আর্জেন্টিনা ও মেসির হাসিমুখের পেছনের কারিগর যিনি
২০১৮ বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর যখন এক ভাঙাচোরা আর্জেন্টিনা দলের দায়িত্ব নিলেন, তখন কজনই বা চিনতেন তাকে! অবশ্য চেনার কথাও না। বয়সভিত্তিক দলের কোচ থেকে সরাসরি আর্জেন্টিনার মতো জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়া, তাও আবার এর আগে কখনো পেশাদার ফুটবলে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা শূন্য। পাহাড় সমান চাপ নিয়েই এসেছিলেন লিওনেল স্কালোনি।
সেই স্কালোনিই এখন ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। ২০১৪ বিশ্বকাপে খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন আলেহান্দ্রো সাবেলা। তবে শেষ ধাপ টা পেরোতে পারেননি। স্কালোনিও দাঁড়িয়ে আছেন একই জায়গায়। আর একটা ধাপ অতিক্রম করতে পারলেই আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসে তার নাম চিরস্থায়ী হয়ে থেকে যাবে।
লিওনেল মেসির এটি পঞ্চম বিশ্বকাপ, প্রত্যেক বিশ্বকাপেই ভিন্ন ভিন্ন কোচের অধীনে খেলেছেন তিনি। স্কালোনির গোছানো দলের মতো আর কোনোটি মেসি পেয়েছেন কিনা, সেটি বড় একটি প্রশ্ন।
২০০৬ বিশ্বকাপে হোসে পেকারম্যান, ২০১০ বিশ্বকাপে দিয়েগো ম্যারাডোনা, ২০১৪ বিশ্বকাপে আলেহান্দ্রো সাবেলা আর ২০১৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কোচ ছিলেন হোর্হে সাম্পাওলি। কেউই পারেননি ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জেতার পর আর্জেন্টিনার আর বিশ্বকাপ না জিততে পারার ক্ষরা ঘোচাতে।
স্কালোনি যে পারবেনই, সেটিও নিশ্চিত নয়। কিন্তু আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের আন্তর্জাতিক শিরোপা না জেতার ক্ষরাটা কিন্তু স্কালোনির হাত দিয়েই ঘুচেছে। ২০২১ কোপা আমেরিকাতে স্বাগতিক ব্রাজিলকে ফাইনালে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসি জেতেন তার প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা।
স্কালোনি আর্জেন্টিনা দলের হাল ধরেছিলেন সাময়িক সমাধান হিসেবে। কিন্তু সেটি যে স্থায়ী সমাধানে রূপান্তরিত হবে, তা স্কালোনি নিজে ভেবেছেন কিনা সন্দেহ। তার অধীনে আর্জেন্টিনা নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ টানা অপরাজিত থেকেছে। ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভাঙে কাতার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হেরে।
যে হারের পর অন্য এক আর্জেন্টিনাকে দেখেছে বিশ্ব। যে আর্জেন্টিনা প্রতিপক্ষকে সমীহ করলেও নিজদের শক্তিমত্তা নিয়েও জানে। তাই ভয়ের লেশমাত্র দেখা যায় না এই আর্জেন্টিনার খেলায়।
২০১৮ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে হারের প্রতিশোধ এবার সেমি-ফাইনালে নিয়েছে আর্জেন্টিনা। একই বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে ফ্রান্সের কাছে হেরেই বিদায় নিয়েছিলেন মেসি-দি মারিয়ারা। এবার ফাইনালে সেটির প্রতিশোধ নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ।
স্কালোনির আর্জেন্টিনা যদি সেটি করতে পারে তাহলে জয়ের পেছনে শুধু এক লিওনেল মেসি নয়, আরেক 'লিওনেল', স্কালোনির নামও উচ্চারিত হবে সমানভাবে।