গোল করা অবশ্যই দারুণ ব্যাপার, তবে শিরোপা আপনাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে: লুকাকু
চেলসিতে এসেই ফুটবল বিশ্বের নজরে পড়েছিলেন তিনি। এরপর ওয়েস্ট ব্রম, এভারটন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ইন্টার মিলানের হয়ে খেলেছেন। সব জার্সিতেই করেছেন গোলের পর গোল।
খেলোয়াড়ি জীবনের শিখরে পৌঁছে আবারও চেলসিতে ফিরেছেন ২৮ বছর বয়সী বেলজিয়ান ফুটবলার রোমেলু লুকাকু, ক্লাব রেকর্ড ৯.৭৫ কোটি ইউরোর (প্রায় ১১৩২ কোটি টাকা) দলবদল ফিতে। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের দ্বিতীয় অধ্যায়ে তার লক্ষ্য একটিই, শিরোপা জেতা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লুকাকু বলেছেন, নতুন করে কিছু প্রমাণ করার জন্য ইংল্যান্ডে ফিরে আসেননি তিনি। অতীতে নিজের শারীরিক গঠন, বলে ফার্স্ট টাচের মতো অনেক কিছু নিয়েই কথা শুনতে হয়েছে তার।
সমালোচকদের কথাতে অবশ্য কখনোই কান দেননি লুকাকু। জানালেন, এখনো দিচ্ছেন না। বললেন, 'দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার সঙ্গে একদম ছোটবেলা থেকেই অভ্যস্ত আমি। এটা নতুন কিছু না। মানুষের যা বলতে চায়, বলুক। তাদের মতামত দেওয়ার অধিকার আছে। আপনি সম্মান চাইবেন, কিন্তু তার জন্য অযথা লড়াই করার দরকার নেই। কারণ তা করতে গেলে শুধু শুধু নিজের শক্তি ক্ষয় হবে।'
নিজের মূল্যমান সম্বন্ধে ভালোই সচেতন লুকাকু। ২০১৪ সালে ক্লাবকে বিদায় বলে দেওয়ার সাত বছর পর এবার ফিরেছেন বিজয়ীর বেশে। রেকর্ড দামে এই বেলজিয়ানকে কেনার পিছনে চেলসির মূল উদ্দেশ্য একটিই, দলের গোলের সংকট নিরসন করা। লিগে টমাস টুখেলের দলকে শীর্ষ চারের লড়াই থেকে এক লাফে শিরোপার দৌড়ে নিয়ে যাবেন এই স্ট্রাইকার, সেই আশাই করা হচ্ছে এখন।
গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতলেও ঘরোয়া লিগে পুরো মৌসুমে চেলসির হয়ে ছয়টির বেশি গোল করতে পারেননি কেউই। সেজন্যই এই গ্রীষ্মে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দামি স্ট্রাইকারদের একজনকে দলে ভিড়িয়েছে লন্ডনের ক্লাবটি।
অ্যান্থনিয়ো কন্তের অধীনে গত দুই মৌসুমে সিরি আ'য় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন লুকাকু। গত মৌসুমে ইন্টারকে জিতিয়েছেন লিগ শিরোপাও।
এর আগে ২০১৭ সালে চেলসির ম্যানেজার থাকাকালীনও লুকাকুকে চেয়েছিলেন কন্তে। কিন্তু সেই দলবদল না হওয়ায় ইউনাইটেডে যোগ দিয়েছিলেন এই বেলজিয়ান।
ইউনাইটেডের হয়ে অনেক গোলের দেখা পেলেও কোচ ও ভক্তদের মন জয় করতে পারেননি তিনি। ২০১৯ সালে লুকাকুকে বিক্রি করে দিতে সম্মত হয় ইউনাইটেড ম্যানেজার ওলে গুনার সুলশার।
ইউনাইটেড থেকে ৭.৪ কোটি ইউরোর দলবদলে ইন্টারে পা রাখেন 'বিগ রোম'।
ইন্টারে এই দানবীয় গড়নের স্ট্রাইকারকে পুনর্জীবিত করেন কন্তে। লুকাকুর খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে মাঠে কৌশলগত সচেতনতা, অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আনেন ওই ইতালিয়ান কোচ।
ফলাফলটাও চোখে পড়ে সঙ্গে সঙ্গেই। আক্রমণভাগে আগের চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন লুকাকু। গত মৌসুমে ২৪টি গোল ও ১১টি অ্যাসিস্ট করে ইন্টারের লিগ জয়ের মূল কারিগর ছিলেন তিনিই।
লুকাকু বলেন, "আমি সবসময়ই সিরি আ'র মতো একটি লিগে খেলতে চেয়েছিলাম। অন্যরকম চাপ সেখানে। অ্যান্থনিয়ো কন্তে আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। জেতার জন্য কী কী প্রয়োজন সব শিখিয়েছেন আমাকে। ইতালিতে খেলার ধরন সম্পূর্ণ আলাদা। খুবই খুবই কৌশলী। প্রায় ম্যাচে আপনি শুধু একটিই সুযোগ পাবেন গোল দেওয়ার। সেই সুযোগ যদি কাজে লাগাতে না পারেন, তাহলে অনেক কঠিন হয়ে যায়। আমার দক্ষতা বাড়াতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এই দৃষ্টিভঙ্গি।"
'বাধা-বিপত্তি ঠেলে সামনে এগুতে পারলেই আপনি জিততে শিখবেন। কন্তে আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে চূড়ান্ত পর্যায়ে পারফর্ম করতে হয়। দ্বিতীয় মৌসুমে এজন্য বড় ম্যাচগুলোয় ধারাবাহিকভাবে জিতেছি আমরা,' যোগ করেন তিনি।
লুকাকু ইন্টারে খুশিই ছিলেন। কিন্তু ক্লাবের অর্থনৈতিক সংকট তার থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাকে প্রায় শূন্যের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে বাকবিতণ্ডার জন্যই ক্লাব ছেড়ে চলে যান কন্তে। আর সেই সুযোগে লুকাকুর দ্বারস্থ হয় চেলসি।
প্রথমবার যখন চেলসিতে এসেছিলেন, তখন ১৮ বছরের এক তরুণ ছিলেন লুকাকু। মূল দলে জায়গা না পেয়ে দুই বছর লোনে খেলেছেন ওয়েস্ট ব্রম ও এভারটনে। পরবর্তীকালে এভারটন স্থায়ীভাবেই কিনে নেয় তাকে।
লুকাকু বলেন, 'অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এসেছি আমি। এখন জানি, ভালো খেললে দলে জায়গা মিলবেই। ক্লাবের সঙ্গে আমার সম্পর্ক সবসময়ই ভালো ছিল এবং ফিরে আসার অনুভূতিটাও দারুণ।'
রোববার আর্সেনালের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে চেলসিতে দ্বিতীয় অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছেন লুকাকু। নতুন ম্যানেজার টুখেলের অধীনে খেলার ব্যাপারেও বেশ উচ্ছ্বসিত তিনি, "প্রতি ম্যাচে ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা থাকে তার। তার সঙ্গে প্রথম আলাপেই আমি এ কথা বলেছি। তাকে বলেছি, 'দলকে নিয়ে আপনি কী করেন এবং করার চেষ্টা করেন, সেটা বের করার চেষ্টা করেছি আমি। কিন্তু বের করতে পারিনি। কারণ প্রতি ম্যাচেই আলাদা গেমপ্ল্যান থাকে আপনার।'
আর এটাই আমার পছন্দ। কারণ প্রতিটা ম্যাচের কৌশলগত দিকগুলোই খেয়াল করি। শুধু দেখার জন্য দেখি না আমি।"
লুকাকু আরও বলেন, 'রেকর্ডের জন্য খেলব না আমি। শিরোপার জন্য খেলব। শিরোপাজয়ীদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কতটা আলাদা থাকে, সেটা খেয়াল করেছি। দিদিয়ের দ্রগবা, জন টেরি বা অ্যান্থনিয়ো কন্তের সঙ্গে কথা বলেই বুঝেছি, শিরোপাজয়ীদের জন্য অন্যরকম সম্মানবোধ রয়েছে আমার।'
'আমি নিজেও সবসময় এটাই চেয়েছি। শিরোপা জিততে মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম। ইন্টারে গিয়ে শেষ পর্যন্ত জিতেছিও। এখন আমার কাছে শুধু এটাই গুরুত্বপূর্ণ- শিরোপা জেতা। গোল দেওয়ার ব্যাপারটি অবশ্যই সুন্দর। আমি এমন এক জায়গায় আছি, এখান থেকে অনেক গোল করতে পারব। কিন্তু শিরোপা আপনাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে,' যোগ করেন এই তারকা ফুটবলার।
-
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান