রান উৎসবের ম্যাচে হোয়াইটওয়াশের আনন্দ
সাকিব আল হাসানের গ্রোইন (কুঁচকি) ইনজুরি ছাড়া পুরো সিরিজে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটেনি। নিয়মিত দলের ১৩ ক্রিকেটার ছাড়া খর্ব শক্তির দলে পরিণত হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় পাওয়াটা অনুমেয়ই ছিল। বাংলাদেশ সিরিজ জিতবে, এটাও ছিল প্রত্যাশিত। সর্বশেষ প্রত্যাশাও পূরণ হয়েছে তামিম ইকবালের দলের। তৃতীয় ওয়ানডে জিতে ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। মিলেছে বিশ্বকাপ সুপার লিগের ১০ পয়েন্টও।
সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১২০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সাগড়পাড়ের এই স্টেডিয়ামে যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে রানের হিসাবে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে তামিম ইকবাল, সিরিজ সেরা সাকিব আল হাসান, ম্যাচ সেরা মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাফ সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ২৯৭ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে ৪৪.২ ওভারে ১৭৭ রানেই অলআউট হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে এটা বাংলাদেশের টানা তৃতীয় ও সব মিলিয়ে পঞ্চম সিরিজ জয়। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ। এরআগে ২০০৯ সালে প্রথম সিরিজ জেতার মিশনেই ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ।
ওয়ানডেতে ১৪তম বারের মতো প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ পেল বাংলাদেশ। পাশাপাশি বাংলাদেশের ঝুলিতে জমা হলো ওয়ানডে বিশ্বকাপ সুপার লিগের আরও ১০ পয়েন্ট। ৩ ম্যাচ থেকে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলের দুই নম্বরে উঠে গেল বাংলাদেশ।
পুরো সিরিজজুড়ে ব্যাটে-বলে বাংলাদেশের আধিপত্য ছিল। ক্যারিবীয়রা কেবল বাংলাদেশের শাসনই হজম করে গেছে। বল হাতে যেমন সফলতা মেলেনি, তেমনি ব্যাট হাতেও উজ্জ্বল পারফরম্যান্স করতে পারেননি উইন্ডিজের কোনো ব্যাটসম্যান। পুরো সিরিজে একটিও হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেনি সফরকারী দলের কোনো ব্যাটসম্যান।
আগের দুই ম্যাচ জয়েই সিরিজ হয়ে যায় বাংলাদেশের। দুই ম্যাচেই পরে ব্যাটিং করে তামিম ইকবালের দল। লক্ষ্য ছোট থাকায় কোনো ম্যাচেই পুরো ৫০ ওভার ব্যাটিং করা হয়নি বাংলাদেশের। তৃতীয় ওয়ানডেতে টস হেরে সিরিজে প্রথমবারের মতো আগে ব্যাটিং করতে নামেন তামিম-লিটনরা।
শুরুটা এদিন ভালো হয়নি। দলীয় ৭ রানেই ফিরে যান ওপেনার লিটন কুমার দাস। নাজমুল হোসেন শান্ত- তামিম ইকবালের জুটিও দীর্ঘ হয়নি। দলীয় ৩৮ রানে থামেন পুরো সিরিজে অনুজ্জ্বল থেকে যাওয়া শান্ত। এরআগে ২০ রান করেন তিন নম্বরে ব্যাটিং করার সুযোগ পাওয়া বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
শুরুতেই দুই উইকেট হারানোর চাপ কাটিয়ে উঠতে বেশি সময় নেননি তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার ৯৩ রানের জুটি গড়ে দলকে ১৩১ রানে পৌঁছে দেন। এ সময় ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৯তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম। ৮০ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৬৪ রান করে আউট হন তিনি।
এরপর মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে জুটি বাধেন সাকিব। এই পত্তনে সাকিব পুর্ণ করেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৮তম হাফ সেঞ্চুরি। হাফ সেঞ্চুরি করে আর টেকা হয়নি তার। ৮১ বলে ৩টি চারে ৫১ রান করে থামেন তিনি। বাকিটা সময় দ্রুততার সঙ্গে রান তুলেছেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাদের ব্যাটে শেষ ১০ ওভারের ১০০ রান পায় বাংলাদেশ।
মুশফিক ৫৫ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৪ রান করেন। ম্যাচে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে রান করা মাহমুদউল্লাহ ৪৩ বলে ৩টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আলজারি জোসেফ ও রেমন রেফার ২টি করে উইকেট নেন।
বড় লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে বরাবরের মতো শুরুতেই অগোছালো শুরু করে ক্যারিবীয়রা। আগের দুই ম্যাচের মতো এই ম্যাচের শুরুতেও আঘাত হানেন মুস্তাফিজুর রহমান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার কেয়ন ওটলি ও সুনীল আমব্রিসকে ফিরিয়ে দেন বাঁহাতি এই পেসার।
শুরুর এই চাপ আর কাটিয়ে ওঠা হয়নি সফরকারীদের। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ দারুণ বোলিং করে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের কোণঠাসা করে রাখেন। সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন রভম্যান পাওয়েল। এনক্রুমাহ বোনার ৩১, অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ ১৭ ও রেমন রেফার ২৭ রান করেন। সাইফউদ্দিন ৩টি উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট নেন মুস্তাফিজ ও মিরাজ। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর ওয়ানডে খেলতে নামা তাসকিন পান একটি উইকেট।