একই অঙ্গে তিন রূপ খালেদ মাহমুদের
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/02/19/sujan_1.jpg)
তারিখ, সাল মনে করতে পারলেন না। তবে পেসার থেকে স্পিনার হয়ে ওঠার সেই ঘটনা খালেদ মাহমুদ সুজনের স্মৃতিতে এখনও জ্বলজ্বলে। অফ স্পিনে ৫ উইকেট, সেটাও প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে। জাতীয় ক্রিকেট লিগে সুজনের অফ স্পিনের শিকার হয়েছিলেন রাজশাহী বিভাগের পাঁচজন ব্যাটসম্যান। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে ওটাই তার প্রথম ৫ উইকেট।
বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক মনে করতে না পারলেও রেকর্ড ঘেটে জানা গেল তার স্পিন কীর্তির সময়কাল। ২০০৪ সালে রংপুর ক্রিকেট গার্ডেনে পুরোদস্তর স্পিনার হয়ে উঠেছিলেন ঢাকা বিভাগের হয়ে খেলা সুজন। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে দুইবার পাঁচ উইকেট নিয়েছেন সাবেক ডানহাতি এই পেসার, এর মধ্যে একবার স্পিনার হিসেবে।
বহু দিনের পুরনো এই রেকর্ড অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে। সুজনের অফ স্পিনার হিসেবে পাঁচ উইকেট নেওয়ার ঘটনা ১৭ বছর আগের, তার ক্রিকেট ছাড়ারও ১৪ বছর হয়ে গেছে। এতদিন পরে এসে পুরনো সেই স্মৃতিকে সতেজ করে তুলেছেন তিনিই। কক্সবাজারে আয়োজিত সাবেকদের টুর্নামেন্ট লেজেন্ডেস চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ৪৯ বছর বয়সী সুজনকে দেখা গেল খণ্ডকালীন স্পিনার হিসেবে।
অবশ্য খণ্ডকালীন না বলে সুযোগ সন্ধানী স্পিনারও বলা যায়। ছোট্ট রানআপে মিডিয়াম পেসই করছিলেন এক্সপো রেইডার্সের অধিনায়ক। কিন্তু বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে দেখেই সুজন ভুলে গেলেন তার দীর্ঘদিনের বোলিং সত্ত্বা। আগের ডেলিভারিটিই মিডিয়াম পেস করা সুজন এবার করলেন অফ স্পিন।
ব্যাটসম্যান হুমায়ুন কবীর মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারার চেষ্টা করলেন। কিন্তু বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান আবিষ্কার করলেন, তার স্টাম্প ততোক্ষণে ভেঙে গেছে। দারুণ এক ইয়র্কারে উইকেট নিয়ে সামান্যই উদযাপন করলেন সুজন। যেন নিজেকে বোঝাতে চাইলেন, ফেলে আসা সোনালী দিন তো বহু দূরে। আর তার পরিচয়টাও স্পিনার নয়।
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/02/19/sujan.jpg)
আবার বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে দেখে স্পিন করার লোভও সামলাতে পারেন না সুজন। ৪৬ ম্যাচের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে মাত্র দুবার ৫ উইকেটের দেখা মিলেছে, এরমধ্যে একবার স্পিনে। স্পিনার হিসেবেই প্রথম ৫ উইকেট পেয়েছিলেন, সাহসটা হয়তো সেখান থেকেই পাওয়া। এই ম্যাচেও তার বোলিংয়ের দুটি অংশ, প্রথমে মিডিয়াম পেস এবং পরে স্পিন।
মিডিয়াম পেসার হিসেবে জাতীয় দলে ছয় বছর খেলে ফেলা সুজন প্রথম ৫ উইকেট পান অফ স্পিন করে। পরের বছর (২০০৫ সালে) ঢাকা বিভাগের হয়ে রাজশাহীর বিপক্ষেই দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেট পান তিনি। জা'দুবে স্টার্সের বিপক্ষেও প্রথম উইকেটটি স্পিনে পান সুজন, এরপর মিডিয়াম পেসে। ২ ওভারে ৮ রান খরচায় তার শিকার ২ উইকেট।
দলকে ৫৫ রানে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়ছিলেন সুজন, এমন সময়ে তার স্পিনার হয়ে ওঠার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করা হলো। জানালেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বলেই হঠাৎ তার স্পিনার হয়ে ওঠা, 'আমি অফ স্পিনার ছিলাম না। কিন্তু প্রথম শ্রেণিতে আমার অফ স্পিনে পাঁচ উইকেট আছে রাজশাহীর বিপক্ষে। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হলে অফ স্পিন করতে পছন্দ করি। কারণ বাঁহাতির জন্য কঠিন হবে খেলা।'
অফ স্পিনে ৫ উইকেটে নেওয়ার স্মৃতি এতটুকুই মনে আছে বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়কের। সাল জিজ্ঞাস করলে দীর্ঘদিনের সতীর্থ মেহরাব হোসেন অপির সাহায্য চাইলেন সুজন, 'এই অপি, অফ স্পিনে ৫ উইকেট নিয়েছিলাম কবে রে?' মনে করতে পারলেন সাবেক এই ব্যাটসম্যানও। শুধু বললেন 'রংপুর রাজশাহীর বিপক্ষে খেলেছিলাম হয়তো।'
বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে অফ স্পিন নিয়ে হাজির হওয়ার কৌশল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও পরিচিত। বিশেষ করে বাংলাদেশ এই রীতিতে বেশি বিশ্বাসী। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও এই কৌশল প্রয়োগ করেছে বাংলাদেশ। ক্যারিবীয় বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের ঘায়েল করতে অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ আর নাঈম হাসানকেই বেশি ব্যবহার করা হয়েছে।
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/02/19/sujan_2.jpeg)
একইভাবে পেসারদের স্পিনার হয়ে ওঠার দৃশ্যও অনেক দেখা গেছে। গলি-পাড়ার ক্রিকেটে এটা অহরহই হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও আছে অনেক নজির। সময়ের প্রয়োজনে অস্ট্রেলিয়ার মার্ক ওয়াহ, অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসরা মিডিয়াম পেসার থেকে স্পিনার হয়ে উঠেছেন। টেস্টে ভারতের বিপক্ষে স্পিন করতে দেখা গেছে পাকিস্তানের পেসার সোহেল তানভীরকে।
ভারতের সাবেক পেসার মনোজ প্রভাকরের বেলায় অবশ্য অভিজ্ঞতাটা ভিন্ন। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে স্পিনার হতে বাধ্য হতে হয়েছিল তাকে। লঙ্কান কিংবদন্তি সনাথ জয়াসুরিয়ার ব্যাটিং ঝড়ের মুখে পড়ে স্পিনকে অস্ত্র বানিয়েছিলেন প্রভাকর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবশ্য সুজনের এই অভিজ্ঞতা নেই। বরং ১৯৯৯ বিশ্বকাপে মিডিয়াম পেসে পাকিস্তানকে কাঁপিয়ে দেওয়ার স্মৃতি আছে তার। সেই সুজনই এদিন হয়ে গেলেন স্পিনার!
লেজেন্ডস চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ব্যাট হাতেও পুরনো স্মৃতি ফিরিয়েছেন খালেদ মাহমুদ সুজন। ২ উইকেট নেওয়ার আগে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ৯ বলে ১৩ রান করেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে ১২টি টেস্ট ও ৭৭টি ওয়ানডে খেলা সুজনের জাতীয় দলে এই অভিজ্ঞতা একবারই হয়েছে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওপেনার হিসেবে নেমে ১৯ বলে ৬ রান করেছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। অনেক গল্প ফিরে আসার দিনে সুজন হয়ে উঠলেন ওপেনার আবার স্পিনারও।
সাবেক ক্রিকেটারদের এই আসরটি মূলত বিনোদনমূলক। একসঙ্গে হয়ে সময় কাটাতে পেরেই উচ্ছ্বাসের শেষ নেই তাদের। সুজন বলেন, 'একটা মিলন মেলা হচ্ছে। এই টুর্নামেন্টটা হলে সবার সাথে দেখা হয়, কথা হয়, ছোটবেলার কথাগুলো মনে পড়ে। নিজেদের মধ্যে কথা বলি, অনেক নস্টালজিক হয়ে যাই আমরা।'
স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ার এই টুর্নামেন্টে অবশ্য প্রতিযোগিতার ঝাঁঝও টের পাওয়া যায়। শরীর সায় না দিলেও চেষ্টার কমতি থাকে না সুজনদের। সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, 'মাঠে আমরা অবশ্যই লড়াইয়ের চেষ্টা করি, তবে সবার সাথে দেখা হওয়াটাই মূল ব্যাপার। এখন তো বয়স হয়ে গেছে, আগের মতো আর পারা যায় না। তবু লড়াই করার তাড়না তো আসেই। শরীর ওভাবে সায় দেয় না। কিন্তু মানসিকভাবে তো তাড়না আসেই, সেই চেষ্টাটাই থাকে।'