ঘরে ক্যারম-লুডু, ছাদে ক্রিকেট খেলে সময় কাটছে বিশ্বজয়ীদের
বিশ্বজয় করে দেশে ফিরে বিশ্রামের জন্য খুব একটা সময় মেলেনি। বিভিন্ন ম্যাচে অংশ নিতে ঢাকা ফিরতে হয় যুব দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে। বঙ্গবন্ধু প্রিমিয়ার লিগে খেলছিলেন আকবর আলী, শরিফুল ইসলাম, তানজিদ হাসান তামিম, তৌহিদ হৃদয়রা। সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু থমকে গেছে। করোনা সতর্কতায় দেশের সব ধরনের ক্রিকেট
অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। অনুশীলন চালিয়ে নেয়ারও সুযোগ নেই। বিশ্বজয়ী যুবারা পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন, ঘরবন্দী অবস্থায় সময় কাটছে তাদের। ঘরে শুয়ে-বসে, সিনেমা দেখে সময় পার করছেন বাংলাদেশকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানো যুব দলের ক্রিকেটাররা।
কেউ ঘরে লুডু-ক্যারম-দাবা খেলছেন, কেউ আবার বাড়ির ছাদে ক্রিকেট খেলছেন। তবে সবাই ফিটনেসের দিকে মনোযোগী। যতটা সম্ভব ফিটনেস নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। পরিবারের সঙ্গে থাকলেও বেশিরভাগ ক্রিকেটার ঘরবন্দী অবস্থায় বিরক্ত হয়ে উঠেছেন। সঙ্গে আছে ক্রিকেটে ফেরার অনিশ্চয়তার অস্বস্তিও।
সঙ্কটময় এই অবস্থায় কীভাবে সময় কাটছে, সেসব নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন যুব দলের ক্রিকেটাররা।
আকবর আলী: আসলে সময় পার করাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বাসায় টিভিতে মুভি দেখেই বেশিরভাগ সময় কাটছে। এ ছাড়া পরিবারের সাথে কথা বলে, গল্প-গুজব করে সময় কাটাতে হচ্ছে। বাসায় থেকে ফিটনেসের যেসব ব্যায়াম করা সম্ভব, সেসব করে যাচ্ছি। কারণ খেলা না থাকলেও ফিটনেস নিয়ে তো কাজ করতেই হবে।
ক্রিকেট থেকে দূরে থাকা সত্যি অনেক কঠিন। এখন সেটা বুঝতে পারছি। সময় কাটে না বলে বাসায় দাবা খেলি। পরিবারের সাথে কার্ড খেলি।
সময়টা সত্যিই বেশ খারাপ। ভয় না, একটু হতাশার লাগছে এই সময়টা। খেলা কবে শুরু হবে বা আগামী দুই মাসেও শুরু হবে কিনা, এমনও নিশ্চয়তা নেই। তো এটাকে আসলে বিরক্তিকর সময়ই বলতে হবে।
শরিফুল ইসলাম: আসলে বিরক্ত লাগে অনেক। পেশাদার একজন ক্রিকেটার যদি মাঠে না থাকে তাহলে তার ভালো লাগে না। ফিটনেস নিয়ে কাজ করছি। সকালে রানিং করছি, বাসায় ফ্রি হ্যান্ডের কাজগুলো করছি।
সময় তো এখন অনেক। সময় ফুরানোর মতো কোনো কাজ নেই। বাসায় ক্যারম খেলা হয়। বাসায় ভাই আছে, মামা আছে। সবাই মিলে ক্যারম খেলি।
আমরা যদি সচেতন থাকি আর সব নিয়ম মেনে চলি, তাহলে আমরা খুব তাড়াতাড়ি মাঠে ফিরতে পারব। এটা আসলে শৃঙ্খলার ওপর নির্ভর করছে। দিক নির্দেশনা মানলে তাড়াতাড়ি করোনা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব। আর যদি সেটা না মেনে বাইরে যাই, আড্ডা দেই তাহলে এটা বাড়ার সম্ভাবনা আছে। আমার আশা, এটা কাটিয়ে আমরা তাড়াতাড়ি মাঠে ফিরব।
শাহাদাত হোসাইন: এখন তো আসলে কিছু করার নেই। সবখানেই একই অবস্থা। বাসার মধ্যেই সময় কাটছে। যতটুকু পারছি ফিটনেস ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। ফিটনেসের ছোট ছোট কিছু কাজ আছে, সেসব নিয়ে কাজ করছি। বাকি সব সময় অবসর।
ঘরে কোনো খেলা হচ্ছে না। তবে ক্রিকেট খেলছি। ছাদে গিয়ে ক্রিকেট খেলি। বেশ কয়েকজন মিলে ছাদে উঠে ছোট জায়গাতেই ক্রিকেট খেলি। দুই-তিনটার বাসায় কয়েকজন মিলে ক্রিকেট খেলি আমরা। আমার মামা, আমি, ভাইয়া; সবাই ক্রিকেট খেলি। পরিবারের বাইরের কারও সাথে খেলছি, তেমন নয়। কারণ এখন যে আগের মতো চলাফেরা করা যাবে না, সেটা বোঝাই যাচ্ছে।
শামীম হোসাইন: বাসাতেই সময় কাটছে। বাসা থেকে কখনই বের হচ্ছি না। শুধু ঘুম আর খাওয়া-দাওয়া। পাশাপাশি ফিটনেস নিয়ে কিছু কাজ করছি বাসাতেই। মুভি খুব একটা দেখা হয় না। আমি মুভি খুব একটা পছন্দ করি না।
আমি ইনুজুরড, ইনজুরি কাটিয়ে উঠতে কাজ করছি। এ কারণেও বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বাসাতেই সব কাজ করছি। এই সময়টা কিছুটা হতাশারই। তবে আমার জন্য এটা ভালোই হয়েছে। আমি একটু পায়ের বিশ্রাম পাচ্ছি। রিকভার করার জন্য সময় পাচ্ছি। আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন।
তানজিদ হাসান তামিম: বাসায় বসে থাকতে থাকতে জীবন শেষ। সময়টা বিরক্তিকর। এখন তো তেমন কিছুই করার নেই। বাসায় ফিটনেসের যেসব কাজ করা যায়, যেমন পুশ আপ, সিট আপ, অ্যাবসের কাজ; এসব করে সময় কাটাতে হচ্ছে। এ ছাড়া টিভি দেখছি, পরিবারের সাথে আড্ডা দিচ্ছি।
বাসায় আসলে খেলার তেমন সুযোগ নেই। আমার বোন ছিল, বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ওর পর থেকে সব মজা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন খেলার তেমন সুযোগ নেই।
কবে খেলায় ফিরতে পারব সেটা নিয়ে তো ভাবনা কাজ করেই। দেশের অবস্থা যে ভালো না সেটা বোঝাই যাচ্ছে। এই অবস্থা কেটে যাক, আবার খেলাই ফিরি; এখন সেটাই চাওয়া।
প্রান্তিক নওরোজ নাবিল: সত্যি বলতে বিরক্তির সাথে সময় কাটছে। ফোন ব্যবহার, টুকটাক পড়াশোনা আর নামাজ পড়ে সময় কাটছে। এ ছাড়া তো আসলে আর কোনো কাজ নেই। ফিটনেস নিয়ে কিছুটা কাজ করছি। হেভি ট্রেনিং করার সুযোগ নেই। যা যা করা সম্ভব, করে যাচ্ছি।
ক্রিকেট অনেক মিস করছি। অনেকদিন ক্রিকেট না খেলায় মনে হচ্ছে এখনই খেলাটা শুরু হলে ভালো হতো। তবে এটা তো কারো হাতে নেই। এ কারণে ধৈর্য ধরে আছি। আর সেই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছি আবার কবে ব্যাটটা নিয়ে একটু ব্যাটিং করতে পারব।
তানজিম হাসান সাকিব: বাসায় থেকেই সময় কাটছে। এখন বল মারছি দেয়ালের মধ্যে। অবস্থা আসলে এমনই। বেশিরভাগ সময় আসলে মুভি বা বই পড়ে কাটছে। বই পড়তে আমার অনেক ভালো লাগে। সকাল বেলা একটু ব্যায়ার করি।
রুমের মধ্যে যা করা যায়, ফিটনেসের সেসব বিষয় নিয়ে কাজ করছি। এ ছাড়া প্রচুর সাঁতার কাটি। পুকুর আছে, সাঁতার কেটে ফিটনেসের কাজে লাগাচ্ছি। আমি বাসাতেও ক্রিকেটই খেলি। ক্রিকেট ছাড়া কোনো খেলা নাই।
একটু তো খারাপ লাগছেই এমন সময় কাটাতে হচ্ছে বলে। কারণ ক্রিকেট ছাড়া অন্য কিছু তেমন ভালো লাগে না। ক্রিকেট খেলতে পারছি না বলে খারাপ লাগা কাজ করছে। প্রিমিয়ার লিগ চলছিল, একটা বড় প্ল্যাটফর্ম ছিল। অনেক পরিকল্পনা করেছিলাম, সেটাও কিছু করা হলে না। তো এটায় কিছু করার নেই। আমাদের কারও হাত নেই এখানে। মেনে নিতে হবে আর কি।
রাকিবুল হাসান: বাসায় থেকে সময় কাটানো ছাড়া উপায় নেই। পরিবারের সবার সাথে সময় কাটছে। আব্বু-আম্মু, ভাই-বোন আছেন, সবার সঙ্গে সময় কাটছে। পাশাপাশি ফিটনেসের কাজগুলো করছি। বাসায় বা বাসার ছাদে যেসব করা সম্ভব, সেসব করছি। এসব করেই সময় কাটছে। আমাদের ট্রেইনার ছিলেন রিচার্ড স্টয়নার, উনি শিখিয়েছেন যেসব, ওসব নিয়ে কাজ করছি।
বাসায় আসলে অনেক খেলা হচ্ছে। ক্যারম খেলি, দাবাটাও টুকটাক খেলা হচ্ছে। এ ছাড়া লুডুও খেলি। তবে এমন সময় তো কেউ চায় না। একটা শঙ্কার মধ্যে সবাইকে থাকতে হচ্ছে। আশা করি দ্রুতই যেন এই অবস্থা কেটে যায়, সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠুক।
পারভেজ হোসেন ইমন: সময়টা আসলে বিরক্তিকরই লাগছে। কোনো কাজ করতে পারছি না, অনুশীলন করতে পারছি না। এর মধ্যেই ফিটনেস নিয়ে কাজ করছি। ফিটনেসের যেসব বিষয় বাসাতেই করা যায়, সেসব নিয়ে কাজ করছি। এর বাইরে তেমন কিছু করা হচ্ছে না। বাসায় খেলা যায় এমন কোনো গেম আমাকে টানে না, তাই খেলতেও চাই না।
অবস্থাটা এমন যে কিছুই বুঝতে পারছি না। ঘর থেকে বের হতে পারছি না, কিছু করতে পারছি না। এটা খুবই বিরক্তির। কবে ক্রিকেট খেলতে পারব সেটা নিয়েই ভাবছি।
মাহমুদুল হাসান জয়: সব সময় বাসাতেই। অবস্থা আসলে একটাই। পরিবারের সাথে সময় কাটানো, ফোন ব্যবহার আর হাল্কা জিম করে সময় যাচ্ছি। ফিটনেসের কাজটাই কেবল করার মতো। আমাদের ট্রেইনার রিচার্ড স্টয়নার যেসব করাতেন, সেসব করছি। ভিডিও দেখে দেখে ওসব নিয়ে কাজ করছি।
এর বাইরে লুডুটা খেলা হয়। কিন্তু এসব করে আর কতদিন। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে এমন সময় পার করা সত্যিই কঠিন। ক্রিকেটে কবে থেকে ফিরতে পারব, সেটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই সময়টা আসলে হতাশার।
অভিষেক দাস: সব সময় বাসাতেই থাকা হচ্ছে। এ ছাড়া তো কিছু করার নেই। রুমের মধ্যে ফিটনেসের যেসব কাজ করা সম্ভব, সেসব করছি। এর বাইরে পরিবারের সবার সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি।
পরিবারের সবাইকে নিয়ে লুডু খেলছি, কার্ড খেলছি। আসলে কী করার। সময় তো পার করতে হবে। বাইরে যাচ্ছিই না। সব সময় বাসাতেই। সময় পার করারে মতো কোনো রাস্তা না থাকায় বাধ্য হয়ে লুডু খেলতে হচ্ছে। ক্রিকেটারদের জন্য এমন সময় বেশ কঠিন। আশা করি এই অবস্থা কেটে যাক, আবার খেলায় ফিরি।