এক সময়ের ব্যাটসম্যান এখন সেরা বোলার
বয়স সবে ১৯। এরই মধ্যে স্পিন ছোবলে প্রতিপক্ষকে নীল করে দিতে শিখে গেছেন নাঈম হাসান। ২০১৮ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকেই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন বাংলাদেশের এই ডানহাতি অফ স্পিনার। এবার নাঈমকে ভালো করে চিনল জিম্বাবুয়ে। তার স্পিন ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়ে ওঠা জিম্বাবুয়ে ম্যাচ হারল সাড়ে তিন দিনেই।
জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ও ১০৬ রানে হারানোর পথে ব্যাট হাতে যেমন মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক, নাজমুল হোসেন শান্তরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তেমনি বল হাতে বাংলাদেশকে পথ দেখিয়েছেন নাঈম হাসান। ৬ ফুট উচ্চতার দীর্ঘদেহী এই স্পিনার প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ৫ উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন। মাত্র ৪টি টেস্ট খেলা নাঈম দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেট শিকার করলেন।
প্রথম ইনিংসে বল হাতে বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেন পেসার আবু জায়েদ রাহি। দ্বিতীয় ইনিংসে এই কাজটি করেছেন নাঈম। তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে ৩ ওভার বোলিং করেই জিম্বাবুয়ের দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন তিনি। চতুর্থ দিনেও চলেছে তার স্পিন ঘূর্ণি। এদিন আরও ৩টি উইকেট নেন নাঈম।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৮২ রান খরচায় তার শিকার ৫ উইকেট। সব মিলিয়ে ম্যাচে নাঈম নিয়েছেন ৯ উইকেট। ম্যাচের হিসেবে এটাই নাঈমের টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং। দ্বিতীয় ইনিংসে তার স্পিনের বিপক্ষে আত্মসমর্পণ করেছেন জিম্বাবুয়ের ওপেনার প্রিন্স মাসভাউরে, ডোনাল্ট পিরিপানো, ব্রেন্ডন টেলর, টিমিসেন মারুমা ও এইন্সলে এনডিলভু।
২০০০ সালের ২ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া নাঈম স্বপ্নের পথে ছুটে চলেছেন। এই পথ তার বাবা মাহবুবুল আলমেরও খুব পছন্দ। নিজে ফুটবলার হলেও মাহবুবুল আলম স্বপ্ন দেখতেন ছেলে একদিন বড় ক্রিকেটার হবে। ছোট্ট নাঈমকে কাঁধে নিয়ে বিভিন্ন ক্রিকেট মাঠে ঘুরতেন চট্টগ্রাম ফুটবলের পরিচিত মুখ মাহবুবুল।
তখন থেকেই ক্রিকেটের প্রতি টান নাঈমের। সঙ্গে বাবার অকুণ্ঠ সমর্থন তার স্বপ্নের সীমানা বাড়িয়ে দেয়। অনুপ্রেরণা হিসেবে সামনেই পেয়ে যান নিজ শহরের আফতাব আহমেদ-তামিম ইকবালদের। এদের ব্যাটিং দেখে নাঈম পণ করে ফেলেন, ক্রিকেটার হবেন। স্বপ্ন দেখেন বড় ব্যাটসম্যান হওয়ার।
শুরুটা সেভাবেই; ব্যাটসম্যানই ছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে অফ স্পিনেও পারদর্শী হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে অলরাউন্ডার হিসেবেই জায়গা হয় নাঈমের। যদিও এখন তার পরিচয় অফ স্পিনার। তবে সুযোগ পেলে ব্যাটিংয়েও অবদান রাখতে কম যান না তরুণ এই স্পিন জাদুকর। চার টেস্টের ছয় ইনিংসে ব্যাটিং করে দুবার অপরাজিত থেকেছেন নাঈম। টেস্টে সর্বোচ্চ ২৬ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি।