জয়ের নায়ক ক্যাপ্টেন আকবর
টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যায়, ব্যাটিং করার সুযোগ হয় না আকবর আলীর। তার ব্যাটিং অর্ডার আসার আগেই নিশ্চিত হয়ে যায় দলের জয়। এবারের যুব বিশ্বকাপে আকবরের হয়তো আফসোসই হচ্ছিল দলের জয়ে অবদান না রাখতে পেরে। সেই আফসোস এখন নিশ্চয়ই নেই। এখন তিনি বিশ্বজয়ী অধিনায়ক। তার হাতেই উঠেছে সোনালী শিরোপা।
শিরোপা যুদ্ধে তার নামটি বড় অক্ষরে লেখা হয়েছে। অপেক্ষা করতে করতে এমন এক ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ হয়েছে যুব দলের এই অধিনায়কের, যেখানকার পথটা ছিল বড্ড এবড়ো-খেবড়ো। স্নায়ুক্ষয়ী লড়াইয়েও সেই পথে হোঁচট খাননি ১৯ বছর বয়সী বাংলাদেশের এই তরুণ তুর্কি। খাদের কিনারে চলে যাওয়া দলকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেছেন ঝলমলে আলোর মঞ্চে।
ক্রিকেটের প্রতি আকবরের নিবেদন সেই ছোটবেলা থেকেই। যে বয়সে বন্ধুদের ব্যাগ ভারী থাকতো খাতা-কলমে, সেই বয়সে ব্যাগে ক্রিকেট বল নিয়ে ঘুরতেন আকবর। যেন দুনিয়া বোঝার আগেই ক্রিকেট বুঝে ফেলেছিলেন রংপুরে জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটার।
ক্রিকেটে বসবাস করবেন বলে ছোটবেলাতেই মন স্থির করায় রংপুরের একাডেমিতে ভর্তি হয়ে যান আকবর। তার ক্রিকেটের পথটা সুগম করে দেন রংপুরের কোচ অঞ্জন সরকার। সেই পথ ধরে হেঁটে ২০১২ সালে বিকেএসপিতে সুযোগ মিলে যায় আকবরের। এরপর শুধু ক্রিকেট আর তার এগিয়ে যাওয়ার গল্প।
বাবা মোহাম্মদ মোস্তফার কাছ থেকেও সব ধরনের সমর্থন পেয়েছেন বাংলাদেশকে বিশ্বকাপের প্রথম শিরোপা এনে দেওয়া আকবর। যদিও একেবারে ছোটবেলায় পড়াশোনা ফাঁকি দেওয়ায় বাবার বকাঝকা শুনতে হয়েছে তাকে। কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি নিবেদন আর সফলতা দেখে ছেলেকে ক্রিকেট থেকে দূরে রাখার কথা কখনো ভাবেননি মোহাম্মদ মোস্তফা।
আকবর আজ বিশ্বজয়ী দলের অধিনায়ক। তার ঠাণ্ডা মাথার অধিনায়কত্বের প্রশংসা হচ্ছে সবখানে। এমন স্বীকৃতির পর তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতেই পারেন ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ সেরা ইনিংস খেলা আকবর। তার অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংসটিই যে বাংলাদেশকে শিরোপা এনে দিয়েছে, সে কথা বলাই বাহুল্য।
আকবর অবশ্য ম্যাচের পর নিজের কথা নয়, পুরো দল, কোচিং স্টাফদের পরিশ্রমের অধ্যায় মনে করালেন। ধারাভাষ্যকারকে বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, ‘স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। কোচিং স্টাফ এবং আমরা মিলে গত দুই বছর যে পরিশ্রম করেছি, এটা তার ফল। তারা যে সমর্থন দিয়েছেন, শুধু ধন্যবাদ দিয়ে সেই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা যাবে না।’
বিশ্বকাপ এখন বাংলাদেশের। আগামী দুই বছর যুবাদের ক্রিকেটের রাজা হিসেবে উচ্চারিত হবে বাংলাদেশের নাম। কিন্তু বিশ্বজয়ী অধিনায়ক হিসেবে আকবরের নাম উচ্চারিত হবে যুগ যুগ ধরে।