পুরনো তাড়ায় মুশফিক
সবার আগে গিয়ে সবার পরে অনুশীলন শেষ করেন মুশফিকুর রহিম। দলের অনুশীলন থাক আর না থাক, মাঠে গেলে যাকে পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি; তিনি মুশফিক। নেটে সবচেয়ে বেশি সময় কাটান অভিজ্ঞ ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। তার নিবেদন, তাড়না উদাহরণযোগ্য। এসব ব্যাপারই তাকে দলের সেরা ব্যাটসম্যান বানিয়ে তুলেছে। সব সময়ই তার ব্যাটে থাকে রানের ছোঁয়া।
সেই মুশফিকই ব্যাট হাতে দীর্ঘদিন নিজের ছায়া হয়ে আছেন। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দুঃস্বপ্নের সময় কেটেছে তার। ২০০৮ সালের পর প্রথমবারের মতো দল থেকে বাদ পড়ার ঘটনা যেন তাকে তাতিয়ে দিয়েছে। তাই অনুশীলনে পুরনো সেই তাড়া ফিরিয়ে এনেছেন মুশফিক। প্রথম টেস্ট শুরুর আগে বুধবার দলের অনুশীলনের দেড় ঘণ্টা আগেই মাঠে হাজির হলেন তিনি, ব্যাটিংয়ে ঘাম ঝরালেন নেটে।
গত জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ে সফরে একমাত্র টেস্ট খেলে পারিবারিক কারণে দেশে ফিরে আসেন মুশফিক। ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ১১ রান করেন তিনি। এরপর দেশে ফিরে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে থাকেন বিশ্রামে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দলে ফেরা মুশফিকের ভালো সময় যায়নি।
কিউইদের বিপক্ষে পাঁচ টি-টোয়েন্টিতে মুশফিকের রান মাত্র ৩৯, দুই ইনিংসে রানের খাতাই খুলতে পারেননি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছিল তার স্বরূপে ফেরার মিশন। কিন্তু বিশ্ব আসরেও হাসেনি মুশফিকের ব্যাট। ৮ ম্যাচে ২০.৫৭ গড়ে ১৪৪ রান করেন বাংলাদেশের অন্যতম এই ব্যাটিং কাণ্ডারি।
এর প্রভাব পড়ে ঘরের মাঠে পাকিস্তান সিরিজের দল গঠনে। মুশফিককে টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বিশ্রাম বললেও মুশফিক এটাকে 'বাদ' দেওয়া ধরে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটের মতো টেস্টেও যেন খারাপ সময় না যায়, সেটা নিশ্চিত করতে সবার আগে অনুশীলনে নেমে পড়ছেন মুশফিক।
আগামী ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান প্রথম টেস্ট। এর দুদিন আগে বুধবার জহুর আহমেদে বেলা দেড়টা থেকে অনুশীলন ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু মুশফিক হাজির বেলা ১২টা বাজতেই। দেড় ঘণ্টা আগে মাঠে এসেই ব্যাট হাতে নেটে অনুশৗলনে নেমে পড়েন তিনি।
জহুর আহমেদের দক্ষিণ দিকে টানানো নেটে তিনজন থ্রোয়ার ব্যাটিং অনুশীলন শুরু করেন মুশফিক, চলে আধা ঘণ্টা। নিজেকে ফিরে পাওয়ার তাড়া থেকেই যে তার এই বাড়তি অনুশীলন, সেটা বলাই বাহুল্য। এ সময় কোনো বল ঠিকভাবে খেলতে না পারলে হতাশা প্রকাশ করছিলেন মুশফিক। পরবর্তীতে মূল অনুশীলনে স্পিনার-পেসারদের বিপক্ষে ব্যাটিং করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
লম্বা ক্যারিয়ারে সুইপ, স্লগ সুইপ, রিভার্স সুইপ খেলে বহুবার সাজঘরে ফিরেছেন মুশফিক। আবার এসব শটে রানের ফোয়ারাও বয়ে গেছে তার ব্যাটে। এদিনের অনুশীলনেও এসব শট অনুশীলন করতে দেখা যায় মুশফিককে। থ্রোয়ারদের বিপক্ষে নেটে ব্যাটিং শেষে সুইপ, স্লগ সুইপ নিয়ে কাজ করেন তিনি। এরপর যোগ দেন দলীয় অনুশীলনে।
অথচ এই মুশফিকই হয়ে গিয়েছিলেন দলছুট। টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়ার আভাস পেয়ে নিজেকে আলাদা করি নিয়েছিলন তিনি। মিরপুরে ঠিকই দলের সঙ্গে মাঠে গেছেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার, কিন্তু ব্যাটিং অনুশীলন চালিয়েছেন নিজের মতো করে, সেটা ছিল লাল বলে। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে ভালো করতে প্রস্তুতিটা তখনই শুরু করেন মুশফিক।
এবার সাদা বলের লড়াইয়ের আগে অনুশীলনে তাকে আলাদা হতে হয়নি, তবে রানে ফেরার তাড়া বাকি যে কারও চেয়ে তার মধ্যে বেশি। যদিও টি-টোয়েন্টির মতো টেস্টে ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি নন তিনি। সর্বশেষ তিন টেস্টে যথাক্রমে তার রান ৬৮*, ব্যাটিং করেননি, ৪০, ৪০, ১১ ও ব্যাটিং করেননি। নতুন ফরম্যাটে, নতুন ভেন্যুতে, ভালো করার আশায় বাংলাদেশ। যেখানে মুশফিকের লড়াইটা আগে নিজের সঙ্গে, পরে পাকিস্তানের বিপক্ষে।