করোনা মোকাবিলায় সৈয়দ রাসেলের লড়াই
করোনাভাইরাসের কারণে সব জায়গায় স্থবিরতা নেমে এসেছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত। রাস্তা-ঘাটে যানবাহন নেই বললেই চলে। পুরো দেশেই লকডাউন অবস্থা। সবাই নিজেকে ঘরবন্দী করে রেখেছেন। এমন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পরিবার থেকে দূরে থাকছেন ক্রিকেটার সৈয়দ রাসেল।
৫০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের এক সময়ের নিয়মিত এই সদস্য। আরও ১০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার প্রস্ততিও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এসব সহায়তা করার সময় মানুষের সাথে মিশতে হচ্ছে বলে নিজেই পরিবার থেকে দূরে গিয়ে থাকছেন সৈয়দ রাসেল।
বাংলাদেশের হয়ে ৬ টেস্ট ও ৫২টি ওয়ানডে খেলা রাসেল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমার ফার্ম আছে, আমি এখানে ১৬-১৭ দিন সেলফ কোয়ারেন্টিনে আছি। আমি বাসাতেই যাচ্ছি না। বাসার কাউকে বাইরে যেতে দিচ্ছি না। আমি বাইরে থাকায় পরিমাণে কম হলেও লোকজনের সাথে মেশা হচ্ছে। এই কারণে আমি পরিবার থেকে দূরে আছি।'
প্রথম দফায় ৫০০ পরিবারের কাছে খাদ্য পৌঁছে দিয়েছেন রাসেল। প্রতিটি প্যাকেটে চার কেজি চাল, দুই কেজি আলু, এক কেজি আটা ও হাফ কেজি করে ডাল দিয়েছেন তিনি। পরের ধাপে হ্যান্ড স্যানিটাইজারও রাখবেন। রাসেল বলছেন, 'আমি খুব বেশি কিছু দেইনি। চার কেজি চাল, এক কেজি আটা, দুই কেজি আলু, হাফ কেজি ডাল দিয়েছি প্রতিটি প্যাকেটে। আজ কিছু হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়েছে এক ছোট ভাই। এটা প্যাকেটে দিয়ে দিব।'
৫০০ পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার পর দায়িত্ব বেড়ে গেছে রাসেলের। অনেক জায়গা থেকেই সাহায্যের আবেদন আসছে। তাই নতুন করে আরও ১০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছেন তিনি, '৫০০ জনকে দেওয়া শেষ করেছি। আজও কিছু কেনাকাটা করলাম। অনেক ফোন আসছে, কেউ বাসার সামনে সাহায্যের জন্য যাচ্ছে। অনেকে লোকজনের মাধ্যমে সাহায্য যাচ্ছে। তাদের জন্য আরও কিছু প্রস্তুত করছি। আরও ১০০ জনকে দেয়া যায় কিনা, সেটার সেটা করছি।'
সরকারি অনুদান ভালোভাবে বিতরণ করলে আরও অনেকের কাছেই সাহায্য পৌঁছাত বলে মনে করেন রাসেল। তিনি বলেন, '৫০০ জন মানুষকে সাহায্য করব বলে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু ৫০০ তে হচ্ছে না। এখন আরও বেশি লাগবে। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী আমি চেষ্টা করেছি। সরকারিভাবে সাহায্য করছে। অনেক পাচ্ছে আবার অনেকে পাচ্ছে না। আরও ঠিকভাবে এটা বিতরণ করা উচিত। আমার এদিকে যারা দায়িত্বে, তাদের সাথে সেভাবে যোগাযোগ করতে পারিনি। এরপর নিজেই চেষ্টা করলাম।'
দুস্থ-অসহায়রা সাহায্য প্রার্থনা করতে পারলেও মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকেই সেটা পারেন না। তাদের কাছেও খাবার পৌঁছে দিতে চান তিনি। সর্বশেষ ২০১০ সালে জাতীয় দলের হয়ে খেলা রাসেল বলেন, 'জিনিসপত্র কিনে ফেলেছি আজ। প্যাকেট কিনতে পারিনি। কালকের মধ্যে করে ফেলব। সবাই কিন্তু সাহায্য চাইতে পারে না। মধ্যবিত্ত বা নিম্ন আয়ের অনেক মানুষই চাইতে পারে না। তাদেরকে আমি নিজে থেকেই দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি। এ ধরনের মানুষ যেন বেশি পায়, আমার সেই লক্ষ্য।'
করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাংলাদেশে বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৮০৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৩৯ জন। চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছেন ৪২ জন। সোমবার সবচেয়ে বেশি ১৮২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে।