গ্যালারির কেন এই হাল?
চেয়ার আছে কিন্তু তাতে বসার অবস্থা নেই। একটা ভাঙা তো আরেকটা উল্টে পড়ে আছে, বের হয়ে আছে লোহার পেরেক। কিছু কিছু গ্যালারিতে মাঝে মাঝেই চেয়ার উধাও, আবার কিছু অংশে নেই একটিও চেয়ার। ধাপে ধাপে বসানো সিড়িগুলো পড়ে আছে। আগে এখানেই বসতো দর্শকরা, কিন্তু এখন সেই সুযোগও নেই। চেয়ার বসানোয় লোহার কিছু অংশ রয়ে গেছে সেখানে। হাঁটতে গেলেও ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারির কী অবস্থা, উপরের বর্ণনাতেই সেটা স্পষ্ট। ২২ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার এই ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১০ হাজার দর্শক বসানোর অবস্থাও নেই। গ্যালারির এই কঙ্কালসার এই অবস্থাতেই সাগর পাড়ের স্টেডিয়ামটিতে ২৬ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যকার প্রথম টেস্ট।
গ্যালারির হাল দেখে যে কেউ হতাশ হয়ে পড়বেন। এরচেয়েও বড় হতাশার খবর ধারণ ক্ষমতার এক চতুর্থাংশেরও কম দর্শক খেলা দেখতে পারবেন চট্টগ্রাম টেস্টে। ৫ হাজার টিকিট ছাড়া হয়েছে। পূর্ব গ্যালারির উপরের অংশ, ক্লাব হাউস (পূর্ব), রুফ টপ হসপিটালিটি ও মিডিয়া সেন্টারের ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ড ছাড়া বাকি সব গ্যালারির গেট বন্ধ থাকবে। এটার অন্যতম কারণ গ্যালারির জীর্ণ দশা।
যদিও সেটা স্বীকার করলেন না জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ফজলে বারি খান। ভেন্যু ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা বিসিবির এই কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'করোনাভাইরাসের কারণে সামজিক দূরত্বের বিষয়টি মাথায় রেখেছি আমরা। যে কারণে ৫ হাজার দর্শক। পশ্চিম গ্যালারিতে কোনো দর্শক দিচ্ছি না। পূর্ব গ্যালারির ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক দেওয়া হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'চেয়ারগুলো বেশ আগে ভেঙে গেছে, কোভিডের আগেই লাগানোর কথা ছিল। আরএফএল কার্যাদেশ পেয়েছে। তাদের কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু কোভিডের কারণে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। আমরা আশা করছি, সম্ভবত আগামী বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) আগেই চেয়ার লাগানোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। বিসিবির তত্ত্বাবধানে চেয়ার বসানোর কাজটি হবে।'
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামটি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) মালকানাধীন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মালিক কিন্তু ব্যবহার করে বিসিবি। নিয়ম অনুযায়ী স্টেডিয়ামের যাবতীয় সংস্কার করার কথা ক্রীড়া পরিষদের। কিন্তু এদিকে কোনো নজরই দেয়নি তারা। দীর্ঘ সময় ধরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দিকে তাকিয়ে থাকার পর বাধ্য হয়ে বিসিবি সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছে।
একটা সময়ে জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে কোনো চেয়ার ছিল না। তখন ধাপে ধাপে বসানো সিড়ি সদৃশ জায়গাতেই বসে খেলা দেখতেন দর্শকরা। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ উপলক্ষে এই স্টেডিয়ামের আধুনিকায়ন করা হয়। গ্যালারির এক পাশ দোতলা করে পুরো স্টেডিয়ামে প্লাস্টিকের চেয়ার বসানো হয়। কিন্তু কয়েক বছর পর এসে গ্যালারির দিকে তাকানোর অবস্থা নেই। অন্তত আগামী বিপিএলের আগে এই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না।