মাহমুদুলের সেঞ্চুরিতে স্বপ্নের ফাইনালে বাংলাদেশের যুবারা
ইতিহাস শব্দটা নিয়ে কারো কারো আপত্তি থাকতে পারে। মনে হতে পারে এটা বাড়াবাড়ি। ফাইনালে উঠেই কিসের ইতিহাস! কিন্তু বাংলাদেশ যুব দলের জন্য এটা বিরাট এক ইতিহাস। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ উইকেটের এই জয়টি প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে তুললো বাংলাদেশকে। ১২তম চেষ্টায় ফাইনালের টিকেট কাটা তো ইতিহাসই!
বিশ্বকাপ আসে, বিশ্বকাপ যায়, ফাইনালে ওঠা হয় না বাংলাদেশ যুবাদের। সেমি ফাইনাল পর্যন্ত ছিল শেষ দৌড়। এবার খেই হারায়নি বাংলাদেশের তরুণ তুর্কিরা, এবার আর হৃদয় ভাঙার গল্প নয়। শুরু থেকেই দাপুটে ক্রিকেট খেলে আসা বাংলাদেশের যুবারা এবার ভেঙে দিয়েছে শৃঙ্খল, ছিনিয়ে নিয়েছে স্বপ্নের ফাইনালের টিকেট।
দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে ফাইনাল নিশ্চিতের ম্যাচে টস জিতে নিউজিল্যান্ড যুবাদের ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। দারুণ বোলিংয়ে জুনিয়র কিউইদের নাগালের মধ্যেই রাখেন শরিফুল, শামীম, হাসান মুরাদরা। ৮ উইকেটে ২১১ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ভালো শুরু না হলেও ম্যাচ সেরা মাহমুদুল হাসান জয়ের অসাধারণ সেঞ্চুরিতে ৪৪.১ ওভারে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ যুবারা। অল এশিয়ান ফাইনালে ৯ ফেব্রুয়ারি পচেফস্ট্রুমে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশের যুবারা।
২১২ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশের জন্য খুব বড় কিছু ছিল না। তাই সাবধানি শুরুই করেন দুই ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ও তানজিদ হাসান তামিম। সাবধানি শুরুতেও অবশ্য রক্ষা হয়নি। দলীয় ২৩ রানে থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তানজিদ হাসান তামিম।
কিছুক্ষণ পর দিক হারান পারভেজ হোসেন ইমনও। ৩২ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারিয়ে বিপাকেই পড়ে যায় বাংলাদেশ। যদিও দলকে এই চাপ বুঝতে দেননি মাহমুদুল হাসান জয় ও তৌহিদ হৃদয়। তৃতীয় উইকেটে ৬৮ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথেই রাখেন এ দুজন।
তৌহিদ হৃদয় ৪৪ রান করে ফিরলেও বাংলাদেশকে ফাইনালে তোলার নায়ক মাহমুদুল হাসান খেলেন বীরোচিত এক ইনিংস। ১২৭ বলে ১৩টি চারে ১০০ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। মাহমুদুলকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন শাহাদাত হোসেন।
চতুর্থ উইকেটে ১০১ রানের জুটি গড়েন মাহমুদুল-শাহাদাত। ৫১ বলে ৪টি চারে ৪০ রানে অপরাজিত থাকেন শাহাদাত। নিউজিল্যান্ডের ক্রিশ্চিয়ান ক্লার্ক, ডেভিড হ্যাংকক, অদিত্য অশোক একটি করে উইকেট পান।
এরআগে টস জেতার সুবিধা নিতে নিউজিল্যান্ড যুবাদের আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। দলের পরিকল্পনামতো সেই সুবিধা ভালোভাবেই বাগিয়ে নেন শরিফুল ইসলাম, শামীম হোসেন, হাসান মুরাদরা। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে নাগালের মধ্যেই রাখেন তারা।
বাঁহাতি পেসার শরিফুলের বোলিংয়ের সামনে সবচেয়ে বেশি ভুগেছে নিউজিল্যান্ডের যুবারা। ১০ ওভারে ৪৫ রান খরচায় ৩ উইকেটে নিয়েছেন তিনি।
৩১ রানে দুই উইকেট পান শামীম। সবচেয়ে কম রান খরচ করা হাসান মুরাদ পান ২ উইকেট। একটি উইকেট নেন রকিবুল হাসান।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৫ রান করেছেন হুইলার গ্রিনাল। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের দৃঢ়তার কারণেই মূলত লড়াইয়ের পুঁজি পেয়েছে কিউই যুবারা।
৮৩ বলে পাঁচটি চার ও দু'টি ছক্কায় ৭৫ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। এ ছাড়া নিকোলাস লিন্ডস্টোন ৪৪, ফার্গাস লেলম্যান ২৪ ও অলি হোয়াইট ১৮ রান করেন।