‘সুযোগ পাওয়াই সব নয়, কাজে লাগানোটাই বড়’
বাংলাদেশের যুব বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী। ব্যাটে-বলে অবদান রাখার পাশাপাশি চোখ ধাঁধানো ফিল্ডিং করার সামর্থ্যের কারণে অন্য যে কারও চেয়ে আলাদা তিনি। কেবল যুব পর্যায়েই নয়, বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে যেখানে সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই আলো ছড়িয়েছেন তরুণ এই অলরাউন্ডার। সেটার স্বীকৃতি হিসেবে ২০ বছর বয়সেই জাতীয় দলে ডাক মিলে গেল শামীমের।
জিম্বাবুয়ে সফরকে সামনে রেখে বুধবার তিন ফরম্যাটের জন্য দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে জায়গা হয়েছে শামীমের। শেষ যুব বিশ্বকাপে খেলা দল থেকে শরিফুল ইসলামের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে জাতীয় দলে অভিষেক হতে পারে কার। প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পেয়ে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত তরুণ এই ক্রিকেটার। তবে উচ্ছ্বাসে গা ভাসাচ্ছেন না শামীম, তার মতে সুযোগ পাওয়ার চেয়ে সুযোগ কাজে লাগানোটাই বড়।
অনুভূতি জানাতে গিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে শামীম বললেন, 'এটা আমার এবং আমার পরিবারের জন্য সত্যিই দারুণ খবর। দল ঘোষণার আগেই জানতে পারি সুযোগ হতে পারে। তবে সুযোগটা পাওয়াই সব নয়, কাজে লাগানোটাই বড়। নির্বাচকরা আমার উপর আস্থা রেখেছেন, আমাকে অবশ্যই সেই আস্থার প্রতিদান দিতে হবে।'
জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার খবরে শামীমের বাড়িতে এখন আনন্দের জোয়ার। বাবা-মা থেকে শুরু করে চাচা এবং তার কোচ উচ্ছ্বাসে ভাসছেন। যাদের অবদানে স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে চলেছেন, তাদের কথা বলতে ভুললেন না প্রতিভাবান এই ক্রিকেটার, 'বাবা-মা সবাই খুশি, চাচারা খুশি। আমার কোচ খুশি। সবাইকে ধন্যবাদ, তাদের পরিশ্রমে আমি এতোটুকু আসতে পেরেছি।'
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখার সময়ে অনেকেই তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। চাপের বোঝা সইতে না পেরে দিক হারিয়ে ফেলেন অনেকেই। খারাপ শুরুর পর কেউ কেউ হারিয়েও যান। শামীম অবশ্য সব চাপ বইতে প্রস্তুত। তার ভাষায়, 'ভালো করার চেষ্টা অবশ্যই থাকবে। আর চাপ সবখানেই, শুধু ক্রিকেটেই যে চাপ, তা নয়।'
সব দিকেই শট খেলতে পারেন মারকুটে শামীম। তার বিশেষ গুণ উইকেটে গিয়েই মারার দক্ষতা। ভবিষ্যতের জন্য ৬-৭ নম্বরে তাকেই ভাবা হচ্ছে। দলের প্রয়োজনে অফ ব্রেক বোলিং দিয়ে অবদান রাখার সামর্থ্যও আছে তার। পাশাপাশি শামীমের দুর্দান্ত ফিল্ডিংও মন কেড়েছে নির্বাচকদের।
ছয় নম্বরে ব্যাটিং করতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন শামীম। এই পজিশনে ব্যাটিং করে সত্যিকারের ফিনিশার হয়ে উঠতে চান তিনি। শামীম বলেন, 'ব্যাটিংয়ে আমার ছয় নম্বর পজিশন। আমি চাই ফিনিশ করতে, যেভাবেই হোক। দলকে এগিয়ে নিতে চাই, এটাই আমার লক্ষ্য।'
যুব বিশ্বকাপের কয়েক মাস পর বিসিবির হাই পারফরম্যান্স ইউনিটে সুযোগ পান শামীম। তখন থেকেই তার ওপর নজর বিসিবির। এরপর সবাইকে মুগ্ধ করে চলেছেন তিনি। গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে আয়ারল্যান্ড 'এ' দলের বিপক্ষে দারুণ খেলেন তিনি।
চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতেও বেশ কিছু নজরকাড়া পারফরম্যান্স করেছেন শামীম। প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ১৪ ম্যাচে ১০ ইনিংসে ব্যাটিং করে ৩০.১৬ গড়ে ১৪৯.৫৮ গড়ে ১৮১ রান করেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৯। এই ইনিংসটি মাত্র ১৯ বলে ২টি চার ৫টি ছক্কায় সাজান শামীম। বল হাতে নিয়েছেন ৭ উইকেট।
সম্ভাবনাময় এই অলরাউন্ডারকে নিয়ে অনেক আশা বিসিবির প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর, 'শামীম পাটোয়ারী যখন যুব বিশ্বকাপ শেষে আমাদের হাই পারফরম্যান্সে (এইচপি) সুযোগ পায়, তখন থেকেই মনিটরিং করা হচ্ছিল। আয়ারল্যান্ড 'এ' দল এসেছিল আমাদের এখানে, তখনও বেশ ভালো করেছে। এরপর আমাদের এখানে যে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ম্যাচগুলো হয়েছে, সেখানে ভালো করেছে। ওর যে দক্ষতা, আশা করি জাতীয় দলে আমাদের জন্য বেশ সহায়ক হবে।'