ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করতে নেমে বিশাল ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ
হারানোর কিছু ছিলো না, সিরিজ জয় তো আগেই নিশ্চিত হয়। চাপহীন থেকে ভারতের বিপক্ষে সেরা ক্রিকেট খেলার সুযোগ ছিলো বাংলাদেশের। তবু চাপহীন থাকা গেল না, অদৃশ্য এক চাপ ভর করে বাংলাদেশ শিবিরে। সামনে যে প্রথমবারের মতো ভারতকে কোনো ফরম্যাটে হোয়াইওয়াশ করার হাতছানি! এই চাপেই কিনা খেই হারালো বাংলাদেশ, ব্যাটে-বলে সামান্যতম লড়াইও করতে পারলো না তারা। চরম হতাশার পারফরম্যান্সে মেনে নিতে হলো বিশাল এক হার।
শনিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে ২২৭ রানের বড় ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। অস্বস্তির এক হারে ওয়ানডে মিশন শেষ হলো সিরিজ জেতা লিটন কুমার দাসের। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে রানের হিসাবে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হার। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যবধানের হার ২৩৩ রানে, ২০০০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সিরিজ খোয়ানো ভারতের এটা রানের হিসাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ জয়।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে ভারত। ম্যাচসেরা ইশান কিষানের রেকর্ড গড়া ডাবল সেঞ্চুরি ও বিরাট কোহলির সেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটে ৪০৯ রানের পাহাড় গড়ে তারা। যা ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে যেকোনো দলের পক্ষে সর্বোচ্চ সংগ্রহ। বিশাল লক্ষ্য পাড়ি দিতে নামা বাংলাদেশ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধুঁকে ধুঁকে ব্যাটিং করে, ৩৪ ওভারে ১৮২ রানেই গুটিয়ে যায় ঘরের মাঠের দলটি।
ভারতের বিপক্ষে বিশাল হার না বলে ইশান কিশানের বিপক্ষে বাংলাদেশের হারও বলা যায়। রেকর্ড বই এলোমেলো করে দেওয়া ভারতের তরুণ বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান খেলেন ১৩১ বলে ২৪টি চার ও ১০টি ছক্কায় ২১০ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস। বাংলাদেশ করেছে ১৮২, যা কিশানের ইনিংসের চেয়েও ২৮ রান কম। পুরো দল মিলেও তার সমান রান করতে পারেনি বাংলাদেশ। এই হারের পরও অবশ্য বাংলাদেশের মুখেই হাসি, তাদের হাতেই যে ট্রফি উঠে উঠেছে। সাত বছর পর ভারতের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ।
৪১০ রানের বিশাল লক্ষ্য, এই রান পাড়ি দিতে রেকর্ড গড়তে হতো বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সফল রান তাড়া ৩১৯ রানের। এ ছাড়া বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ৩৩৩। এই রান পাড়ি দেওয়া যে প্রায় অসম্ভব, সেটা শুরু থেকেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের শারীরিক ভাষায় ফুটে উঠেছে। একবারের জন্যও মনে হয়নি ম্যাচটি জেতার জন্য নেমেছে ঘরের মাঠের দলটি।
বড় লক্ষ্যে তেড়েফুঁড়ে শুরু করতে গিয়ে অনেক সময় ব্যাটিং করা দল দিক হারায়। কিন্তু বাংলাদেশ তেমন শুরু না করেই দিশেহারা ওঠে। দলীয় ৩৩ রানে ওপেনার এনামুল হক বিজয়ের বিদায়ে পর নিয়মিত ধারায় উইকেট হারাতে শুরু করেন বাংলাদেশ। কিছুক্ষণ পরই বিদায় নেন ভালো শুরু পাওয়া লিটন, ২৬ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ২৯ রান করেন তিনি।
এরপর কিছুটা প্রতিরোধ, চাপ সামলে দলকে ঠিক পথে ফেরানোর চেষ্টা করেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। যদিও এই জুটি দীর্ঘ হয়নি। ১৩ বলে ৭ রান করে বিদায় নেন মুশফিক। ইনিংসের সর্বোচ্চ রান করা সাকিব এরপর ইয়াসির আলীকে নিয়ে লড়াই চালান, এই জুটি থেকে আসে ৩০ রান। ২৫ রান করা ইয়াসিরের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি।
সাকিবও আর বেশি সময় টিকতে পারেননি, ৫০ বলে ৪টি চারে ইনিংস সেরা ৪৩ রান করে বিদায় নেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। এরপর ব্যাটসম্যানদের মধ্য থেকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কিছুটা লড়াই করেন, ২৬ বলে ২০ রান করেন তিনি। হারের ব্যবধান কামিয়েছেন দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান। তাসকিন ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন, মুস্তাফিজ করেন ১৩ রান। ভারতের শার্দুল ঠাকুর ৩টি এবং অক্ষর প্যাটেল ও উমরান মালিক ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান মোহাম্মদ সিরাজ, কুলদীপ যাদব ও ওয়াশিংটন সুন্দর।
এর আগে ব্যাটিং করা ভারতের পুরোটা ইনিংসজুড়ে একটি নাম, ইশান কিশান। তাকে সঙ্গ দেওয়া কোহলিও নিজের চেনা ছন্দে ব্যাটিং করেন। দ্বিতীয় উইকেটে ২৯০ রানের জুটি গড়েন এ দুজন। যা ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো দলের যেকোনো উইকেটে সেরা জুটি। এই জুটি গড়ার পথে ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করে নতুন ইতিহাস লেখেন কিশান।
ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান ডাবল সেঞ্চুরি করেন, যা এই ফরম্যাটের দ্রুততম। এ পথে তিনি ছাড়িয়ে যান ক্রিস গেইলকে। ১৩৮ বলে ডাবল সেঞ্চুরি করা ক্যারিবীয় এই ব্যাটসম্যানের দখলে ছিল দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডটি। কিশানের দিনে অসাধারণ ব্যাটিং করেন কোহলিও, বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান ৯১ বলে ১১টি চার ও ২টি ছক্কায় ১১৩ রান করেন। এ ছাড়া ওয়াশিংটন ৩৭ ও অক্ষর ২০ রান করেন।
বাংলাদেশের বোলারদের ওপর দিয়ে এদিন ঝড় বয়ে যায়। বিশেষ করে তাসকিন আহমেদ ও এবাদত হোসেনকে বেশি পরীক্ষা দিতে হয়েছে। তাসকিন ২ উইকেট পেলেও ৯ ওভারে খরচা করেন ৮৯ রান। এবাদত ৯ ওভারে ৮০ রানে ২ উইকেট নেন। সবচেয়ে কম রান খরচা করেছেন এক উইকেট নেওয়া মুস্তাফিজর রহমান। ১০ ওভারে ৬৬ রান তিনি। ব্যাটিং ঝড়ের মাঝে সাকিব আল হাসানও ভালো করেছেন। অভিজ্ঞ এই স্পিনার ১০ ওভারে ৬৮ রানে ২ উইকেট নেন। ১ উইকেট নেওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ ১০ ওভারে খরচা করেন ৭৬ রান।