মাহমুদউল্লাহর কণ্ঠে ক্ষোভের আগুন
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশে হেরে যাওয়ার পর সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। ভক্ত-সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলকে নিয়ে রীতিমতো ট্রল শুরু করে দেয়। সংবাদমাধ্যমে দলের সামর্থ্য নিয়ে তোলা হয় প্রশ্ন। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তো ক্ষোভ উগড়ে দেন। এসব যে ক্রিকেটারদের গায়ে লাগে তা জানিয়ে দিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের কথায় থাকলো ক্ষোভের আগুনের আঁচ।
প্রথম রাউন্ডে নিজেদের শেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউ গিনিকে ৮৪ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে সুপার টুয়েলভের টিকেট কেটেছে বাংলাদেশ। কঠিন হয়ে ওঠা পথ সহজ করে মূল পর্বের জায়গা করে নেওয়ায় বাংলাদেশ দলে স্বস্তির হাওয়াই বয়ে যাওয়ার কথা। সেটা বইছেও, কিন্তু এর মাঝেও আছে চাপা ক্ষোভ। যদিও পিএনজির ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে সেটা আর চাপা থাকেনি, মাহমুদউল্লাহ বুঝিয়ে দিয়েছেন; অমনটা ঠিক নয়। তারা মানুষ, ভুল করেন; তাই বলে ছোট করা ঠিক নয়।
ম্যাচের পর সবখানে উচ্ছ্বাস, কিন্তু আরেকটি হারেই যে সমালোচনা শুরু হয়ে যাবে; সেটা জানেন মাহমুদউল্লাহ। তার ভাষায়, 'আজ ভালো খেলছি বলে সবার কাছে মনে হবে (দারুণ কিছু)… আবার এক ম্যাচে খারাপ করলে হয়তো খুব বেশি করে সমালোচনা শুরু হয়ে যাবে। তবে আমরা চেষ্টা করছি, দল হিসেবে যেন ভালো পারফর্ম করতে পারি। এই ফরম্যাটে ওঠা-নামা (পারফরম্যান্সের) সব সময়ই থাকবে। ভালো-খারাপ দিন আসবে। দলের মধ্যে স্থিরতা থাকলেই আমরা তা কাটিয়ে উঠতে পারব।'
সমালোচনা হবে, সেটাও জানেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কিন্তু তার চাওয়া স্বাস্থ্যকর সমালোচনা। মাহমুদউল্লাহ বলেন, 'সমালোচনা তো হবেই। আমরাও সমালোচনা আশা করি। খারাপ খেললে সমালোচনা হবেই। কেন হবে না? কিন্তু সমালোচনার মাধ্যমে যখন কাউকে ছোট করা হয়, সেটিই খুব খারাপ লাগে।'
স্কটল্যান্ড ম্যাচের পর সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহর স্ট্রাইক রেট নিয়ে সমালোচনা করেন বিসিবি সভাপতি। সেটারই যেন জবাব দিলেন মাহমুদউল্লাহ, 'অনেক প্রশ্ন এসেছে আমাদের স্ট্রাইক রেট, আমাদের তিন সিনিয়র ক্রিকেটারের স্ট্রাইক রেট ইত্যাদি নিয়ে। আমরা তো চেষ্টা করি। আপ্রাণ চেষ্টা করি। এমন নয় যে আমরা চেষ্টা করিনি। হয়তো ফল আমাদের পক্ষে আনতে পারিনি। সমালোচনা তো হবেই। কিন্তু এই সমালোচনা যেন স্বাস্থ্যকর হয়।'
ক্রিকেটারদের যে অনভূতি আছে, তারাও যে অনেক কিছু দেখেন; সেটাও জানালেন মাহমুদউল্লাহ, 'আমাদেরও সবকিছু স্পর্শ করে। আমরাও মানুষ। আমাদেরও অনুভূতি কাজ করে। আমাদের পরিবার আছে। আমাদের বাবা–মায়েরা টিভির সামনে বসে থাকে আমাদের খেলা দেখার জন্য। সন্তানেরা থাকে। তারা মন খারাপ করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তো এখন সবার নাগালে। সবারই মোবাইল ফোন আছে।'
মাহমুদউল্লাহর চাওয়া সমালোচনা হোক, কিন্তু দলকে যেন ছোট না করা হয়। নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন না তোলা হয়। বাংলাদেশ অধিনায়কের ভাষায়, 'আমরা মানুষ, আমরা ভুল করি। এ কারণে একেবারে ছোট করে ফেলা ঠিক নয়। এটা আমাদের দেশ। আমরা যখন খেলি, পুরো দেশ একসঙ্গে খেলি। এটা মাথায় থাকে সব সময়। আমাদের চেয়ে ফিলিংস কারও বেশি নয় আমার মনে হয়। সমালোচনা অবশ্যই হবে, খারাপ খেলেছি। তবে একেবারেই ছোট করে ফেলা ঠিক নয়। আমাদের সবার কাছেই খারাপ লেগেছে।'
'বাংলাদেশের জার্সিটা যখন গায়ে তুলি, আমাদেরও অনুভূতি হয়। দেশের জন্য সবই থাকে। ব্যথা থাকে, কারও অনেক ধরনের ইনজুরি থাকে। আমরা ওগুলো নিয়েই খেলি৷ দিনের পর দিন ব্যথানাশক ওষুধ খেয়েও খেলি। ভেতরের খবর অনেকেই জানে না। তো আমার মনে হয় এগুলো নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক নয়। কমিটমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলাও উচিত নয়।' যোগ করেন মাহমুদউল্লাহ।