১৯৯ দিন পর মিরপুরে ক্রিকেট ম্যাচ
ঘণ্টার হিসেব কষতে গেলে গোলমাল পাকিয়ে যেতে পারে। ৪ হাজার ৭৭৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে গেছে, মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গড়ায়নি কোনো ক্রিকেট ম্যাচ। অবশ্য কেবল মিরপুরেই নয়, করোনাভাইরাসের প্রকোপে পুরো দেশেই ক্রিকেট বন্ধ ছিল। একটু একটু করে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। জুলাইয়ে শুরু হয় একক অনুশীলন, আর ২০ সেপ্টেম্বর থেকে দলীয় অনুশীলন।
সাড়ে ছয় মাস পর ক্রিকেট ম্যাচ ফিরতে যাচ্ছে মিরপুরে। সপ্তাহের হিসাবে ২৮, দিনের হিসাবে ১৯৯ দিন পর মিরপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কোনো ক্রিকেট ম্যাচ। ক্যাম্পে ডাক পাওয়া ২৭ ক্রিকেটারের ২৫ জনকে নিয়ে শুক্রবার থেকে মিরপুর স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ। ম্যাচটি সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হবে।
করোনা আক্রান্ত পেসার আবু জায়েদ রাহি নেগেটিভ হলেও এখনও পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। ৪-৫ দিন পর আরেকটি টেস্টে নেগেটিভ হলে দলের সঙ্গে যোগ দিতে পারবেন ডানহাতি এই পেসার। দুই দিনের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচের কোনোটিই খেলা হবে না তার। প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে খেলছেন না ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও পেসার শফিউল ইসলাম।
সর্বশেষ ম্যাচ খেলার কথা অনেক ক্রিকেটারই ভুলে গেছেন। না ভুললেও নির্দিষ্ট করে মনে করতে পারছেন না। অনেকে আবার জাতীয় দল ও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ দিয়ে গুলিয়ে ফেলছেন। কারও কারও স্মৃতিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলা ১১ মার্চের টি-টোয়েন্টিই সর্বশেষ ম্যাচ। কেউ আবার বলছেন প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচের কথা।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই দেশের ক্রিকেট স্থগিত ঘোষণা করা হয়। তখন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ চলছিল। ১৬ মার্চ মিরপুরে অনুষ্ঠিত হয় প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ও গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের মধ্যকার ম্যাচ। মিরপুরে অনুষ্ঠিত হওয়া সর্বশেষ ম্যাচ ওটাই। জাতীয় দলের অনুশীলন দিয়ে চেনা রূপে ফেরা মিরপুরে আবারও ক্রিকেট ম্যাচ গড়াচ্ছে ২ অক্টোবর।
চারদিনের বিরতির পর বৃহস্পতিবার অনুশীলন শুরু করেছে জাতীয় দল। এদিনই দুই দল ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসন ও ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুকের নামে দলের নাম দেওয়া হয়েছে। প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো দল ভাগ করে দেওয়ার পাশাপাশি অধিনায়কও ঠিক করে দিয়েছেন। রায়ান কুক একাদশের নেতৃত্বে থাকবেন টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। ওটিস গিবসন একাদশের অধিনায়ক বানানো হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে।
এটি অবশ্য কোনো লিগ বা টুর্নামেন্টর ম্যাচ নয়। স্কিল ক্যাম্পের অংশ হিসেবে দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ আয়োজন করেছে বিসিবি। জৈব সুরক্ষা বলয়ে সোনারগাঁও হোটেলে থাকা ২৫ জন ক্রিকেটার দুই দলে ভাগ হয়ে খেলবেন এই ম্যাচটি। নিজেদের মধ্যকার ম্যাচ হলেও ক্রিকেটারদের রোমাঞ্চের শেষ নেই। সাড়ে ছয় মাস পর ক্রিকেট ম্যাচ খেলবেন বলে আগের দিনটা অনেকের কাছে লম্বা মনে হচ্ছে।
ক্যাম্পে থাকার বাধ্যবাধকতার কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় দলের এক ব্যাটসম্যান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এতোদিন শুধু অনুশীলনই করেছি। ব্যাটিং করলেও মাথায় ছিল এটা অনুশীলন। কিন্তু এতোদিন পরে কাল ম্যাচ খেলব। নিজেদের মধ্যে ম্যাচ হলেও প্রতিযোগিতার একটা আবহ থাকবে। ভালো করার তাড়না থাকবে। মনে হচ্ছে কাল কখন সকাল হবে।'
জাতীয় দলের এক পেসারও জানালেন উচ্ছ্বাসের কথা। তিনি বলেন, 'বেশ কয়েকদিন ধরে বোলিং করেছি। অবশ্যই ভালো লেগেছে। অন্তত মাঠে তো ফিরতে পেরেছি। সাড়ে ছয় মাস পর কাল ম্যাচের আবহে বোলিং করব, এটা ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে। সত্যি বলতে আজ দিনটা বড় বড় লাগছে। আসলে এতোদিন পর ম্যাচ খেলব বলে এমন মনে হচ্ছে।'
ম্যাচটাকে গুরুত্বের চোখে দেখছে বিসিবির নির্বাচকরাও। তাদের চোখে এটা ক্রিকেটারদের ছন্দ ফিরিয়ে আনার ম্যাচ। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক হাবিবুল বাশার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ম্যাচটাকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। এটাকে আমরা ছন্দে ফেরার ম্যাচ হিসেবে ধরছি। কে কেমন ছন্দে আছে, সেটা আমরা দেখতে চাই। অবস্থান বোঝার জন্য ম্যাচ খেলা খুব জরুরি।'
যদিও এই ম্যাচে তেমন দেখার কিছু নেই বলে জানালেন হাবিবুল বাশার। তিনি বলেন, 'তেমন দেখার কিছু আছে বলে মনে হয় না। ক্রিকেটারদের ছন্দে ফেরানোর অংশ হিসেবে এই ম্যাচ। তবে ভালো-খারাপ পারফরম্যান্স বিবেচনা করা হবে না। কেউ ভালো করলে অবশ্যই সেটা ভালো। কেউ না করতে পারলে সেটা খারাপ, তেমন নয়। দলের সবাই ৭ মাস ধরে খেলার বাইরে, তাই এখানে কোনো প্রত্যাশা নেই।'
ওটিস গিবসন একাদশ: সাইফ হাসান, ইমরুল কায়েস, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নাঈম হাসান, হাসান মাহমুদ, এবাদত হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান ও রুবেল হোসেন।
রায়ান কুক একাদশ: ইয়াসির আলী রাব্বি, সাদমান ইসলাম অনিক, মুমিনুল হক (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, নুরুল হাসান সোহান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, খালেদ আহমেদ ও আল আমিন হোসেন।