সিটির স্বপ্ন গুঁড়িয়ে ইউরোপ সেরা চেলসি
ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজার পর থেকেই আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ। পুরো ম্যাচজুড়ে থাকলো টান টান উত্তেজনা, লড়াই হলো সামনে সমান। কিন্তু ৪২তম মিনিটটা চেলসির। ওই মিনিটের কয়েকটা সেকেন্ড কাজে লাগিয়ে ম্যানচেস্টার সিটির স্বপ্ন ভেঙে খান খান করে দিলেন কাই হাভের্টজ। ম্যান সিটিকে হারিয়ে ৯ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতলো দ্য ব্লুজরা।
শনিবার রাতে পর্তুগালের পোর্তোয় অনুষ্ঠিত জমজমাট অল ইংলিশ ফাইনালে ম্যান সিটিকে ১-০ গোলে হারিয়েছে টমাস টুখেলের দল চেলসি। দ্বিতীয়বারের মতো আসরটির শিরোপা জিতলো ইংলিশ ক্লাবটি। কোচ হিসেবে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপার স্বাদ নিলেন টুখেল।
শিরোপা জিততে হলে প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওটা ম্যান সিটিকে ইতিহাস গড়তে হতো। প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠা সর্বশেষ ১০ দলের মধ্যে কেবল একটি দল প্রথম মিশনেই শিরোপা জিতেছে। ১৯৯৭ সালে জুভেন্টাসকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স হয় বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। প্রথম ফাইনালেই শিরোপা জেতা প্রথম দল অ্যাস্টন ভিলা, ১৯৮২ সালে বায়ার্নের বিপক্ষে জেতে তারা। ততৃীয় দল হিসেবে এই রেকর্ডের মালিক হওয়া হলো না পেপ গার্দিওলার শিষ্যদের।
একই লিগের দুই ক্লাবের ফাইনাল খেলার ব্যাপারটি সচরাচর ঘটে না। এবার ম্যান সিটি-চেলসি ম্যাচ দিয়ে সেটা হয়েছে। ইতিহাসে অষ্টমবারের মতো একই লিগের দুই দল এই আসরের ফাইনাল খেললো। ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো স্পেনের দুই ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও ভ্যালেন্সিয়া ফাইনাল খেলে। সর্বশেষ ২০১৯ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল খেলে দুই ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল ও টটেনহ্যাম হটস্পার।
নবম ইংলিশ ক্লাব হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেছিল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যান সিটি। আর কোনো লিগের এতো ক্লাব এই আসরে খেলতে পারেনি। জার্মানি ও ইতালির ৬টি করে ক্লাব চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে খেলেছে। চেলসির শিরোপা জয়ে ইংল্যান্ড পেলো ১৪তম শিরোপা। সবচেয়ে বেশি ১৮টি শিরোপা গেছে স্পেনে। এরমধ্যে ১৩ বারই জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। বাকি ৫টি শিরোপা বার্সেলোনার।
ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজতেই আক্রমণ সাজাতে শুরু করে ম্যান সিটি। সেন্টার করেই বল নিয়ে চেলসির রক্ষণভাগে হানা দিতে শুরু করে তারা। চেলসিও পাল্টা আক্রমণ সাজাতে দেরি করেনি। অষ্টম মিনিটে সতীর্থের লম্বা করে বাড়ানো পাস খুঁজে নেয় রহিম স্টার্লিংকে। ম্যান সিটির এই ফরোয়ার্ডের সামনে কেবল কেবল চেলসির গোলরক্ষক এডুয়ার্ড মেন্ডি ছিল। বল নিয়ন্ত্রণে নিতে দেরি হওয়ায় এগিয়ে আসেন চেলসির রাইট ব্যাক রিস জেমস। হাল্কা টোকায় বল সামনে বাড়িয়ে দেন দেন তিনি। এরপর মেন্ডি কর্নারের বিনিময়ে দলকে বাঁচান।
দুই মিনিট পর আরও গোছানো আক্রমণ করে ম্যান সিটি। বাম পাশ থেকে ক্রস বাড়ান কেভিন ডি ব্রুইনে। কিন্তু তার ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারেননি কেউ। ১৪তম মিনিটে দারুণ একটি আক্রমণ করে চেলসি। হাভার্টজের পাস থেকে বল পেয়ে শট নেন টিমো ভের্নার। ঝাঁপিয়ে পড়ে বল তালুবন্দী করেন ম্যান সিটির গোলরক্ষক এডারসন মোরায়েস।
পরের মিনিটে আবারও হানা দেন দেন ভের্নার। এবার তার শট গোলপোস্ট ঘেষে বেরিয়ে যায়। ১৭তম মিনিটে কান্তের হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট্র হয়। ১০ মিনিট পর সহজ সুযোগ পায় ম্যান সিটির ফিল ফোডেন। ডি বক্সে কেভিন ডি ব্রুইনের পাস থেকে বল পান তিনি। কিন্তু ইংলিশ এই মিডফিল্ডার গোল আদায় করতে পারেননি। দলকে বিপদমুক্ত করেন চেলসির লেফট ব্যাক আন্তোনিও রুডিগার।
৪২ তম মিনিটে এগিয়ে যায় চেলসি। মাঝ মাঠ থেকে কাই হাভের্টজের উদ্দেশ্যে লম্বা করে বল বাড়ান ম্যাসম মাউন্ট। জার্মান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার সামনে তখন শুধু ম্যান সিটির গোলরক্ষক মোরায়েস। ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান হাভার্টজ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটাই প্রথম গোল চেলসির ইতিহাসের সবচেয়ে দামি এই ফুটবলারের। ১-০ তে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় চেলসি।
বিরতি থেকে ফিরে কোনো দলই পরিষ্কার আক্রমণ সাজাতে পারছিল না। ৫৫ মিনিটি পর্যন্ত চলে এভাবে। এ সময় কপাল পোড়ে ম্যান সিটির। রুডিগারের ফাউলের শিকার হন কেভিন ডি ব্রুইনে। মাঠেই অনেকক্ষণ শুয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন বেলজিক এই মিডফিল্ডার। কিন্তু লাভ হয়নি, কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়েন ডি ব্রুইনে। তার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন গ্যাব্রিয়েল হেসুস।
৬৭ মিনিটে আক্রমণ সাজায় ম্যান সিটি। ডান প্রান্তু থেকে ক্রস করেন রিয়াদ মাহরেজ। কর্নারের বিনিময়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন চেলসি অধিনায়ক সিজার আজপিলিকুয়েতা। ৭৩ মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ হারায় চেলসি। সামনে শুধু প্রতিপক্ষ দলের গোলরক্ষককে পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন ক্রিশ্চিয়ান পালিসিক। যুক্তরাষ্ট্রের এই উইঙ্গারের নেওয়া শট গোল পোস্টের অনেকটা বাইরে দিয়ে চলে যায়।
১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে চেলসি। ম্যান সিটির আক্রমণ থামিয়ে সুযোগ বুঝে পাল্টা আক্রমণ করেছে ইউরোপ সেরার মুকুট জেতা দ্য ব্লুজরা। শেষের দিকে গোলশোধে মরিয়া হয়ে ওঠে সিটি। অবিরত আক্রমণ করতে থাকে তারা। কিন্তু কোনো চেষ্টাতেই চেলসির জালের ঠিকানা পায়নি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়নরা।