মেসি বনাম রোনালদো: কাতার বিশ্বকাপেই কি দুজনের দ্বৈরথের সমাপ্তি ঘটল?
লিওনেল মেসি এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো; বর্তমান প্রজন্মের ফুটবলপ্রেমীদের কাছে বিস্ময়, মুগ্ধতা, আবেগ ও ভালোবাসার নাম। একসময় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার দুই কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে-ম্যারাডোনা দ্বৈরথ যেমন বিশ্ব কাঁপিয়েছে, তেমনই মেসি-রোনালদোর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতাও কোটি ভক্তের হৃদয়ে উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছে। লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার ক্ষুদে জাদুকর, অন্যদিকে পর্তুগিজদের কাছে যুবরাজ রূপে হাজির ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দুজনেই খেলেছেন স্পেনের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই ক্লাব বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, এল-ক্লাসিকোতে বার্সা-রিয়াল মুখোমুখি হওয়া মানেই ছিল মেসি-রোনালদোকে একই মাঠে খেলতে দেখার উত্তেজনা, যে উত্তেজনায় রাতের ঘুম ভুলে যেতেন দর্শক-সমর্থকরা!
জাতীয় দল এবং ক্লাব পর্যায়ের পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে দেখা যায়, মেসি আর রোনালদো যেন সারাক্ষণ তাড়া করছেন একে অপরকে; একজন আরেকজনকে হারিয়ে দেওয়ার নেশায় ছুটছেন! কিন্তু ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের সেরা দুই তারকার মধ্যে কী শুধুই দ্বন্দ্ব? দুজনেরই কী কিছু অপূর্ণতা নেই? দুজনের মধ্যে কী কোনো মিল নেই? প্রকৃত ফুটবলপ্রেমীরা বরং বলতে পারেন, লিওনেল মেসি এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো নিজেরাই একে অপরকে পরিপূর্ণ করেছেন; বানিয়েছেন সর্বকালের সেরা!
মেসি ও রোনালদোর মধ্যে কেমন যেন একটা অদ্ভুত সংযোগ রয়েছে। ক্লাব পর্যায়ে আকাশচুম্বী সাফল্য, কোনো শিরোপা জিততে বাদ রাখেননি; অথচ জাতীয় দলের হয়ে দুজনেরই জেতা হয়নি বিশ্বকাপ। এই একটিমাত্র অপূর্ণতা কুরে কুরে খেয়েছে দুজনকে, আর চলমান কাতার বিশ্বকাপে দুজনেই নেমেছেন সেই অধরা স্বপ্নকে স্পর্শ করতে। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কোর কাছে হেরে ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে রোনালদোর সেই স্বপ্ন; অন্যদিকে মেসি তার আর্জেন্টিনাকে নিয়ে পৌঁছে গেছেন সেমিফাইনালে। কিন্তু মেসিও যদি শেষ পর্যন্ত না পারেন! তাহলে বুকভরা হতাশা ও সেই সীমাহীন অপূর্ণতা নিয়েই ক্যারিয়ারের শেষ করতে হবে তাকেও। ফুটবল নামক ছোট্ট চর্মগোলক নিয়ে বিশ্বকাপ আসরে আর দেখা যাবে না এই দুই মহানায়কের জাদু!
কাতার বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নক-আউট ম্যাচে গোল করেন লিওনেল মেসি। এর আগে বিশ্বকাপে মেসির গোল থাকলেও নক-আউট পর্বের ম্যাচে ছিল না; এদিকে প্রথমার্ধ বেঞ্চে থেকে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামা রোনালদো এবারও নক-আউট পর্বে গোল পাননি। শনিবার আফ্রিকান সিংহ মরক্কোর কাছে ১-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছে পর্তুগাল, আর মাঠ থেকে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় নিয়েছেন সিআরসেভেন।
কিন্তু এই দুজনের আগে-পরের ইতিহাস লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আগের কোনো ম্যাচে মেসি যা ই করেছেন, রোনালদোও তাই করেছেন; কিংবা এর উল্টো! ২০০০-এর দশক থেকে ফুটবলের দৃশ্যপটে হাজির হওয়ার পর থেকে মেসি-রোনালদোর লক্ষ্য যেন অনেকটা এরকম- "তুমি যা করবে, আমি তার চেয়ে ভালো কিছু করবো!" আর সে কারণেই একের পর এক রেকর্ড গড়া-ভাঙার মতো ক্যারিশমা দেখিয়ে যাচ্ছেন দুজনে, যা আজও থামেনি।
২০০৬ সাল, বিশ্বকাপে প্রথম গোল
২০০৬ সালে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপ। আইভরি কোস্টের বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতে 'সি' গ্রুপে নিজেদের যাত্রা শুরু করেছিল আর্জেন্টিনা। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে সার্বিয়া ও মন্টেনিগ্রোর বিপক্ষে মাঠে নামেন ১৮ বছর বয়সী তরুণ বার্সা ফরোয়ার্ড মেসি এবং বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোলটি করেন। একদিন পরেই 'ডি' গ্রুপে পর্তুগাল মাঠে নামে ইরানের বিপক্ষে। ২-০ গোলের জয়ে একটি গোল ছিল ২১ বছর বয়সী রোনালদোর এবং সেটিই ছিল তার প্রথম বিশ্বকাপ গোল। শুরু থেকেই যেন প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে একে-অপরের মুখোমুখি ইতিহাস গড়তে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন মেসি-রোনালদো!
২০০৭-০৯: ব্যালন দ'অর লড়াই
তরুণ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো প্রথম খ্যাতি পেয়েছিলেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের অধীনে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলে। ক্লাবটির হয়ে ২০০৭-০৮ মৌসুমে ৩১ গোল, সাথে আরও ৮ গোল নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয় এবং আরও ৪ গোল করে পর্তুগালকে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌছে দেওয়ার মাধ্যমে ওই বছরের ডিসেম্বরে প্রথম ব্যালন দ'অর জিতেন রোনালদো। ওই একই মৌসুমেই প্রথমবার একে অন্যের প্রতিপক্ষ হয়ে খেলেন মেসি-রোনালদো।
২০০৮-০৯ মৌসুমে পেপ গার্দিওলা বার্সেলোনার কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জ্বলে উঠতে শুরু করেন মেসি। মৌসুম শেষে গার্দিওলা ট্রেবল জেতেন, আর এর মূলনায়ক হিসেবে মৌসুমে মেসি করেছিলেন ৫৭ গোল ও অ্যাসিস্ট। এর মধ্যে ইতালির রোমে রোনালদোর ম্যানইউর বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে হেডে দেওয়া একটি গোলও ছিল। চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার ছয় মাস পরেই প্রথমবারের মতো ব্যালন দ'অর জেতেন মেসি।
২০১০: বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব
২০০৬ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে পেনাল্টিতে হেরে যাওয়ার পর ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে আকাশি-সাদাদের কোচের দায়িত্বে ছিলেন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা। এই টুর্নামেন্টে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে প্রথম আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হয়ে দলকে ১-০ গোলে জয় এনে দেন মেসি। এর তিন দিন পরেই আইভরি কোস্টের বিপক্ষে ম্যাচে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরেন রোনালদো, যদিও ওই ম্যাচ ০-০ ড্র হয়েছিল। আর রোনালদো ততদিনে বিশ্বসেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়। ম্যানইউ থেকে রেকর্ড ৮০ মিলিয়ন পাউন্ডে স্প্যানিশ ক্লাবটিতে এসেছিলেন তিনি।
তবে ২০১০ বিশ্বকাপেও মেসি-রোনালদোর দল কোয়ার্টার ফাইনাল পেরোতে পারেনি। সেবার বিশ্বকাপ জিতেছিল স্পেন।
ক্লাব পর্যায়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই
স্প্যানিশ ফুটবলে এসেই নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, এদিকে মেসি তো শৈশব থেকেই বার্সার একাডেমিতে গড়ে ওঠা তারকা। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে বিখ্যাত ৭ নম্বর জার্সি নিজের দখলে নেয়ার পর থেকে একেই নিজের ট্রেডমার্ক করে ফেলেন সিআরসেভেন। ২০১০-১১ মৌসুমে নিজেকে নিয়ে যান অনন্য মাত্রায়।
২০১০-১১ মৌসুমে রিয়ালের হয়ে রোনালদোর গোলসংখ্যা ছিল ৫৩। এর মধ্যে লা লিগায় ৪০টি গোল করে স্প্যানিশ লিগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের ৬০ বছরের রেকর্ড ভাঙেন রোনালদো। পরের মৌসুমেই ৪৬ গোল করে আরেক রেকর্ড... এদিকে মেসিও পিছিয়ে নেই; ৫০ গোল ও ১৯ অ্যাসিস্ট নিয়ে বরং এগিয়েই ছিলেন আর্জেন্টাইন জাদুকর।
২০১১-১২ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে ১৪ গোল করে প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডধারীর সঙ্গে সমতায় বসেন মেসি। ২০১৩-১৪ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম ম্যাচেই গালাতাসারেই এর বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে দুর্দান্তভাবে মৌসুম শুরু করেন রোনালদো। কিন্তু একদিন পরেই মেসি তার জবাব দেন ক্যাম্প ন্যুতে আয়াক্সের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে। এরপর তো গোলের পর গোল চলতেই থাকে দুজনের... মৌসুমে খেলার গতিও পাল্টাতে থাকে...এবং রিয়াল মাদ্রিদ তাদের লা দেসিমা জয়ের দিকে এগিয়ে যায়। ফাইনালে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে মোকাবিলা করে লস ব্লাংকোরা, ৪-১ গোলে তাদের পরাজিত করে শিরোপা জয় করে রিয়াল। ফাইনালেই রোনালদো চ্যাম্পিয়ন লিগে নিজের ১৭তম গোলটি করেন এবং এর মাধ্যমে দুই মৌসুম আগে মেসির গড়া রেকর্ড ভেঙে দেন।
লা লিগায় বার্সা-রিয়াল ৮৭ পয়েন্ট নিয়ে শেষ করলেও, তিন পয়েন্ট আগে নিয়ে লিগ শিরোপা ওঠে অ্যাটলেটিকোর হাতে।
২০১৪-১৫ মৌসুমেও দুজনেরই গোলের পাহাড় বাড়তে থাকে। ডিসেম্বরে ২৯ বছর বয়সী রোনালদো তার ২০০তম লা লিগা গোল করেন সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে। পরদিন এস্পানিওলের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক গোল করেন মেসি।
২০১৬ সালে পর্তুগালের হয়ে প্রথমবারের মত বড় কোনো শিরোপা জেতেন রোনালদো। মেসি তখনো নিজ দেশের মানুষকে সন্তুষ্ট করতে পারেননি তার অর্জন দিয়ে। ইউরোতে ফ্রান্সকে হারিয়ে দলকে শিরোপা এনে দেন সিআরসেভেন। মেসি-রোনালদোর হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতার বছরখানেক বাদে এসেছিল এই টুর্নামেন্ট।
জানুয়ারির শেষ দিকে ক্যারিয়ারের অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে ম্যাচে বার্সার হয়ে গোল করেন। এসময় তার ও রোনালদোর সম্মিলিত গোলের সংখ্যা ১০০০। তবে একদিন বাদেই রোনালদো এটিকে ১০০৩ এ রূপ দেন এস্পানিওলের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে। বার্সেলোনা যখন বিগত আট বছরের মধ্যে তাদের ষষ্ঠ লা লিগা শিরোপার লক্ষ্যে এগোচ্ছে, মেসি তখন ৩ মার্চ সপ্তম হ্যাটট্রিক করেন রায়ো ভায়োকানোর বিপক্ষে। যদিও দুদিনের বেশি স্পটলাইটে থাকতে পারেননি তিনি, এরপরেই সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে চার গোল করেন রোনালদো। ওই মৌসুমে আবারও জিনেদিন জিদানের অধীনে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে রিয়াল মাদ্রিদ। এরপরে আরও দুইবার রিয়ালকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিয়েছেন জিদান।
পর্তুগালকে ইউরো শিরোপা এনে দেওয়া এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ বিজয় মিলে রোনালদো হয়ে ওঠেন ২০১৬ সালে ব্যালন দ'অর জয়ের অন্যতম দাবিদার... আর জিতেছেনও তিনিই। এদিকে পরের ২০১৬-১৭ মৌসুমে আবার নতুন করে যাত্রা শুরু করেন মেসি, সেল্টিক ও ম্যানসিটির বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচেই করেন হ্যাটট্রিক গোল। সার গোল নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে ইতিহাস গড়েন মেসি।
উল্লেখযোগ্যভাবে, রোনালদো সেই মৌসুমে টানা দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ হ্যাটট্রিক করতে সক্ষম হন। প্রথমটি কোয়ার্টার ফাইনালের নির্ধারক ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে এবং দ্বিতীয়টি সেমিফাইনালের প্রথম লেগে অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে, পাঁচ মাস আগে মেসি যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রেকর্ড গড়েছিলেন, তার সমান হয়ে যায় তার স্কোর। (এখন দুজনেরই গোল সংখ্যা ৮)
গোলের ধরনের দিক থেকেও কেউ কারো কম যান না! অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ২০১৮ সালের ৪ মার্চ করা গোলটি দেখলে মনে হবে বছরের সেরা গোল করেছেন মেসি। কিন্তু এক মাস পরেই রোনালদোর ওভারহেড কিকে করা গোলটিও ওই প্রতিযোগিতার সেরা গোল।
এরপর রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে ২০১৮-১৯ মৌসুমে রোনালদো জুভেন্টাসের হয়ে খেলা শুরু করেন। শেষ ষোলোতে পুরনো প্রতিপক্ষ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে প্রথম লেগে ২-০ গোলে হারার পর পর্তুগিজ যুবরাজ তুরিনে আরেকটি হ্যাটট্রিক করে ইতালীয় ক্লাবটিকে অ্যাগ্রিগেটে ৩-২ ব্যবধানে পাঠান।
পরেরদিন রাতে আর্নেস্তো ভালভার্দের দল ফরাসি ক্লাব লিঁওর বিপক্ষে খেলায় বার্সেলোনার ঐ মৌসুমে শেষ আটে পৌঁছানোর সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ ছিল। প্রথম লেগে বার্সেলোনাকে ০-০ গোলে ধরে রেখেছিল লিঁও। তাই এবার ত্রাণকর্তা হলেন মেসি। ক্যাম্প ন্যুতে বার্সেলোনা তাদের হারায় ৫-১ গোলে, মেসি করেন দুটি গোল এবং আরও দুটি গোলে সহায়তা করেন।
কাতার বিশ্বকাপই কি শেষ?
বর্তমানে মেসি-রোনালদো দুজনেরই বয়স যখন ত্রিশের কোঠার মধ্যভাগে, তাদের অদ্ভুত রেকর্ড-ব্রেকিং এবং গোল করার দিনগুলোও অবসান ঘটতে চলেছে। ২০১৯-২০ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোতে রোনালদোর সেরা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও জুভেন্টাস লিঁওর কাছে হেরে যায়, দ্বিতীয় লেগে রোনালদো দুটি গোল করেছিলেন।
এর একদিন পরে নাপোলির অর্ধেক ডিফেন্সকে পরাহত করে, ড্রিবলিং করে এবং নিচের কোণে একটি শট নিয়ে জাদুকরী এক গোল করেন মেসি। তার দল ৩-১ জয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে, রোনালদো আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে দুই গোল করে পর্তুগালের হয়ে ১১১ গোলের রেকর্ড গড়েন। এসময় একই ধরনের শিরোনামে জায়গা করে নিতে পুরো এক সপ্তাহ সময় নিয়েছিলেন মেসি। আর্জেন্টিনার হয়ে তার ৭৯তম গোল তাকে আন্তর্জাতিক ম্যাচে সর্বকালের সেরা দক্ষিণ আমেরিকান গোলদাতা করে তোলে।
বিশ্বকাপে ইতোমধ্যেই রোনালদোর অধ্যায়ের ইতি টানা হয়ে গেছে বলে ধারণা করছেন ফুটবলবোদ্ধারা। আর্জেন্টিনাকে সেমি-ফাইনালে নেতৃত্ব দেওয়ার অপেক্ষায় মেসি। ফাইনালে পৌঁছে জয়ী হতে না পারলে মেসিও আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেবেন এমনটা প্রায় নিশ্চিত। পিএসজিতে এখনও মেসি বহাল তবিয়তে টিকে থাকলেও, ক্লাবে রোনালদোর ক্যারিয়ার এখন একেবারেই নড়বড়ে।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে বিতর্কিত বিদায়ের পর রোনালদো এখন ফ্রি এজেন্ট; তাকে নেওয়ার প্রতি ইংলিশ, স্প্যানিশ বা ইতালিয়ান কোনো ক্লাবই আগ্রহ দেখাচ্ছে না। রোনালদো খ্যাতনামা কোনো ক্লাবে গেলে হয়তো এই দুজনের পরিসংখ্যান আরও দীর্ঘায়িত করা যাবে, কিন্তু ভক্তরাও মনে করছেন কাতার বিশ্বকাপেই ফুটবলের এই 'সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বৈরথের'র সমাপ্তি ঘটবে।
কিন্তু মেসি-রোনালদোর চিরাচরিত দ্বন্দ্ব ছাপিয়ে গত ১৫ বছর ধরে যে নির্মল আনন্দ-উত্তেজনা তারা আমাদের দিয়েছেন, যেভাবে প্রজন্মকে ফুটবল ভালোবাসতে শিখিয়েছেন, লাখো মানুষের আদর্শ হয়ে উঠেছেন; তাতেই বোঝা যায় লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো নাম দুটি কত বৃহৎ, কতটা শক্তিশালী! আমরা ভাগ্যবান যে আমরা মেসি-রোনালদোর সময়ে জন্মেছিলাম!