সমানে লড়েও সুযোগ হাতছাড়া করার আক্ষেপে বাংলাদেশ
সকাল আর বিকালটা বাংলাদেশের, মাঝের সময়টা ভারতের। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনে লড়াই হলো সমানে সমান। যদিও গল্পটা ভিন্ন হতে পারতো। কিন্তু বাংলাদেশের ক্যাচ মিস, স্টাম্পে বল লেগে বেল না পড়া ও ঠিক সময়ে রিভিউ না নিতে পারায় তা হলো না। সমানে সমান লড়াই করার পরও তাই আক্ষেপ নিয়ে প্রথম দিন শেষ করতে হলো বাংলাদেশকে।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামা ভারত ৬ উইকেটে ২৭৮ রান তুলে প্রথম শেষ করেছে। তিনবার জীবন পেয়ে ভারতের ইনিংস গড়ার অন্যতম কারিগর শ্রেয়াশ আইয়ার ৮২ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছেন। এক বল বাকি থাকতে আউট হন অক্ষর প্যাটেল।
আরও ভালো অবস্থানে থেকে দিন শেষ করতে পারার সুযোগ থাকার পরও তা করতে না পারায় আক্ষেপ হতে পারে ভারতেরও। এলোমেলো শুরুর পর ইনিংস গুছিয়ে নিয়েও শেষটা একইভাবে করা হয়নি সফরকারীদের। শেষ ৫ ওভারের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুই উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে কিছুটা পিছিয়েই পড়ে তারা।
তবে বাংলাদেশের হতাশা এরচেয়ে অনেক বেশি। ঘরের মাঠের দলটি ক্যাচ ফেলেছে ৩টি। উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান দুটি ও পেসার এবাদত হোসেন একটি ক্যাচ ফেলেন। এবাদত আবার ভাগ্যকে সঙ্গে পাননি। তার বিপক্ষে ব্যাটিংয়ের সময় শ্রেয়াস আইয়ারের স্টাম্পে বল লাগলেও বেল পড়েনি, বেঁচে যান ভারতীয় এই ব্যাটসম্যান। আবার একটি নিশ্চিত আউটও পাওয়া হয়নি, কারণ মৃদু আবেদন করলেও রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, আউট ছিলেন ব্যাটসম্যান।
সুযোগ হাতছাড়া করার লম্বা তালিকায় প্রথম নামটি সোহানের। ব্যক্তিগত ১২ রানের সময় উইকেটের পেছনে ক্যাচ তোলেন ভারতের ইনিংসের আরেক কাণ্ডারী চেতেশ্বর পূজারা, কিন্তু ক্যাচটি তালবন্দী করতে পারেননি সোহান। এরপর সাকিব আল হাসানের করা ৪৭.৫ ওভারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন শ্রেয়াসও। কিছুটা কঠিন হলেও ক্যাচটি নেওয়া সোহানের পক্ষে সম্ভব ছিল। কিন্তু দেশসেরা এই উইকেটরক্ষক এবারও নিতে পারেনি ক্যাচটি।
৭৫.৪ ওভারে আরও হতাশা বাড়ে বাংলাদেশের। ব্যক্তিগত ৬৭ রানে মিরাজকে তুলে মারেন শ্রেয়াস। মিড উইকেটে সহজ ক্যাচটি মাটিতে ফেলে দেন ইবাদত। ব্যক্তিগত ৭৭ রানে আবারও বেঁচে যান ভারতের এই ব্যাটসম্যান। এবাদতের বলে বোল্ড হন তিনি, কিন্তু বেলস না পড়ায় বেঁচে যান শ্রেয়াস। দিনের শেষ বলে অক্ষরকে আউট করা বাংলাদেশ তার উইকেট পেতে পারতো আরও আগেই। কিন্তু ৮৬.৩ ওভারে তাইজুলের বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তিনি। আবেদন করলেও রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ।
এতো হতাশার মাঝেও বল হাতে ভালো করেছেন তাইজুল ইসলাম। বাংলাদেশের বাঁহাতি এই স্পিনার ৩০ ওভারে ৮৪ রানে ৩টি উইকেট নেন। ডানহাতি স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ১৮ ওভারে ৭১ রান খরচায় নেন ২টি উইকেট। একটি উইকেট পান ১২ ওভার করা ডানহাতি পেসার খালেদ আহমেদ।
প্রথম দিন শেষে তাইজুল জানিয়েছেন, ভারতকে অলআউট করার সুযোগ ছিল। সত্যিকার অর্থেই তাই, বল হাতে তেমন শুরুই করেছিল বাংলাদেশ। ৪৮ রানের মধ্যেই ভারতের ৩ উইকেট তুলে নেয় স্বাগতিকরা। ভারতের ইনিংসে প্রথম আঘাতটি হানেন তাইজুল। ১৪তম ওভারে শুভমান গিলকে ফিরিয়ে দেন তিনি। তাইজুলের লেগ স্টাম্প বরাবর ফুল লেংথের ডেলিভারিতে প্যাডেল সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হন শুভমান, প্রথম স্লিপে থাকা ইয়াসির আলী রাব্বি নেন ক্যাচ।
৪০ বলে ২০ রান করে সাজঘরে ফেরেন শুভমান। ভারত প্রথম উইকেট হারানোর চাপ কাটিয়ে ওঠার আগেই আঘাত হানেন খালেদ আহমেদ। ৫৪ বলে ২২ রান করা ভারত অধিনায়ক লোকেশ রাহুলের স্টাম্প উপড়ে নেন বাংলাদেশের এই পেসার। ২০তম ওভারে ভারতকে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা দেন তাইজুল। ফিরিয়ে দেন বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান কোহলিকে। তাইজুলের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে দিক হারান ৫ বলে ১ রান করা কোহলি।
দ্রুত ৩ উইকেট হারানো সফরকারীদের খেলায় ফেরান জেতেশ্বর পূজারা ও ঋষভ পন্ত। এই জুটি থেকে আসে ৬৪ রান। পন্ত ৪৬ রান করে ফিরে গেলেও আস্থার প্রতীক হয়ে টিকে থাকেন পূজারা। শ্রেয়াস আইয়ারের সাথে গড়ে তোলেন ইনিংসের সবচেয়ে বড় ১৪৯ রানের জুটি। তাইজুলের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ২০৩ বলে ১১টি চারে ৯০ রান করেন ডানহাতি এই টেস্ট স্পেশালিস্ট। এরপর অক্ষর প্যাটেলের সঙ্গে শ্রেয়াসের জুটি দীর্ঘ হয়নি। দিনের খেলা এক বল বাকি থাকতে আউট হন ১৪ রান করা অক্ষর। শ্রেয়াস তার হার না মানা ৮২ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন ১৬৯ বলে ১০টি চারে।