বিফলে মুশফিকের সেঞ্চুরি, তামিমদের প্রথম জয়
ব্যাটসম্যানরা ভুগে যাচ্ছেন, উল্লাসে মত্ত বোলাররা। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের শুরুর ম্যাচ থেকে এই একই দৃশ্য। ৫০ ওভারের ম্যাচ হলেও ২২ গজে নিরস ব্যাটিং। প্রথমে ব্যাটিং করা দল ছোট স্কোর গড়লেও সেটা পাড়ি দিতে গিয়েই প্রতিপক্ষ দলের নাভিশ্বাস অবস্থা হয়ে যাচ্ছে। অবশেষে মিরপুর স্টেডিয়ামে ব্যাটিং ঝলকের দেখা মিললো।
তামিম একাদশ-নাজমুল একাদশের মধ্যকার ম্যাচে দুজন ব্যাটসম্যানের ব্যাটে ঝরলো রানের ফোয়ারা। প্রথমে তামিম একাদশের মাহেদী হাসানের ঝড়ো ৮২। এরপর নাজমুল একাদশের মুশফিকুর রহিমের অসাধারণ ১০৩। যদিও মুশফিকের সেঞ্চুরি কাজে আসেনি। নাজমুল একাদশকে ৪২ রানে হারিয়ে প্রথম জয়ের স্বাদ নিল তামিমের দল। মাহমুদউল্লাহ একাদশ, তামিম একাদশ ও নাজমুল একাদশ; তিন দলের ঝুলিতেই এখন একটি করে জয়।
বৃহস্পতিবার মিরপুর স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে তামিম একাদশ। অগোছালো শুরুর পর মূল ব্যাটসম্যানরাও ব্যর্থ হন। প্রথম ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও অল্প রানে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েছিল দলটি। এমন সময় দলের হাল ধরে ধীরে ধীরে বিধ্বংসী হয়ে ওঠা মাহেদী হাসান খুনে এক ইনিংস খেলেন। তার ৮২ রানের সুবাদে ৯ উইকেটে ২২১ রান তোলে তামিমের দল।
জবাবে শুরু থেকেই উল্টো পথে হাঁটা নাজমুল একাদশ সেভাবে লড়াই করতে পারেনি। পুরো ইনিংসজুড়ে একটিই নাম, মুশফিকুর রহিম। প্রস্তুতি ম্যাচ থেকে রান খরায় ভোগা অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান এদিন একাই দলের বোঝা টেনেছেন। কিন্তু তার সেঞ্চুরিও দলকে জেতাতে পারেনি। ৪৫.৪ ওভারে ১৭৯ রানে অলআউট হয় নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ৩০ রানেই ৩ উইকেট হারায় শান্ত একাদশ। একে একে ফিরে যান সাইফ হাসান, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, সৌম্য সরকাররা। এখান থেকে দলের হাল ধরেন মুশফিক। আগের ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা ইরফান শুক্কুরকে নিয়ে এগোতে থাকেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ফেরেন ২৪ রান করা শুক্কুর। এরপর বাকিটা লড়াই কেবল মুশফিকেরই। ১০৩ বলে ৯টি চার ও একটি ছক্কায় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। কিন্তু সেঞ্চুরি পূর্ণ করেই থামতে হয় মুশফিককে। মুস্তাফিজের বলে রিভার্স স্কুপ করতে গিয়ে মাহেদী হাসানের হাতে ধরা পড়েন মুশফিক। শরিফুল ৪টি, মুস্তাফিজ ৩টি ও সাইফউদ্দিন ২টি উইকেট নেন।
এরআগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নামে তামিমের দল। আগের ম্যাচে ২৭ রান করা তানজিদ হাসান তামিম এদিন বেশি সময় টিকতে পারেননি। বিশ্বজয়ী যুব দলের এই সদস্য ৫ রান করে আল আমিন হোসেনের শিকারে পরিণত হন।
এনামুল হক বিজয়কে সঙ্গে নিয়ে এগোচ্ছিলেন অধিনায়ক তামিম। কিন্তু এই জুটিও দীর্ঘ হয়নি। ১২ রান করা বিজয়কে ফিরিয়ে দেন ধারাবাহিকভাবে ভালো বোলিং করে আসা নাজমুল একাদশের পেসার তাসকিন আহমেদ।
উইকেটে থিতু হতে পারেননি মোহাম্মদ মিঠুনও। ৪ রান করেই বিদায় নেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। মিঠুনকে ফেরানো নাজমুল একাদশের স্পিনার তামিমকেও আউট করেন। ফেরার আগে ৪৫ বলে ৪টি চারে ৩৩ রান করেন তামিম।
৬৫ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে কিছুটা সময় পথ দেখান শাহাদাত হোসেন দিপু ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এই জুটি থেকে ৪০ রান পায় তামিম একাদশ। মোসাদ্দেক ১২ ও শাহাদাত ৩১ রান করেন। এরপর ম্যাচের সবচেয়ে বড় জুটি পায় তামিমের দল, সেটাও দুই স্পিনারের কল্যাণে।
১২৫ থেকে তামিম একাদশকে ২২০ রান পর্যন্ত পৌঁছে দেন ব্যাটকে খোলা তরেবারিতে পরিণত করা মাহেদী হাসান ও তাইজুল ইসলাম। শুরুতে ধীর-স্থির থাকলেও আস্তে আস্তে চড়াও হতে থাকেন মাহেদী। একটা পর্যায়ে রীতিমতো তাণ্ডন শুরু করেন তিনি। ৪৯তম ওভারে সৌম্য সরকারের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেন মাহেদী।
টানা দুই ছয় ও দুই চারে তুলে নেন ২০ রান। ২ বল বাকি থাকতে আউট হওয়া মাহেদী ৫৭ বলে ৯টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৮২ রান করেন। তাইজুল অপরাজিত থাকেন ২০ রানে। ৪৩ রানে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন আল আমিন হোসেন। এ ছাড়া দুই স্পিনার নাঈম হাসান ও রিশাদ হোসেন দুটি করে এবং তাসকিন একটি উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
তামিম একাদশ: ২১২/৯ (তামিম ৩৩, বিজয় ১২, শাহাদাত ৩১, মোসাদ্দেক ১২, মাহেদী ৮২, তাইজুল ২০*; তাসকিন ১/৪১, আল আমিন ৩/৪৩, নাঈম ২/২৮, রিশাদ ২/২১)।
নাজমুল একাদশ: ৪৫.৪ ওভারে ১৭৯/১০ (মুশফিক ১০৩, আফিফ ১৫, শুক্কুর ২৪; মুস্তাফিজ ৩/১৫, শরিফুল ৪/৩৭, সাইফউদ্দিন ২/৪১)।
ফল: তামিম একাদশ ৪২ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা: মাহেদী হাসান (তামিম একাদশ)
সেরা ব্যাটসম্যান: মুশফিকুর রহিম (নাজমুল একাদশ)
সেরা বোলার: মুস্তাফিজুর রহমান (তামিম একাদশ)
সেরা ফিল্ডার: মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (তামিম একাদশ)