কোচদের পারিশ্রমিকে লজ্জিত সালাহউদ্দিন
ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট মানেই টাকার ঝনঝনানি। টাকার বস্তা নিয়ে দল গঠনে মাঠে নামে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। নিলাম হলে কখনও কখনও প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি পারিশ্রমিকে দল পান ক্রিকেটাররা। প্লেয়ার্স ড্রাফটেও ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক উন্নত পর্যায়েই হয়ে থাকে।
ক্রিকেটারদের মতো কোচরাও ভালো পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর ব্যাটে-বলে মিললেই কেবল দলের দায়িত্ব নেন কোচরা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ঘটেছে ব্যতিক্রম। কোচরা নিজেদের পারিশ্রমিক নিয়ে কথা বলার সুযোগই পাননি। বিসিবির ঠিক করে দিয়েছে পাঁচ দলের প্রধান কোচের পারিশ্রমিক। যে কারণে কোচদের পারিশ্রমিক সামান্যই থেকে গেছে।
কোচদের এভাবে মূল্যায়ন করায় চটেছেন গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের প্রধান কোচ মোহাম্মদ সালাহদ্দিন। কোচদের পারিশ্রমিক নিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেন স্থানীয় এই গুণী কোচ। পেছনের সময়ের মতো আর একবার কোচদের ভালোভাবে মূল্যায়ন করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
১৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ফাইনালে জেমকন খুলনার মুখোমুখি হবে সালাহউদ্দিনের দল গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম। এই ম্যাচের আগের আগেরদিন কোচদের পারিশ্রমিক নিয়ে কথা বলেন তিনি। যদিও এই টুর্নামেন্ট থেকে তিনি কোনো পারিশ্রমিক নিচ্ছেন না। গাজী গ্রুপে নিয়মিত চাকরির অংশ হিসেবে বিপিএল, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দল ও একাডেমির তত্ত্বাবধানে থাকেন তিনি।
নিজের পারিশ্রমিক নিয়ে চিন্তা না করতে হলেও অন্য কোচদের পারিশ্রমিকের পরিমাণ সালাহউদ্দিনকে চরম হতাশ করেছে। যে কারণে আর কাউকে কোচিং পেশায় আসার পরামর্শ দেবেন না বলে জানান তিনি। দেশের অন্যতম সেরা এই কোচ বলেন, 'আমি এখানে কোনো পারিশ্রমিক নিচ্ছি না। গাজী গ্রুপে আমি চাকরি করি। কোচের পারিশ্রমিকের ব্যাপারে আমি খুব লজ্জিত।'
'আমি সারাজীবনই চেয়েছি বাংলাদেশে যেন কোচরা আসে, আমার চাওয়া যারা কোচিং করতে আসে, এদের মধ্যে সাবেক খেলোয়াড়ের পরিমাণ বেশি হোক। চেয়েছি তারা যেন একটা ভালো স্ট্যাটাস নিয়ে বাঁচতে পারে। আমার কাছে মনে হয় এ ধরনের পারিশ্রমিকে কখনই কোনো ছেলেকে বলব না তোমরা কোচিংয়ে আসো।' যোগ করেন মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।
পাঁচ দলের প্রধান কোচের পারিশ্রমিক ধরা হয়েছে ৩ লাখ টাকা করে। যেখানে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে নিচের গ্রেডের ('ডি' গ্রেড) খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকও ৪ লাখ। এ নিয়ে হতাশার শেষ নেই সালাহউদ্দিনের। তিনি বলেন, 'এদেশে কোনো মূল্যায়ন হয় কিনা, আমি জানি না। দেখেন, আমরা 'ই' গ্রেডের মানুষ। 'ডি' গ্রেডের একটা খেলোয়াড় যা পাচ্ছে, তা কিন্তু একটা কোচও পাচ্ছে না।'
কোচদের এমন অভিজ্ঞতা অবশ্য এবারই প্রথম নয়। প্রারিশ্রমিক নিয়ে স্থানীয় কোচদের অভিযোগ বহু পুরনো। কিন্তু অভিযাগ বা অভিমানে কিছুই হয়নি। ঘরোয়া ক্রিকেটে তাদের পারিশ্রমিকের ব্যাপারটি অনেকটা আগের মতোই রয়ে গেছে।
প্রধান কোচদের পারিশ্রমিকের এই অবস্থা হলে সহকারী কোচ, ফিজিও, ট্রেইনারদের পারিশ্রমিক কেমন হতে পারে, সেটা অনুমান করা কঠিন কিছু নয়। প্রধান কোচ 'ই' গ্রেডের হলে অন্যদের গ্রেড কেমন হতে পারে সেটা জানাতে গিয়ে সাকিব আল হাসান-তামিম ইকবালদের প্রিয় এই কোচ বলেন, 'কেন আমি আরেকটা কোচকে বলব তুমি এই পেশায় আসো। আমরা 'ই' গ্রেডের মানুষ, সহকারী কোচরা হয়তো 'এফ' গ্রেডের মানুষ। ট্রেইনার 'জি', অথবা 'এইচ', এমন হবে আরকি।'
হতাশা ঝরলেও আরও একবার কোচদের ভালোভাবে মূল্যায়ন করার অনুরোধ জানালেন সালাহউদ্দিন, 'আমার মনে হয় সঠিক মূল্যায়ন করা উচিত। আমাদের কোচদের মূল্যায়ন না করা মানে হচ্ছে টিমের প্রতি আমাদের কোন ভূমিকা নাই। আমরা আসলে আছি শুধু একটা ম্যাচ চালিয়ে দিবো, একটা টুর্নামেন্ট চালিয়ে দিবো। এর বাইরে আমাদের আর কিছু করার নাই।'