অসাধারণ মাশরাফি, ফাইনালে খুলনা
আগের দুই ম্যাচে দুই উইকেট, কিন্তু ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আগুনে চেহারায় মাশরাফি বিন মুর্তজা। সৌম্য, লিটনদের ফিরিয়ে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের ব্যাটিং লাইন আপ নড়বড়ে করেছেন তিনিই। পরে নিয়েছেন আরও তিন উইকেট। এরআগে ব্যাট হাতে দাপট দেখান জহুরুল ইসলাম অমি, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। সব মিলিয়ে ব্যাটে-বলে শাসন করে চট্টগ্রামের বিপক্ষে দাপুটে জয় তুলে নিলো জেমকন খুলনা।
দারুণ জয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ফাইনালে উঠে গেছে মাহমুদউল্লাহর দল। সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম কোয়ালিফায়ারে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামকে ৪৭ রানে হারিয়েছে জেমকন খুলনা। হারলেও ফাইনালে ওঠার সুযোগ শেষ হয়নি চট্টগ্রামের। এলিমিনেটর ম্যাচের জয়ী দল বেক্সিমকো ঢাকার বিপক্ষে ১৫ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলবে চট্টগ্রাম।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করে জেমকন খুলনা। ওপেনার জহুরুল ইসলাম অমির ৮০ ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর রিয়াদের ঝড়ো গতির ৩০ রানের সুবাদে ৭ উইকেটে ২১০ রান তোলে তারা। জবাবে ম্যাচসেরা মাশরাফি বিন মুর্তজার দারুণ বোলিংয়ের মুখে ১৯.৪ ওভারে ১৬৩ রানে শেষ হয় চট্টগ্রামের ইনিংস। ৩৫ রান খরচায় ৫ উইকেট নেন মাশরাফি। টি-টোয়েন্টিতে এটাই তার সেরা বোলিং। অভিজ্ঞ এই পেসারের আগের সেরা বোলিং ১১ রানে ৪ উইকেট, ২০১৮ বিপিএলে রংপুরের হয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে।
বড় লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দলকে ভালো সূচনা এনে দিতে পারেননি চট্টগ্রামের দুই ওপেনার লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। বেশিরভাগ ম্যাচে দলকে দারুণ শুরু এনে দেওয়া এই দুই ব্যাটসম্যানই মাশরাফি বিন মুর্তজার শিকারে পরিণত হন। প্রথম ওভারের শেষ বলে সৌম্যকে সাজঘর দেখিয়ে দেন মাশরাফি।
চড়াও হয়ে খেলতে থাকা লিটনকেও থিতু হতে দেননি অভিজ্ঞ এই পেসার। চট্টগ্রামের দলীয় ২৭ রানে লিটনের স্টাম্প উপড়ে নেন দারুণ বোলিং করা মাশরাফি। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা লিটন এদিন ১৩ বলে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৪ রান করেন। দলের প্রধান দুই ব্যাটিং অস্ত্রকে হারানোর পর চাপ সামাল দেওয়ার কাজটি করেছেন মাহমুদুল হাসান জয় ও অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন।
তৃতীয় উইকেটে ৭৩ রানের জুটি গড়েন এ দুজন। জয় ও মিঠুন যখন দারুণ ব্যাটিং করে যাচ্ছেন, এমন সময় আবারও আঘাত হানেন মাশরাফি। ৩১ রান করা মাহমুদুলকে ফিরিয়ে দেন অভিজ্ঞ এই পেসার। গলায় কাটা হয়ে বিধে থাকা মিঠুনকে ফিরিয়ে দলকে এগিয়ে নেন আরিফুল হক। ফেরার আগে ৩৫ বলে ৩টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫৩ রান করে চট্টগ্রামের অধিনায়ক।
১৪ বলে ১৭ রান করা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে টিকতে দেননি সাকিব আল হাসান। শামসুর রহমান শুভ তেড়েফুঁড়ে শুরু করলেও মাশরাফির বাধায় দলকে এগিয়ে নিতে পারেননি। এই ওভারে আরও একটি উইকেট নিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট পূর্ণ করেন মাশরাফি। হাসান মাহমুদ ও আরিফুল হক দুটি করে উইকেট নেন।
এরআগে ব্যাটিং করা জেমকন খুলনাকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার জহুরুল ইসলাম ও জাকির হাসান। অবশ্য রানচাকা ঘোরানোর কাজটি জহুরুল একাই করে গেছেন। জাকিরকে সঙ্গে রেখে দারুণ সব শট খেলে যেতে থাকেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৭১ রানের জুটিতে ৩৩ বলে ৫০ রান করেন জহুরুল। ২২ বলে ১৬ রান করেন জাকির।
জাকিরের বিদায়ের পর ইমরুল কায়েসকে সঙ্গে নিয়ে আরও কিছুটা পথ পাড়ি দেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের অষ্টম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া জহুরুল। ইমরুল ২৫ রান করে ফিরে যাওয়ার পরও দিক হারাননি জহুরুল। ৫১ বলে ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৮০ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংস খেলেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে এটাই তার সেরা ইনিংস। এই ফরম্যাটে আগেও ৮০ রান করেছেন তিনি।
জহুরুলের বিদায়ের পর সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আরিফুল হকের ব্যাটে চড়ে ২০০ পার হয় খুলনা। ১৫ বলে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৮ রান করেন সাকিব। চলতি টুর্নামেন্টে এটাই তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। সাকিবের আগেই সাজঘরে ফেরা মাহমুদউল্লাহ ছিলেন খুনে মেজাজে। মাত্র ৯ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩০ রান করেন তিনি। আরিফুলের ব্যাট থেকে আসে ১৫ রান। চট্টগ্রামের পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ২টি এবং সঞ্জিত সাহা ও মোসাদ্দেক হোসেন একটি করে উইকেট নেন।