ক্রিকেটে ফেরার আনন্দে সালমা-রুমানারা
অপেক্ষার প্রহর শেষ, মাঠের ক্রিকেট থেকে আর দূরে থাকতে হচ্ছে না নারী ক্রিকেটারদের। একদিন পরই সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুশীলনে নেমে পড়বেন জাতীয় নারী দলের ক্যাম্পে ডাক পাওয়া ক্রিকেটাররা। ৩২জন ক্রিকেটারকে নিয়ে সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে নারী দলের মাসব্যাপী ক্রিকেট ক্যাম্প।
শুরুতে ২৯ জনকে ডাকা হলেও পরে আরও চারজনকে যুক্ত করা হয়েছে ক্যাম্পে। এই চার ক্রিকেটার হলেন তাজিয়া আক্তার, সানদিয়া ইসলাম আশা, লাবণী আক্তার ও জিন্নাত আফিয়া অর্থি। সব মিলিয়ে ৩৩ জন হলেও ক্যাম্পে অবশ্য ৩২ ক্রিকেটার যোগ দেবেন। পারিবারিক কারণে একজন ক্যাম্পে যোগ দেবেন না বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন বিসিবির উইমেন্স উইংয়ের ইনচার্জ তৌহিদ মাহমুদ।
শনিবার ৩২ ক্রিকেটারসহ ১২ জন সাপোর্ট স্টাফের করোনা পরীক্ষা করেছে বিসিবি। শনিবার রাতেই ফলাফল পাওয়া যাবে। ফলাফলের ভিত্তিতে রবিবার সকালে সিলেটের উদ্দেশে রওনা দেবেন রুমানা-সালমারা। সিলেট স্টেডিয়াম, টিম হোটেলের সাপোর্ট স্টাফদেরও করোনা পরীক্ষা করিয়েছে বিসিবি। তাদের ফলাফল ইতিবাচক এসেছে বলে জানিয়েছে বিসিবি।
গত মার্চে বিশ্বকাপ খেলে দেশে ফিরে আর ম্যাচ খেলা হয়নি নারী দলের। করোনাভাইরাসের প্রকোপে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে সবাইকে। গত আগস্টে একক অনুশীলন শুরু করলেও সুযোগ হয়নি দলীয় অনুশীলনের। দীর্ঘ ১১ মাস পর সতীর্থদের সঙ্গে অনুশীলনের সুযোগ হচ্ছে নারী ক্রিকেটারদের। এতদিন পর সবার সঙ্গে দেখা, অনুশীলন করার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত ক্রিকেটাররা।
অলরাউন্ডার রুমানা আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে এতদিন পর মাঠে ফিরতে পারছি। এ কারণে অনেক খুশি। গত বছরে আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। কারণ অনেক খেলা ছিল, আশা ছিল অনেক কিছু করব। কিন্তু পরিস্থিতি যেহেতু খারাপ হয়ে গেছে, আমরা আক্ষেপ রাখতে চাই না। আমরা খুবই খুশি যে সবাই একসাথে অনুশীলন করব, এটার মজাই আসলে আলাদা। ক্যাম্পে যোগ দিতে পেরে আমরা সবাই আনন্দিত।'
দীর্ঘ বিরতির ঘাটতি এক মাসের ক্যাম্প দিয়ে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন রুমানা। ডানহাতি এই অলরাউন্ডার বলেন, 'দীর্ঘ এক বছরের বিরতি এক মাসের ক্যাম্প দিয়ে পোষানো সম্ভব নয়। তারপরও যতটুকু সম্ভব, আমরা নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব পুষিয়ে নেওয়ার। সবাই কম বেশি অনুশীলন করেছে। যদিও ক্যাম্পের অনুশীলন আর একক অনুশীলনের মধ্যে অনেক পার্থক্য। ফিটনেসে উন্নতি করতে পারলে স্কিলেও উন্নতি করা যাবে।'
মেয়েদের আইপিএল খ্যাত উইমেন্স টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জ খেলে দেশে ফেরার পর সবার সঙ্গে দেখা হয়নি অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার সালমা খাতুনের। ক্যাম্পে যোগ দিতে ঢাকা এসে সবার সঙ্গে দেখা হয়েছে তার। সতীর্থদের কাছ থেকে পেয়েছেন অভিনন্দন। এর সঙ্গে সতীর্থদের সঙ্গে ক্যাম্পে ফেরার স্বস্তি, সব মিলিয়ে সালমার কণ্ঠেও উচ্ছ্বাস।
ট্রেইলব্লেজার্সের হয়ে শিরোপা জেতা সালমা বলছেন, 'অনেক ভালো লাগছে। গতকাল আসার পর সবার সাথে দেখা হয়নি। আজ সকালে মোটামুটি অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সবাই আমাকে অভিনন্দন জানাচ্ছিল। যেহেতু আমি উইমেন্স টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জ খেলে আসার পর সবার সঙ্গে দেখা হয়নি। প্রায় এক বছর পর আমরা সবাই একসঙ্গে হলাম, ভালো লাগছে। ক্যাম্প শুরু হচ্ছে, সবার সঙ্গে দেখা হচ্ছে, মজা হচ্ছে; এ কারণে সবাই খুব খুশি ও আনন্দিত।'
রুমানার মতো সালমাও জানালেন, দীর্ঘ বিরতির ঘাটতি এক মাসে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, 'এক মাসে ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব নয়। আমরা সবাই নিজের বাসায় টুকটাক অনুশীলন করেছি বিরতির সময়ে। কোরবানির ঈদের পরে সবাইকে অনুমিত দেওয়া হয়েছে একক অনুশীলনের। তো সবাই কম বেশি অনুশীলন করেছি। তবু যে ঘাটতি থাকবে না এটা বলব না, ঘাটতি অবশ্যই থাকবে। কারণ এক সাথে অনুশীলন করা আর একক অনুশীলন করা পুরোপুরি ভিন্ন। ঘাটতি অবশ্যই থাকবে। আমরা চেষ্টা করব দ্রুত ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য।'
মাঠে ফিরবেন বলে রোমাঞ্চিত উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নিগার সুলতানাও। তার ভাষায়, 'ক্রিকেটে ফিরতে পারছি, এটাই সবচেয়ে সুখের খবর। ব্যক্তিগতভাবে যতই অনুশীলন করি না কেন, দলীয় অনুশীলনের অনুভূতিটা অন্যরকম। বেশি উপভোগ করা যায়, অনুশীলনও ভালো হয়। ঢাকার বাইরে আমরা যারা ছিলাম, তারা ব্যক্তিগত অনুশীলন করলেও সুযোগ-সুবিধা তেমন পাইনি। সেই ভাবনা থেকে আমি খুবই রোমাঞ্চিত। সিলেটে ভালো সুযোগ-সুবিধায় আমরা অনুশীলন করতে পারব।'
ক্যাম্প চলাকালীন নিজেদের মধ্যে পাঁচটি সীমিত পরিসরের অনুশীলন ম্যাচ খেলবেন রুমানা আক্তার, সালমা খাতুন, জাহানারা আলমরা। ক্যাম্প পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন নারী দলের সহকারী কোচ ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স।
ক্যাম্পে ডাক পাওয়া ক্রিকেটাররা হলেন: সালমা খাতুন, নিগার সুলতানা জ্যোতি, মুর্শিদা খাতুন, রুমানা আহমেদ, লতা মন্ডল, পান্না ঘোষ, সানজিদা ইসলাম, আয়েশা রহমান, ফারজানা হক পিংকি, জাহানারা আলম, নাহিদা আক্তার, রিতু মনি, খাদিজা-তুল কুবরা, ফাহিমা খাতুন, শামীমা সুলতানা, সোবানা মোস্তারি, রাবেয়া, পূজা চক্রবর্তী, মুমতা হেনা হাসনাত, সুরাইয়া আজমিম, নুহাত তাসনিয়া, শারমিন আক্তার সুপ্তা, শারমীন সুলতানা, ইসমা তানজিম, রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক, একা মল্লিক, ফারিহা ইসলাম তৃষ্ণা, সানজিদা আক্তার মেঘলা, সুমাইয়া আক্তার, তাজিয়া আক্তার, সানদিয়া ইসলাম আশা, লাবণী আক্তার ও জিন্নাত আফিয়া অর্থি।