ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ে দেড়শ’তেই শেষ বাংলাদেশ
যেখানে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছিল বাংলাদেশ, সেখান থেকে ভালো কিছুর আশা করার সুযোগ ছিলো না। আশা করেনি বাংলাদেশ, অপ্রত্যাশিত সাফল্যও আসেনি। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশের ইনিংস। বাকি দুই উইকেট থেকে থেকে এসেছে ১৭ রান। চরম হতাশার ব্যাটিং করা সাকিব আল হাসানের দল প্রথম ইনিংসেই পিছিয়ে পড়েছে বড় ব্যবধানে।
ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানেই অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসেই ২৫৪ রানের বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছে ঘরের মাঠের দলটি। ফলোঅনে পড়লেও ফলোঅন করায়নি ভারত। সফরকারীরা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামার পর ব্যবধান আরও বেড়ে চলেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ ওভারে বিনা উইকেটে ২০ রান তুলেছে ভারত, তারা এখন এগিয়ে ২৭৪ রানে।
আগের দিন অপরাজিত থেকে শেষ করেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও এবাদত হোসেন। তৃতীয় দিন কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাঙে তাদের ৪২ রানের জুটি, বাংলাদেশে ইনিংসের এটাই সর্বোচ্চ রানের জুটি। এবাদত ৩৭ বলে ১৭ রান করে বিদায় নেন। খালেদ আহমদকে নিয়ে মিরাজও আর লড়াই করতে পারেননি। ডানহাতি এই অলরাউন্ডার ৮২ বলে ২৫ রান করেন, যা বাংলাদেশের ইনিংসের দ্বিতীয় ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। খালেদ ১৪ বলে শূন্য রাতে অপরাজিত থাকেন।
বাংলাদেশের ইনিংসের সর্বোচ্চ রান ২৮, যা করেন মুশফিকর রহিম। এ ছাড়া অভিষিক্ত জাকির হাসান করেন ২০ রান। ভালো শুরু করেও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ লিটন কুমার দাসের ব্যাট থেকে আসে ২৪ রান। নুরুল হাসান সোহান করেন ১৬ রান। মিরাজ-এবাদতসহ এই কজন দুই অঙ্কের রান করতে পেরেছেন। বাকিদের কেউ ৪ রানও পার করতে পারেননি।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ভারতের করা ৪০৪ রানের জবাবে আগের দিন ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ ৮ উইকেট ১৩৩ রান তোলে। ফলো-অন এড়ানোর জন্য দরকার ছিল ৭১ রান, যা তুলতে পারেনি তারা। সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন কুলদীপ যাদব। ভারতের চায়নাম্যান এই বোলারের বিপক্ষে রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়েন সাকিব, মুশফিক, সোহানরা। ১৬ ওভারে ৪০ রানে ৫টি উইকেট নেন কুলদীপ। পেসার মোহাম্মদ সিরাজও তোপ দাগেন, ১৩ ওভারে ২০ রান তার শিকার ২ উইকেট। একটি করে উইকেট নেন উমেশ যাদব ও অক্ষর প্যাটেল।
দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে ৫ রানের মধ্যেই ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ফিরে যান নিজের ছায়া হয়ে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত ও চট্টগ্রামের ঘরের মাঠের ছেলে ইয়াসির আলী রাব্বি। ইনিংসের প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন শান্ত। ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সিরাজের অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বের হয়ে যাওয়া লেংথ বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
হতাশা বাড়ে দুই ওভার পরই। চতুর্থ ওভারে উপড়ে যায় প্রথমবারের মতো তিন নম্বরে নামা ইয়াসিরের স্টাম্প। এবার শিকারির ভূমিকায় ভারতের অভিজ্ঞ পেসার উমেশ যাদব। ডানহাতি এই পেসারের ১৩৯ কিলোমিটারের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে ব্যাটে চালিয়ে ইনসাইড এজ হন ইয়াসির, ভেঙে যায় স্টাম্প। ১৭ বলে ৪ রান করে থামেন তিনি।
শুরুতেই দিক হারিয়ে ফেলা দলকে ঠিক পথে ফেরানোর চেষ্টা করেন জাকির হাসান ও লিটন কুমার দাস। অভিষিক্ত ওপেনার জাকিরকে নিয়ে লড়াই শুরু লিটনকে সাবলীল দেখাচ্ছিল। ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু লড়াইটা দীর্ঘ হয়নি তারও। কিছুক্ষণ পরই ফিরে যান লিটন, এরপর থামেন জাকিরও।
৩০ বলে ৫টি চারে ২৪ রান করা লিটন দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হয়েছেন। ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সিরাজের একটি ডেলিভারি ডিফেন্স করলেও বল ব্যাটে লেগে ড্রপ দিয়ে গিয়ে স্টাম্প ভেঙে দেয়। রাজ্যের হতাশা নিয়ে বিদায় নিতে হয় তাকে। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট খেলতে নামা জাকির ৪৫ বলে ২০ রান করে সিরাজেরই শিকারে পরিণত হন। বাংলাদেশের যাওয়া প্রথম চার উইকেটের তিনটিই নেন সিরাজ।
এই দুই ব্যাটসম্যানের বিদায়ে শুরুর মতো আবারও দিকহারা হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। দুই অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম এবার হাল ধরেন। তাদের ব্যাটেও স্বস্তি মেলেনি। অসাধারণ বোলিং করা ভারতের চায়নাম্যান বোলার কুলদীপ যাদব ফিরিয়ে দেন এ দুজনকে। মুশফিকের সঙ্গে ১৯ রানের জুটি গড়ে বিদায় নেন অধিনায়ক সাকিব। কুলদীপের বলে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হন ২৫ বলে ৩ রান করা অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার।
মুশফিক-সোহান জুটিও দলকে খাদের কিনার থেকে উদ্ধার করতে পারেনি। এই দুই ব্যাটসম্যান গড়েন ২২ রানের জুটি। উইকেটরক্ষক সোহানের বিদায়ে শেষ সম্ভাবনার জুটিটি ভাঙে। ফেরার আগে ২২ বলে ৩টি চারে ১৬ রান করেন। একপাশ সামলে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যাটিং করা মুশফিক ৫৮ বলে ২৮ রান কেরে আউট হন, যা বাংলাদেশের ইনিংসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস।
স্পিনার হয়েও অনেক বিপদেই বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারের আস্থা হওয়া তাইজুল ইসলাম এরপর বিদায় নেন, রানের খাতাই খুলতে পারেননি তিনি। এরপর পেসার এবাদত হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে দিনের বাকি ৯ ওভার পার করেন মিরাজ। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ১৬ রানে ও এবাদত ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন।