রিয়ালকে উড়িয়ে ফাইনালে চেলসি
অ্যাওয়ে গোলের স্বস্তি নাকি ঘরের মাঠের শক্তি? উত্তর যাই হোক, পুরো ম্যাচজুড়ে উড়লো চেলসি। ঘরের মাঠে রিয়াল মাদ্রিদকে পাত্তাই দিলো না ইংলিশ ক্লাবটি। টমাস টুখেলের কোচিংয়ে বদলে যাওয়া চেলসি প্রথমার্ধে এক গোল করে থামলো না। অবিরত আক্রমণে ম্যাচের শেষভাগে আদায় করে নিলো আরেকটি গোল। তাতে আট মৌসুম পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল নিশ্চিত হলো চেলসির।
বুধবার রাতে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে রিয়াল মাদ্রিদকে ২-০ গোলে হারিয়েছে চেলসি। দুই লেগ মিলিয়ে ৩-১ ব্যবধানে জিতে ইউরোপ সেরা টুর্নমেন্টটির ফাইনালের টিকেট কাটলো দ্য ব্লুজরা। আগের লেগে রিয়ালের ঘরের মাঠে ১-১ গোলে ড্র করে এসেছিল টমাস টুখেলের শিষ্যরা।
চেলসির জয়ে নিশ্চিত হলো অল ইংলিশ ফাইনাল। আগের রাতে শেষ চারের দ্বিতীয় লেগে ঘরের মাঠে পিএসজিকে ২-০ গোলে হারায় ম্যানচেস্টার সিটি। দুই লেগ মিলিয়ে ৪-১ ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠে ম্যান সিটি। আগামী ২৯ মে ইস্তাম্বুলে ফাইনালে লড়বে ইংলিশ দল দুটি। এক মৌসুম পরই অল ইংলিশ ফাইনাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ফাইনাল খেলেছিল দুই ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল ও টটেনহ্যাম হটস্পার।
চোট কাটিয়ে চেলসির বিপক্ষে মাঠে নামেন রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণভাগের নেতা সার্জিও রামোস। কিন্তু তার উপস্থিতিও রিয়ালের আত্মবিশ্বাস চাঙ্গা করতে পারেনি। পুরো ম্যাচে বিবর্ণ থেকে গেছে স্প্যানিশ জায়ান্টরা। এদিন রিয়ালের রক্ষণভাগ ছিল চরম অগোছালো। প্রতিপক্ষের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বারবার আক্রমণ সাজিয়েছে চেলসি। দলটির হয়ে গোল করেন টিমো ওয়ের্নার ও ম্যাসন মাউন্ট।
শুরুর দিকেই এগিয়ে যেতে পারতো চেলসি। ১৮ তম মিনিটে দারুণ আক্রমণে রিয়াল মাদ্রিদের জাল খুঁজে নেয় ইংলিশ ক্লাবটি। লেফট ব্যাক বেন চিলওয়েল নিচু করে ক্রস বাড়ান। ডান পাশ থেকে ছুটে গিয়ে দারুণ শটে রিয়ালের জালে বল জড়ান চেলসির জার্মান স্ট্রাইকার টিমো ওয়ের্নার। কিন্তু দুর্ভাগ্য দ্য ব্লুজদের, অফ সাইটে গোলটি বাতিল হয়ে যায়।
পাল্টা আক্রমণে চেলসির রক্ষণভাগ কাঁপিয়ে দিতে সময় নেয়নি রিয়াল। ২৬তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে করিম বেনেজমার অসাধারণ শট প্রায়ই চেলসির জালের ঠিকানা করে নিয়েছিল। শেষ মূহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে দলকে বাঁচান চেলসির গোলরক্ষক এডুয়ার্ড মেন্দি।
দুই মিনিট পরই উল্লাসে মাতে চেলসি। দ্য ব্লুজরা রিয়ালের অরক্ষিত ডি-বক্সে ঢুকে পড়ে। থিবো কর্তোয়াকে বোকা বানিয়ে আলতো টোকায় তার মাথার উপর বল জালের উদ্দেশ্যে পাঠান কাই হাভের্টজ। কিন্তু বল গিয়ে ক্রস বারে লাগে। ফিরে আসা বলে সহজ হেডে গোল আদায় করে নেন টিমো ওয়ের্নার।
৩৬তম মিনিটে ব্যবধান কমাতে পারতো রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু এবারও কপাল পোড়া বেনজেমা। অন্যভাবে বলা যায়, চেলসির গোলরক্ষক মেন্দি অসাধারণ দক্ষতায় বেনজেমাকে আরও একবার হতাশায় ডোবান। লুকা মদ্রিচের ক্রসে দারুণ হেড নেন বেনজেমা। উড়ন্ত বলাকার মতো লাফিয়ে ফিস্ট করে দলকে বিপদমুক্ত করেন সেনেগালের এই গোলরক্ষক।
৪২ তম মিনিটে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন রিয়ালের রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা অস্ত্র সার্জিও রামোস। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটা তার ৩৮তম হলুদ কার্ড। ইউরোপ সেরা এই ফুটবল টুর্নামেন্টের রামোসই সর্বোচ্চ হলুদ কার্ড দেখা ফুটবলার। ৩২টি হলুদ কার্ড দেখা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ইংলিশ সাবেক মিডফিল্ডার পল স্কোলস দুই নম্বরে।
৪৭তম মিনিটেই স্কোর লাইন ২-০ হতে পারতো। সতীর্থের লম্বা করে বাড়ানো ক্রসে অসাধারণ হেড নেন ম্যাসন মাউন্ট। কিন্তু ক্রসবারে লেগে বল বাইরে চলে যায়। ৫৪তম মিনিটে আরেকটি দারুণ আক্রমণ সাজায় চেলসি। বল নিয়ে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে রিয়ালের ডি-বক্সে ঢুকে জোরালো শট নেন মাউন্ট। কিন্তু ইংলিশ এই মিড ফিল্ডারের শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায়।
৫৯তম মিনিটে সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে চেলসি। দুবার ক্রসবারে বল আঘাত করা কাই হাভের্টজ এবারও গোল আদায় করে নিতে পারেননি। জার্মান এই মিডফিল্ডারের সামনে কেবল রিয়াল গোলরক্ষক কর্তোয়া ছিলেন। কিন্তু তার নেওয়া শট শুয়ে বুট দিয়ে ফিরিয়ে দেন কর্তোয়া। ৬৬তম মিনিটে একইভাবে ফরাসি মিডফিল্ডার এনগোলো কন্তের শট ফেরান কর্তোয়া।
৭৭ মিনিটে আবারও রিয়ালের রক্ষণে চেলসির হানা। এবার ডানপাশ ঘেসে বল নিয়ে রিয়ালের ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন ক্রিশ্চিয়ান পালিসিক। কিন্তু আমেরিকান উইঙ্গারের দারুণ ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারেননি ম্যাসন মাউন্ট। অবিরত আক্রমণের ফল ৮৫তম মিনিটে গিয়ে পায় চেলসি। সাজানো আক্রমণে বুঝেশুনে মাউন্টের দিকে বল বাড়ান পালিসিক। এবার আর ভুল হয়নি মাউন্টের, প্লেসিং শটে বল জালে পাঠান ইংলিশ এই মিডফিল্ডার।