তামিম ও হৃদয়কে বগুড়ায় রাজসিক সংবর্ধনা
অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ক্ষুদে টাইগার তানজিদ হাসান তামিম ও তৌহিদ হৃদয়কে নিজ জেলা বগুড়ায় রাজসিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় শহরের বনানী মোড়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। এই সময় ক্রিকেটভক্ত শুভাকাঙ্ক্ষীরা স্লোগান দিয়ে তাদের প্রতি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি সাউথ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তোলে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব ১৯ দল। এবারই প্রথম বৈশ্বিক কোনো শিরোপা আসে যুবাদের হাত ধরেই। ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছিল তিন উইকেটে।
বিশ্বজয় করে বুধবার দেশে ফিরে আকবর আলীর নেতৃত্বাধীন অনুর্ধ্ব ১৯ দল। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই শুরু হয় সংবর্ধনার পালা। ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বরণ করে নেন ক্রিকেটারদের। রাতের পর্ব শেষ করে সকালে আর দেরি করেননি কেউ। যার যার গন্তব্যে ফিরেছেন সবাই। বিসিবির দেওয়া বিশেষ মাইক্রোবাসে বগুড়ায় ফিরেছেন হৃদয় ও তামিম।
বগুড়ায় এসেও এরকম সংবর্ধিত হবেন- ভাবেননি তৌহিদ হৃদয়। ‘অনুভূতিটা অসাধারণ। ভাবতে পারিনি এ রকমটা হবে। বগুড়ার ছেলে হিসেবে গর্ব হচ্ছে। দেশের জন্য একটা কিছু করতে পেরেছি ভাবতেই ভালো লাগছে।’ বলছিলেন অলরাউন্ডার হৃদয়।
খেলার সময় সিনিয়র ক্রিকেটারদের পাশে পাওয়ার কথাও জানান তিনি। বলেন, ‘আমাদের যখন খেলা চলছিল, তখন মুশফিক ভাই, সাকিব ভাই তাদের পেইজ থেকে আমাদের অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন। এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে।’
বগুড়ার সন্তান মুশফিকুর রহিমের পর এই প্রথম এত সম্মান বয়ে এনেছেন কেউ, এটাই অনেক বেশি অনুপ্রেরণা দিচ্ছে তৌহিদকে।
ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমের এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে বিশ্বকাপ জয়ের কথা। এখনও যেন স্বপ্ন মনে হচ্ছে সবকিছু। ‘আমরা যখন মাঠে জিতেছি কিংবা সাউথ আফ্রিকা ছেড়েছি, তখনও বুঝে উঠতে পারিনি কি করেছি। বিমানবন্দরে নেমে দেখি, আমাদের জন্য সবাই অপেক্ষা করছেন। তখন মনে হচ্ছিল আমরা সত্যিই দেশের জন্য কিছু করতে পেরেছি। এটা একটা অসাধারণ অনুভূতি। দেশে আসার পর বুঝলাম দেশের মানুষ কত আনন্দিত হয়েছে।’ বলছিলেন তামিম।
বড়দের আগেই স্বপ্নের শিরোপা ছুঁয়ে দেখার যে রোমাঞ্চ, তা স্পর্শ করেছে সবাইকেই। তামিম বলেন, ‘বড় ভাইয়েরা পারেননি, কিন্তু আমাদের হাতে উঠেছে বিশ্বকাপ শিরোপা। এটা অনেক গর্বের।’
বনানী মোড় থেকে তৌহিদ-তামিমকে নিয়ে যাওয়া হয় সাতমাথা চত্বরে। সেখানে সদ্য নির্মিত বঙ্গবন্ধু মঞ্চে আরও এক দফা সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাদের। সেখান থেকে ঘরের ছেলেরা ফেরে ঘরেন।
বুধবার থেকেই অপেক্ষা করছিলেন তামিমের বাবা-মা। এতদিন পর ছেলেকে পেয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি মা রেহেনা আক্তার। বুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছেন। চুমুতে ভরিয়ে দিয়েছেন সন্তানের মুখ। এ তো সাধারণ কোনো ছেলে নয়, এ যে বিশ্বজয় করে আসা সুপুরুষ! এ যে বড় আদরের ধন। মা-ছেলের মিলনের সেই দৃশ্যে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন চারপাশের সবাই। চোখের কোণে পানি জমে আনন্দে-গর্বে।
রেহেনা আক্তার বলেন, ‘এত দিন পর ছেলেকে কাছে পেলাম। তাও আবার বিশ্বকাপ জিতে এসেছে। আমার যে কত গর্ব হচ্ছে তা বলে বোঝাতে পারব না। আমার মন বলছিল, ওরা দেশের জন্য কিছু করবেই। আমি সবসময় দোয়া করেছি।’
‘সবার কাছে দোয়া চাই, যেন আমার ছেলেটা আরও বড় হয়। দেশের জন্য কিছু করতে পারে। যে কয়দিন আছে, আমি আমার কাছ ছাড়া করব না। ওকে খাইয়ে-দাইয়ে শুধু নিজের কাছেই রাখব।’ কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন বিশ্বজয়ীর মা।
তামিমের বাবা তোজাম্মেল হক দোয়া চেয়েছেন দেশবাসীর কাছে। বলেছেন, ‘আমার ছেলে বিশ্বকাপ জিতেছে। দেশকে ওর আরও অনেক কিছু দিতে হবে।আপনারা আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।’
তৌহিদ হৃদয়ের বাবা-মাও দোয়া চেয়েছেন সবার কাছে। তার বোন গুরুতর অসুস্থ থাকায় খুব বেশি সময় দিতে পারেননি তৌহিদ ও তার পরিবার।
বগুড়া জেলা ক্রীড়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মিলন বলেছেন, ‘অনুর্ধ্ব ১৯ দলের বিশ্বকাপ জয়ে আমরা আনন্দিত। আমাদের দুই ছেলে তৌহিদ ও হৃদয় যে খেলা দেখিয়েছে তাতে আমরা গর্বিত। খুব শিগগিরি আমরা ওদেরকে বড় ধরণের সংবর্ধনা দেব।’