বর্ণবাদী নন জানিয়ে ক্ষমা চাইলেন ডি কক
হাঁটু গেড়ে বর্ণবাদবিরোধী প্রতিবাদে রাজি না হওয়াকে কেন্দ্র করে ক্রিকেট বিশ্বে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার পর অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) ভক্ত-সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা ক্রিকেটার কুইন্টন ডি কক।
গত মঙ্গলবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ রাউন্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার একাদশে ছিলেন না ডি কক। প্রাথমিকভাবে তার একাদশে না থাকার নেপথ্যে 'ব্যক্তিগত কারণ'-এর কথা উল্লেখ করা হলেও পরবর্তীতে জানা যায়, ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকার (সিএসএ) বর্ণবাদবিরোধী 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' আন্দোলনের বাধ্যতামূলক অংশ হিসেবে হাঁটু গেড়ে বসতে রাজি ছিলেন না বলেই ম্যাচ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
বৃহস্পতিবার সিএসএ'র মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে ডি কক জানান, তার নিজের পরিবারই মিশ্র বর্ণের এবং হাঁটু গেড়ে বসতে না চাওয়ার মাধ্যমে তিনি কাউকে অসম্মান করতে চাননি। এরপর তিনি আরও বলেন যে দেশের হয়ে পুনরায় খেলাটাই হবে তার জন্য সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয়।
বিবৃতিতে ডি কক বলেন, 'আমি বর্ণবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর গুরুত্ব বুঝতে পারি, এবং আমি আরও বুঝি যে খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের দায়িত্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। আমার হাঁটু গেড়ে বসা যদি অন্যদের শিক্ষা দিতে পারে এবং এতে করে যদি অন্যদের জীবন আরও ভালো হয়ে ওঠে, তবে আমি খুশি মনেই কাজটি করব।'
'আমি কোনোভাবেই কাউকে অসম্মান করতে চাইনি। আমার সিদ্ধান্তের কারণে যারা আঘাত পেয়েছেন এবং যেসব বিভ্রান্তি ও ক্ষোভের সঞ্চার ঘটেছে, সে জন্য আমি গভীরভাবে দুঃখিত।' যোগ করেন ডি কক।
হঠাৎ করে নিজের মন পরিবর্তনের কারণ হিসেবে ডি কক জানান, বুধবার সন্ধ্যায় ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে খেলোয়াড়দের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়, এরপরই তিনি নিজের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করেন।
উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান বলেন, 'ছোটবেলা থেকে আমি এটি জেনেই বড় হয়েছি যে আমাদের সকলেরই অধিকার রয়েছে এবং সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয়েছিল আমার কাছ থেকে আমার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, যখন আমাদের ওই কাজটি (হাঁটু গেড়ে বসা) করতে বাধ্য করা হয়েছিল।'
'তবে বোর্ডের সঙ্গে আবেগপ্রবণ আলাপচারিতাটির পর আমার মনে হয়, আমরা সকলেই তাদের (সিএসএ) উদ্দেশ্য সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারছি। আমার মনে হয়, এই আলাপটি আরও আগে হলেই ভালো হতো, তাহলে আগের ম্যাচের দিন যা ঘটেছে সেটি এড়ানো সম্ভব হতো।'
এই বিবৃতিতেই ডি কক প্রথমবারের মতো জানান যে তিনি এসেছেন একটি মিশ্র বর্ণের পরিবার থেকে। তার ভাষায়, 'আমার সৎ বোনেরা কৃষ্ণাঙ্গ এবং আমার সৎ মা-ও একজন কৃষ্ণাঙ্গ। তাই জন্মের পর থেকেই আমার জন্য কৃষ্ণাঙ্গ জীবন বিশেষ গুরুত্ব বহন করেছে। কেবল এটিকে কেন্দ্র করে একটি আন্তর্জাতিক আন্দোলন চলছে বলেই এটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়।'
দক্ষিণ আফ্রিকার এই তারকা ক্রিকেটারের আশা, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভে শনিবার শ্রীলংকার বিপক্ষে তিনি দলে ফিরতে পারবেন, 'আমি আমার প্রত্যেক সতীর্থকে ভালোবাসি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলার চেয়ে বেশি ভালো লাগার আর কিছুই নয় আমার কাছে। আমার সতীর্থ খেলোয়াড়রা, বিশেষত আমার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা, যেভাবে আমাকে সমর্থন জানিয়েছে, সে জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ দিতে চাই।'
দলের হয়ে খেলার ইচ্ছার কথা জানিয়ে বিবৃতিতে ডি কক আরও বলেন, 'বাভুমা, আমাদের দল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা যদি আমাকে (একাদশে) নেয়, দেশের হয়ে আবারও খেলার চেয়ে বেশি আনন্দের আর কিছুই হবে না আমার জন্য।'