দুরন্ত সেঞ্চুরিতে ইতিহাসের পাতায় মিরাজ
অনবদ্য, অসাধারণ, অবিশ্বাস্য; এসব বিশেষণও যেন কম হয়ে যায়। মেহেদী হাসান মিরাজের কীর্তির বর্ণনায় স্থান পেতে পারে আরও কিছু বিশেষায়িত শব্দ। দিকাহারা দলকে পথ দেখিয়ে কীভাবে আলোতে নিয়ে যেতে হয়, ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে তা করে দেখিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও যখন দলের একই হাল, মিরাজ হয়ে উঠলেন আরও তেজোদীপ্ত। এবার এই অলরাউন্ডার ব্যাট হাতে যা করলেন, ওয়ানডের ইতিহাসে তা এর আগে হয়েছে কেবল একবার।
দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেন মিরাজ। পরের ওয়ানডেতে এসে দলের অবস্থা যখন আরও করুণ, ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান তখন নিজের ব্যাটকে পরিণত করলেন খোলা তরবারিতে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে রেকর্ড সপ্তম জুটি গড়ার পাশাপাশি চোখ ধাঁধানো শটে রাঙালেন নিজের ইনিংস, তুলে নিলেন মহাকাব্যিক এক সেঞ্চুরি।
ওয়ানডেতে এটাই তার প্রথম সেঞ্চুরি। মিরাজের কাছে ইনিংসটির মাহাত্ম্য তাই 'অতি বিশেষ।' আরও একটি কারণে ইনিংসটি বিশেষ, যা ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসেই বিরল। আট নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করেছেন তিনি, খেলেছেন ৮৩ বলে ৮টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১০০ রানের হার না মানা ইনিংস। আট নম্বরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রথম এবং ওয়ানডে ইতিহাসের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির ঘটনা এটা।
ওয়ানডেতে মিরাজের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল ৮১। এই ইনিংস খেলে নিজেকে তো ছাড়িয়েছেনই, বিরল রেকর্ডে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে তুলেছেন নিজের নাম। ওয়ানডে ইতিহাসে তার আগে আট নম্বরে নেমে এর আগে মাত্র একজন ব্যাটসম্যান তিন অঙ্ক ছুঁতে পেরেছেন।
গত বছর রেকর্ডটি গড়েন আয়ারল্যান্ডের সিমি সিং। মালাহাইডে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৯১ বলে ১৪ চারে ১০০ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। একটি জায়গায় অবশ্য সিমি সিংকেও ছাড়িয়ে গেছেন মিরাজ, হয়েছেন প্রথম। প্রথমে ব্যাট করা দলের পক্ষে আট নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। সিমি সিং রান তাড়ায়, অর্থাৎ ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন।
ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ শুরুতেই দিক হারায়। চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় ৬৯ রানের মধ্যেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে ঘরের মাঠের দলটি। এই ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ১৬৫ বলে ১৪৮ রানের জুটি গড়েন মিরাজ। যা ভারতের বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটি। এই জুটিতেই শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে ২৭১ রানের লড়াকু পুঁজি পায় বাংলাদেশ।
সপ্তম উইকেটে যেকোনো দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা জুটি এটা। গত ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে আফিফকে সঙ্গে নিয়ে মিরাজের গড়া অবিচ্ছিন্ন ১৭৪ রানের জুটিটি সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের সেরা। ভারতের বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে যেকোনো দলের জন্য এতদিন সেরা জুটি ছিল ১২৬ রানের। ২০০৫ সালে ডাম্বুলায় অবিচ্ছিন্ন এই জুটি গড়েন শ্রীলঙ্কার উপুল চন্দনা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে।
সপ্তম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ-মিরাজের ১৪৮ রানের জুটিটি ওয়ানডে ইতিহাসে যৌথভাবে তৃতীয় সেরা। ২০১৫ সালে বার্মিংহামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের জস বাটলার-আদিল রশিদ ১৭৭ রানের জুটি গড়েন, যা এখনও সেরা। দ্বিতীয় স্থানে মিরাজ-আফিফের অবিচ্ছিন্ন ১৭৪ রানের জুটি। চলতি বছরের মার্চে আরব আমিরাতের বাসিল হামিদ-কাশিফ দাউদ নামিবিয়ার বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে ১৪৮ রানের জুটি গড়েন, মাহমুদউল্লাহ-মিরাজ জুটি বসলো তাদের নামের পাশে।