কাল ভোট, কারা আসছেন বিসিবির নতুন পরিচালনা পর্ষদে?
রাত পোহালেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ভোট। বুধবার অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে বিসিবির ১৬টি পরিচালক পদে ৩১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। বিসিবিতে ২৫টি পরিচালক পদ থাকলেও সাতজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। এ ছাড়া দুজন পরিচালক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) দ্বারা মনোনিত হচ্ছেন।
বিসিবি নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ১৭৩ জন হলেও ভোট দেবেন ১২৭ জন। বিভিন্ন জেলা ও বিভাগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাওয়াতে সেখান কাউন্সিলদের ভোট দিতে হবে না। ১২৭ কাউন্সিলরের মধ্যে ৭০ জন স্বশরীরে এসে ভোট দেবেন। বাকিরা ই-ভোট ও পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেবেন। নির্বাচিতরা চার বছরের মেয়াদে দায়িত্ব নেবেন। ভোট গণনা শেষে রাতেই বুধবার রাতেই প্রাথমিক ফল জানানো হবে। পরদিন চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হবে।
বুধবার মিরপুরের বিসিবি কার্যালয়ের বোর্ড রুমে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে বোর্ড গ্রহণ। করোনার কারণে অনেক কাউন্সিলরই সরাসরি ভোট দিতে আগ্রহী নন। ৬৬ জন পোস্টাল ব্যালট এবং ৮ জন ই-ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ চেয়েছেন। এদের মধ্যে ৫৭ কাউন্সিলরকে সেই সুযোগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
মঙ্গলবার বিসিবি কার্যালয়ে নির্বাচন নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার এসএম কবিরুল হাসান বলেছেন, 'আমি এসেছি প্রস্তুতিটা দেখার জন্য, ব্যালট প্রস্তুত হল কিনা। ই-ভোট ও পোস্টাল ব্যালট আমরা ইতোমধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমাদের ভোট প্রক্রিয়া যখন সম্পন্ন হবে, তখন এগুলো উন্মুক্ত করব। বেসরকারিভাবে কালই ফল ঘোষণা করা হবে, আর সরকারিভাবে তার পরের দিন ফল পাওয়া যাবে।'
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মনোনিত দুটি পরিচালকের পদ ছাড়া ২৩টি পদের জন্য ৩২ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। দুজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এর মধ্যে একজন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার না করায় তার নাম ব্যালটে রয়ে গেছে। নির্বাচনের আগের দিন মঙ্গলবার আরেক জন প্রার্থী নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। তবে ব্যালটে প্রার্থীর সংখ্যাটা ৩১ জনই থাকছে। বিসিবির পরিচালনা পর্ষদে থাকবেন ২৫ পরিচালক। ২৩ জন পরিচালক নির্বাচিত হবেন তিনটি ক্যাটাগরি থেকে। আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি ও জালাল ইউনুস জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনয়নে আবারও বোর্ড পরিচালক হতে যাচ্ছেন।
২৩ পরিচালকের মধ্যে ৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। তারা হলেন -আ জ ম নাছির উদ্দীন ও আকরাম খান (চট্টগ্রাম বিভাগ), কাজী ইনাম আহমেদ ও শেখ সোহেল (খুলনা বিভাগ), শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল (সিলেট বিভাগ), অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম (রংপুর বিভাগ) ও আলমগীর খান আলো (বরিশাল বিভাগ)। এদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। বাকি ১৬টি পরিচালক পদে নির্বাচন হচ্ছে।
তিন ক্যাটাগরির মধ্যে ক্লাব ক্যাটাগরিতেই জমজমাট নির্বাচনের আভাস মিলেছে। সবচেয়ে বেশি ১২ জন পরিচালক নির্বাচিত হবেন এই ক্যাটাগরি থেকে। ১২টি পদের জন্য লড়বেন ১৬ জন প্রার্থী। ১৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষ দিনে শওকত আজিজ রাসেল নাম প্রত্যাহার করে নেন।
এই ক্যাটাগরিতে আবাহনী লিমিটেডের কাউন্সিলরশিপ নিয়ে নির্বাচন করছেন বিসিবির দুইবারের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। বাকিরা হলেন গাজী গোলাম মর্তুজা (গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স), নজিব আহমেদ (শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব), মাহবুব উল আনাম (মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব), মাসুদুজ্জামান (মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব), ওবেদ রশিদ নিজাম (শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব), সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া (ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাব), সালাহ উদ্দিন চৌধুরী (কাকরাইল বয়েজ ক্লাব), ইসমাইল হায়দার মল্লিক (শেখ জামাল ক্রিকেটার্স), এনায়েত হোসেন (আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব), ফাহিম সিনহা (সূর্য তরুণ ক্লাব), ইফতেখার রহমান (ফিয়ার ফাইটার্স স্পোর্টিং ক্লাব), মনজুর কাদের (ঢাকা এসেটস), মোহাম্মদ আব্দুর রহমান (মিরপুর বয়েজ ক্রিকেট ক্লাব), রফিকুল ইসলাম (গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমি) ও মনজুর আলম (আসিফ শিফা ক্রিকেট একাডেমি)। ৫৬ জন কাউন্সিলরের ভোটে ১২ জন পরিচালক পদে নির্বাচিত হবেন।
জেলা ক্যাটাগরিতে নির্বাচন করে আসার কথা ১০ পরিচালকের। কিন্তু সাত জেলায় প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পর এই ক্যাটাগরিতে তিনজনকে নির্বাচিত হয়ে আসতে হচ্ছে। ঢাকা বিভাগ থেকে দুজন এবং রাজশাহী বিভাগ থেকে একজন পরিচালক নির্বাচিত হবেন।
ঢাকা বিভাগের দুটি পরিচালক পদে চারজনের লড়ার কথা ছিল। গত ৩ অক্টোবর সরে দাঁড়ান খালিদ হোসেন। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার না করায় ব্যালটে তার নাম রয়ে গেছে। আঞ্চলিক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রতিনিধি ক্যাটাগরি-১ থেকে পরিচালক পদে মনোনয়নপত্র কেনেন মাদারীপুরের এই সংগঠক। দুই পদে বাকি তিন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তানভীর আহমেদ টিটু (নারায়ণগঞ্জ), নাঈমুর রহমান দুর্জয় (মানিকগঞ্জ) ও সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু (কিশোরগঞ্জ)। এই বিভাগে ১৮ জন কাউন্সিলর ভোট দেবেন। কিন্তু সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম মঙ্গলবার নির্বাচন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। সেই হিসেবে বলাই যায়, তানভীর আহমেদ টিটু ও নাঈমুর রহমান দুর্জয় পরিচালক পদে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।
নির্ধারিত সময়ের পর নাম প্রত্যাহার করা খালিদ হোসেনের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে এসএম কবিরুল হাসান বলেন, 'তারটা ব্যালটে চলে আসবে, কারণ প্রত্যাহারের যে সময়সীমা ছিল, তার পরে তিনি প্রত্যাহার করেছেন। যে কারণে তা ব্যালটে চলে আসবে। নির্বাচনে আসবেন কি আসবেন না, এটা একান্ত তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।'
রাজশাহী বিভাগে একটি পদের জন্য লড়বেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট। প্রথমবার তিনি পরিচালক পদে নির্বাচন করছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী, যিনি গত মেয়াদে বিসিবির পরিচালক ছিলেন।
তিন নম্বর ক্যাটাগরিতেও একটি পদের জন্য লড়বেন দুইজন। বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের সাবেক ন্যাশনাল ম্যানেজার ও বিকেএসপির বর্তমান ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজনের মধ্য থেকে একজন নির্বাচিত হবেন।