যানেজমেন্টের সাথে কী হতো সেটা জানি না। তার তত্ত্বাবধানে আমাদের শেষ সফর দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিল। ওই সফর থেকেই তার চরিত্রটা একটু ভিন্ন ছিল। আমাদের সাথে কম কথা বলতেন। টিম মিটিংয়েও কম কথা বলতেন। অনুশীলনে কম সম্পৃক্ততা দেখা যেত। তখন থেকেই আমাদের (দলের সবার সঙ্গে) একটা দূরত্ব ছিল, আমি বুঝতে পারছিলাম যে কোনো একটা কিছু হতে পারে ভবিষ্যতে। তবে সে যে চলে যাবে, আমরা এটা আসলে কখনও আশা করিনি।
এমন একটা কঠিন সফর যা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্বের যেকেনো দলের জন্য কঠিন সফর হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়, সেখানে কোচ হিসেবে অধিনায়ক, দলের পাশে থাকবেন, এমনটা চেয়েছিলাম। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করে তিনি একদমই ছিলেন না। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা ক্ষতি ছিল। এই সময়টা কঠিন ছিল আমার জন্য আবার পুরো দলের জন্যই। কারণ ম্যানেজমেন্ট থেকে আমরা তখন কোনো সমর্থন পাইনি। আমাদের প্রধান নির্বাচকও (মিনহাজুল আবেদীন নান্নু) ছিলেন আমাদের সাথে ম্যানেজার হিসেবে, তখন তার কাছ থেকেও সেরকম কোনো সমর্থন পাইনি সত্যি বলতে।
টিবিএস: যেহেতু এমন বেশ কিছু বিষয় ছিল, তো কোচ হাথুরুসিংহে ব্যাটসম্যান বা ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমকে মানসিকভাবে কিছুটা হলেও পিছিয়ে দিয়েছিলেন কিনা? কিংবা পিছিয়ে রেখেছিলেন কিনা?
মুশফিক: একজন নির্দিষ্ট মানুষের কারণে আমি পিছিয়ে যাব, এটা আসলে বলা কঠিন। যদিও আমার সাথে তার খোলামেলা বা খুব ভালো সম্পর্ক ছিল, তেমন নয়। এটা আমি অস্বীকার করব না। তবে নির্দিষ্ট কিছু সময়ে আমার যখন সাহায্য লেগেছে, তিনি সাহায্য করেছেন। আবার যখন প্রয়োজন হয়েছে আমিও তাকে সাহায্য করেছি।
টিবিএস: তার কাছ থেকে কতটা শিখতে পেরেছেন?
মুশফিক: ব্যক্তিগতভাবে ব্যাটিংয়ের কথা বললে, সে যে আমাকে শুধু ব্যাকফুটেই দিয়েছেন তা নয়। তার কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি এবং তিনি থাকাকালীন আমার ব্যাটিংয়েরও উন্নতি হয়েছে বলে আমি মনে করি। তার সাথে দুই-তিনটি বিষয়ে কথা বলে আমার অনেক সুবিধা হয়েছে। সব মিলিয়ে উত্থান-পতন অবশ্যই ছিল, স্ট্রাগল, কঠিন সময় সবই ছিল। তবে সবই যে খারাপ ছিল তা নয়।
আমি মনে করি, আমারও কোনো ভুল থাকতে পারে হয়তো। উনাকে জিজ্ঞাস করলে সেটা আরও ভালো হবে। কারণ আমি বলতে পারি না কোন ঘটনায় তার সাথে আমার দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। খেলোয়াড় হিসেবে সে আমাকে অনেক সমর্থন করেছে মানসিকভাবে, এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। সে আসার পরে পুরো দলের ব্যাটিংয়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে এবং অনেক খেলোয়াড়ের অনেক সুবিধা হয়েছে।
টিবিএস: বলা হয় মুশফিকুর রহিম একটু বেশি আবেগী। আবেগের সেই জায়গাটা কমেছে কিনা কিংবা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা শিখেছেন কিনা?
মুশফিক: আমি মনে করি মানুষকে অবশ্যই আবেগী হওয়া উচিত। কারণ কোনো জিনিস যদি আবেগ বা দরদ নিয়ে না করেন, ওই জিনিসটার ভিতরে সেই মায়াটা থাকবে না এবং তার জন্য আপনার জান দিতে ইচ্ছা করবে না। আপনার বাবা-মায়ের জন্য বা স্ত্রীর জন্য যদি ওই অনুভূতি না থাকে তাহলে তার জন্য আপনার কিছুই করতে মন চাইবে না। তবে এটার অবশ্যই একটা মাত্রা থাকা উচিত।
হয়তো প্রথম স্টেজে বেশি আবেগী ছিলাম। কারণ তখন আমি অনেক তরুণ ছিলাম, হয়তো ওইরকম পরিণত ছিলাম না। তবে অধিনায়কত্ব যাওয়ার পরে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি আসলে এটা কোন পর্যায়ে থাকা উচিত। কিন্তু অধিনায়কত্বের সময়, যেটা আমি বললাম অভিনয়টা যদি আমি শিখে ফেলতে পারতাম তাহলে হয়তো ওখানে আরেকটু নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম।
অনেক সময় হয়তো আমি আবেগী বা খারাপ লেগেছে, সেটা আমি দেখলাম না, এই পরিপক্কতা যদি তখন আরেকটু আসতো, হয়তো আমি আরও ভালো পারফরম্যান্স করতে পারতাম। ২০১৭ সালে আমার অধিনায়কত্ব যাওয়ার পরে আসলে উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। ২০১৪ সালে যখন আমার ওয়ানডে অধিনায়কত্ব গেল, তখন থেকেই আমার উপলব্ধি আসে যে, আমার আরও ভালো করা উচিত। তারপর থেকে দেখতে পারবেন আমি অনেক বেশি পরিণত বা অনেক দিক থেকেই আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।
আমি এখন অনেক খুশি যে আবেগটা আস্তে আস্তে অনেক নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং চাইলেই আমি অনেক কিছু করতে পারি আল্লাহর রহমতে। এটা আল্লাহর রহমত এবং আমার স্ত্রীকেও অনেক কৃতিত্ব দিতে হয়। কারণ ওর সাথে থেকে থেকে জীবনের বাস্তবিক অনেক কিছু শিখেছি। শিখেছি চোখ বন্ধ করে মানুষকে আমি সব সময় অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছি, সেটা কখনই করা উচিত নয়। এটারও একটা সীমানা থাকা উচিত, অনেক কিছুই শিখেছি। তো আল্লাহর রহমতে এখন ভালোই চলছে।