টেস্ট থেকে বাদ পড়ছেন মাহমুদউল্লাহ!
যুব দলের বিশ্বজয়ে সারা দেশে যখন আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে, জাতীয় দলে তখন বাজছে বিষন্ন এক সুর। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়ে আসা বাংলাদেশের টেস্ট ভাগ্যও বদলায়নি। হতশ্রী ব্যাটিং-বোলিংয়ে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে এক ইনিংস ও ৪৪ রানে হারে মুমিনুল হকের দল। এমন পারফরম্যান্সে টেস্ট দলকে নিয়ে নতুনভাবে ভাবছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
এই ভাবনায় রাখা হচ্ছে না জাতীয় দলের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। জানা গেছে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে বাংলাদেশ দলে জায়গা নাও মিলতে পারে তার। শুধু মাহমুদউল্লাহই নন, আরও কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটারকে নিয়ে নতুন করে ভাবছে বিসিবি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলে চার থেকে পাঁচটি পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে জানা যায়, মাহমুদউল্লাহকে যে রাখা হবে না- এটা জানিয়ে দেওয়ার ভার পড়েছে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর ওপর। সাদা বলের ক্রিকেটে মনোযোগ দেওয়ার কথাই আপাতত জানানো হয়েছে মাহমুদউল্লাহকে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে দুই-একদিনের মধ্যে।
টিম ম্যানেজমেন্ট সূত্র জানিয়েছে, দলের সবার পারফরম্যান্স নিয়েই হতাশ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ অন্য নীতি-নির্ধারকরা। বিশেষ করে মাহমুদউল্লাহর শারীরিক ভাষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাহমুদউল্লাহকে বেশ সাবলীল মনে হয়েছিল। ২৫ রান করা অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারকে উইকেটে থিতু দেখাচ্ছিল। তবু ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে নাসিম শাহর হ্যাটট্রিক বল জেনে শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন। এ কারণে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহর ক্রিকেটীয় জ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
অর্থাৎ, পারফরম্যান্সের চেয়ে মাহমুদউল্লাহর দায়িত্বহীনতার বিষয়টি বেশি হতাশ করেছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। তার মতো বাংলাদেশের প্রায় সব ক্রিকেটারই রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ব্যর্থ হয়েছেন। পারফরম্যান্সের হিসেব কষলে এই দল থেকে কাউকে নিয়েই সেভাবে ভাবার সুযোগ নেই।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি মাঠে গড়ানো টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু দুই ইনিংস মিলিয়েও (৪৪ ও ৩৮) তার রান ১০০ ছাড়ায়নি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান অধিনায়ক মুমিনুল হকের। তার দুই ইনিংসের যোগফল ৭১ রান। এর বাইরে মোহাম্মদ মিঠুন ৬৬, লিটন দাস ৬২ ও তামিম ইকবাল ৩৭ রান করেছেন দুই ইনিংস মিলিয়ে।
বোলিংয়েও মেলেনি স্বস্তি। ৩ উইকেট পাওয়া আবু জায়েদ রাহি শুধু শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন। পাকিস্তানের প্রথম দুটি উইকেটই নেন ডানহাতি এই পেসার। আরেক পেসার রুবেল হোসেন ৩ উইকেট পেলেও ততক্ষণে রান পাহাড়ে উঠে গিয়েছিল স্বাগতিকরা।
প্রথম দিকে অনেক খরুচে থাকা এবাদত হোসেন পরের দিকে ইকোনমি কমিয়ে আনলেও দলের হয়ে সেভাবে অবদান রাখতে পারেননি। একমাত্র স্পেশাল স্পিনার তাইজুল ইসলামও গড়পরতা বোলিং করে নেন ২টি উইকেট।
ব্যাটিং-বোলিংয়ে এমন বাংলাদেশকে দেখে সবচেয়ে বেশি বিরক্ত বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। এই বাংলাদেশকে অচেনা মনে হচ্ছে তার কাছে। তার বিরক্তির পরিমাণটা এতই যে, আকবরদের সংবর্ধনা দেওয়ার সংবাদ সম্মেলনেও জাতীয় দল নিয়ে হতাশা ঝেরেছেন।
বিসিবি সভাপতি বলেছেন, ‘এটা নিয়ে অবশ্যই বসে থাকব না। কাজ তো করতেই হবে। শ্রীলঙ্কা সফর, ত্রিদেশীয় সিরিজ, আফগানিস্তান টেস্ট, ভারতে টেস্ট সিরিজ, পাকিস্তান সিরিজ- সবখানেই একই কথা। উন্নতির কোনো আভাস দেখছি না। এটা আমাদের ভাবনায় আছে।’
এসবই তাকে পুরনো রূপে ফিরতে বাধ্য করছে বলে জানান বিসিবি সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমি এগুলো থেকে একটু সরে আসতে চেয়েছিলাম। গত দুই বছর ধরে বলছি, আমি আগের মতো সম্পৃক্ত না। এতদিনে ওদের শিখে যাওয়ার কথা। এখন মনে হচ্ছে, সব কিছুতেই সম্পৃক্ত হতে হবে এবং কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।’
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের মধ্যকার একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুশীলন ক্যাম্পে অংশ নেওয়ার কথা বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটারদের।