এক হাজার ২০ দিন পর সেঞ্চুরির তৃপ্তিতে ‘কিং কোহলি’
আফগান পেসার ফরিদ আহমেদকে উড়িয়ে সীমানাছাড়া করে বিরাট কোহলি চেনা রাজ্যে প্রবেশ করলেন। সেখানে শুধুই তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারের গল্প। ৬ রান যোগ করেই খুলে ফেললেন হেলমেট, কোহলির মুখে ফুটে উঠলো স্মিত হাসি। এরপর আকাশপানে চেয়ে যেন স্রষ্ঠাকে বলতে চাইলেন, 'তোমায় ধন্যবাদ।' উদযাপনের অংশে থাকলো গলার লকেটে চুমু খাওয়াও।
গত আইপিএলে এভাবে আকাশপানে তাকিয়ে রাজ্যের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে দেখা গেছে কোহলিকে। এবার সেভাবেই স্রষ্ঠাকে জানালেন ধন্যবাদ। তবে এবার হাসিমুখে অন্ধকার সময়কে বিদায় জানানোর তৃপ্তি নিয়ে। অপেক্ষা যে কম নয়, ১ হাজার ২০ দিন পর সেঞ্চুরির দেখা পেলেন ভারতের সাবেক এই অধিনায়ক। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে সেঞ্চুরি করেন তিনি।
দিনের সংখ্যা হাজার হলেও কোহলির কাছে নিশ্চয়ই তা বহুকাল। উইকেটে গেলেই যার ব্যাটে রানের ফোয়ারা বইতো, সেঞ্চুরি করতেন হেসেখেলে; তার কাছে ১ হাজার দিন যুগ না হয়ে উপায় কী! অবশেষে রাজার বেশে ফিরলেন কোহলি। টি-টোয়েন্টি সংস্করণের এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১২২ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেললেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
একে তো দীর্ঘদিনের অপেক্ষা ফুরালো, পাশাপাশি মিললো প্রথমের স্বাদ। হ্যাঁ, টি-টোয়েন্টিতে এটাই কোহলির প্রথম সেঞ্চুরি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কোহলির সেঞ্চুরি সংখ্যা দাঁড়ালো ৭১। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন যৌথভাবে রিকি পন্টিংয়ের সঙ্গে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক তিনি।
এবারের এশিয়া কাপে রান পেলেও চেনা ছন্দ ফিরে পাচ্ছিলেন না কোহলি। দুটি হাফ সেঞ্চুরি করার পরও অতৃপ্ত দেখাচ্ছিল তাকে। আফগানদের বিপক্ষে নিজের সেরা ছন্দ ফিরিয়ে আনলেন তিনি। খেললেন ব্যাটকে তরবারিতে পরিণত করে। ২০০ স্ট্রাইক রেটে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটি সাজালেন কোহলি।
১২২ রানের অপরাজিত ইনিংসটি খেলতে মাত্র ৬১ বল খরচা করেছেন কোহলি। ইনিংসটি সাজিয়েছেন ১২টি চার ও ৬টি ছক্কায়। সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৫৩ বলে ১০টি চার ও ৩টি ছক্কায়। ১০০ পেরিয়ে আরও ৩টি ছক্কা ও ২টি চার মারেন বর্তমান সময়ে অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান। তার এই খুনে ইনিংসে আফগানদের বিপক্ষে ২ উইকেটে ২১২ রান তোলে ভারত।
দীর্ঘ অপেক্ষা ফুরানো ইনিংস খেলার পর কোহলি বলেন, 'গত আড়াই বছর আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। এক মাসের মধ্যে ৩৪ পূর্ণ করব আমি। বুনো যে উদ্যাপন (সেঞ্চুরির পর), সেগুলো আসলে অতীত এখন। আসলে আমি অবাকই হয়েছি। এ সংস্করণে সেঞ্চুরি পাব, ভাবতেই পারিনি। আসলে অনেক কিছুর সমন্বয় এটি।'
সেঞ্চুরির উদযাপনে কোহলি যে গলার লকেটে চুমু খান, সেটা তার স্ত্রী আনুশকার জন্য। কোহলি বলেন, 'দল আমাকে সহায়তা করেছে। আমি জানতাম, বাইরে অনেক কিছুই ঘটছে। লকেটে চুমু খেয়েছি; কারণ, আপনি আমাকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছেন শুধু একজনের জন্যই। সে আমাকে অনেক কিছুই অন্যভাবে দেখতে শিখিয়েছে। সে আনুশকা। আমার এই সেঞ্চুরি তার জন্য, আমাদের ছোট মেয়ে ভামিকার জন্যও।'
'যখন আপনার পাশে বসে কেউ কথাবার্তাকে এভাবে নিতে পারবে, যেমন আনুশকা করেছে…আমি আসলে মরিয়া ছিলাম না। ছয় সপ্তাহে তরতাজা হয়ে এসেছি। বুঝেছিলাম, কতটা ক্লান্ত আমি। প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, এ বিরতির কারণেই আমার খেলাকে আবার উপভোগ করতে পারছি।' যোগ করেন কোহলি।