ফাইনালের রেসে টিকে রইলো মাহমুদউল্লাহর দল
হারলেই বিদায়; টুর্নামেন্টের এই সহজ সমীকরণটাই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের জন্য হয়ে উঠেছিল চরম কঠিন কিছু। বিশাল চাপের বোঝা মাথায় নিয়ে তামিম একাদশের মুখোমুখি হয় মাহমুদউল্লাহ একাদশ। এমন ম্যাচেও অসময়ে খেই হারিয়েছে তারা। কিন্তু ইমরুল কায়েস, মাহমুদুল হাসানরা দলকে কক্ষপথচ্যুত হতে দেননি। পরে নেতার মতো ব্যাট চালিয়েছেন মাহমুদউল্লাহও।
সোমবার বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে তামিম একাদশকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে মাহমুদউল্লাহ একাদশ। এই জয়ে ফাইনালে রেসে টিকে রইলো মাহমুদউল্লাহর দল। দুই জয়ে নাজমুল একাদশের পরই তাদের অবস্থান।
একটি জয় পাওয়া তামিম একাদশ পরের ম্যাচে হারলে নাজমুল একাদশের সঙ্গে ফাইনালে উঠবে মাহমুদউল্লাহর দল। কিন্তু তামিমের দল জিতলে তিন দলের সমান চার পয়েন্ট করে হবে। রান রেটে এগিয়ে থাকায় ফাইনালে উঠবে নাজমুল একাদশ ও তামিম একাদশ।
সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে তামিম একাদশ। ভালো শুরু না হলেও ইয়াসির আলী রাব্বি ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের হাফ সেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটে ২২১ রান তোলে তামিমের দল। জবাবে ম্যাচের সেরা ব্যাটসম্যান মাহমুদুল হাসান জয় ও মাহমুদউল্লাহর হাফ সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় মাহমুদউল্লাহ একাদশ।
২২২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই খেই হারায় মাহমুদউল্লাহ একাদশ। দলীয় ৮ রানের মধ্যেই ফিরে যান দুই ওপেনার নাঈম শেখ ও লিটন কুমার দাস। সাইফউদ্দিন-মুস্তাফিজের বোলিং তোপে মাহমুদউল্লাহর দল তখন টালমাটাল। এমন সময়ে ত্রাতার ভূমিকায় দেখা দেন মাহমুদুল হাসান জয় ও ইমরুল কায়েস।
শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে অনেকটা পথ এগিয়ে দেন মাহমুদুল-ইমরুল। দলকে বিপদমুক্ত করেও অবশ্য হতাশা সঙ্গী হয় ইমরুলের। মাত্র এক রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৫৫ বলে ৭টি চারে ৪৯ রান করেন ইমরুল।
ইমরুলের বিদায়ের পর মাহমুদুলের সঙ্গে যোগ দিয়ে জুটি গড়ে তোলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৫৬ রান যোগ করেন এই দুই ব্যাটসম্যান। মাহমুদুলের বিদায়ে এই জুটি ভাঙে। বিশ্বজয়ী যুব দলের এই সদস্য ১০১ বলে ৬টি চারে ৫৮ রান করেন।
এরপর আর দিক হারায়নি মাহমুদউল্লাহর দল। নুরুল হাসান সোহানকে সঙ্গে নিয়ে দলকে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে দেন দুঃসময়ে সত্যিকারের নেতা হয়ে ওঠা মাহমুদউল্লাহ। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার ৮৭ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৬৭ রান করেন। এরপর সাব্বির রহমান দ্রুত ফিরলেও সোহান জয় তুলে নেওয়ার বাকি কাজটুকু সারেন। ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তামিম একাদশের সাইফউদ্দিন ৩টি উইকেট নেন। এ ছাড়া মুস্তাফিজ, খালেদ ও তাইজুল একটি করে উইকেট নেন।
এরআগে ব্যাট করতে নামা তামিম একাদশের শুরুটা হয় চরম এলোমেলোভাবে। তামিম ইকবালের দলে প্রথম আঘাতটি হানেন অসাধারণ বোলিং করা রুবেল হোসেন। দারুণ এক ডেলিভারিতে তরুণ তানজিদ হাসান তামিমকে পরাস্থ করেন তিনি। কিছুক্ষণ পর অধিনায়ক তামিমকে সাজঘর দেখিয়ে দেন মাহমুদউল্লাহর দলের আরেক পেসার আবু হায়দার রনি।
দুই ওপেনারকে হারিয়ে ধুঁকতে থাকা তামিম একাদশকে আরও চেপে ধরেন রুবেল। দারুণ ছন্দময় বোলিংয়ে ফিরিয়ে দেন এনামুল হক বিজয় ও মোহাম্মদ মিঠুনকে। ১৭ রানেই ৪ উইকেট হারানো দলকে পথ দেখানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা ইয়াসির আল রাব্বি ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন।
এই জুটি থেকে ১১১ রান পায় তামিম একাদশ। ছন্দময় ব্যাটিং করা ইয়াসির-অঙ্কনের জুটি আরও বড় হতে পারতো। কিন্তু রান আউটের শিকার হতে হয় ইয়াসিরকে। সাজঘরে ফেরার আগে ৮১ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৬২ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। অঙ্কনও কিছুক্ষণ পর বিদায় নেন। রুবেলের চতুর্থ শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ১১০ বলে ৩টি চার ২টি ছক্কায় ৫৭ রান করেন তরুণ এই ব্যাটসম্যান।
এরপর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে তামিমের দলের রানাচাকা ঘুরিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। মোসাদ্দেক ৪০ ও সাইফউদ্দিন ৩৮ রান করেন। ৩৪ রান খরচায় ৪ উইকেট নেন রুবেল হোসেন। এ ছাড়া এবাদত হোসেন ২টি ও আবু হায়দার রনি একটি উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
তামিম একাদশ: ২২১/৮ (ইয়াসির ৬২, অঙ্কন ৫৭, মোসাদ্দেক ৪০, সাইফউদ্দিন ৩৮; রুবেল ৪/৩৪, এবাদত ২/৬০, আবু হায়দার ১/৪০)।
মাহমুদউল্লাহ একাদশ: ৪৯.১ ওভারে ২২২/৬ (মাহমুদুল হাসান ৫৮, ইমরুল ৪৯, মাহমুদউল্লাহ৬৭, সোহান ২৬* ; সাইফউদ্দিন ৩/৪৯, মুস্তাফিজ ১/৫৩, খালেদ ১/৩৯)।
ফল: মাহমুদউল্লাহ একাদশ ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা: রুবেল হোসেন (মাহমুদউল্লাহ একাদশ)
সেরা ব্যাটসম্যান: মাহমুদুল হাসান জয় (মাহমুদউল্লাহ একাদশ)
সেরা বোলার: রুবেল হোসেন (মাহমুদউল্লাহ একাদশ)
সেরা ফিল্ডার: লিটন কুমার দাস (মাহমুদউল্লাহ একাদশ)