‘বাইরে থেকে সাকিব ভাইয়ের চিৎকার দেখে বোলার বদলাচ্ছিলাম’
ব্যাপারটি পাড়ার ক্রিকেটের মতো। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান দেখে বোলার বদলে ডানহাতিকে টানলেন অধিনায়ক। বোলার পাল্টানো দেখে প্রান্ত বদলে নিলেন ব্যাটসম্যানরাও। এভাবে চললো কিছুক্ষণ, এরপর অনাকাঙ্খিত ঘটনা। প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক মাঠে ঢুকে গিয়ে শাসিয়ে এলেন আম্পায়ারকে।
বিপিএলের বিতর্কিত এই ঘটনায় রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান পরে যে ব্যাখ্যা দিলেন, সেটা শুনলে সত্যিকার অর্থেই এটাকে পাড়ার ক্রিকেট ম্যাচ মনে হবে। উইকেটরক্ষক ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে জানালেন, ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান মাঠের বাইরে থেকে চিৎকার করছিলেন বলে তিনি বোলার বদলাচ্ছিলেন।
মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রংপুর রাইডার্সের করা ১৫৮ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নামে বরিশাল। এই ইনিংসের শুরু বাধে বিপত্তি, এই ঘটনায় ম্যাচ শুরু হতে মিনিট পাঁচেক দেরি হয়। সোহান বোলার পরিবর্তন করায় প্রান্ত বদল করেন বরিশালের দুই ওপেনার চতুরঙ্গ ডি সিলভা ও এনামুল হক বিজয়, আর এটা চলে কয়েক দফায়। এক পর্যায়ে নিয়মের তোয়াক্কা না করে মাঠে ঢুকে পড়েন সাকিব, তর্কে জড়ান আম্পায়ারের সঙ্গে।
ম্যাচের পর ঘটনার বর্ণনায় সোহান বলেন, 'সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে যখন তর্কাতর্কি হয়েছে, তখন তো আমি ছিলাম না। আমি এই পাশে ছিলাম। মাঠে ছিলাম, কী কথা হয়েছে আমি জানি না। আমি আমার পাশে ছিলাম। আমি দেখছিলাম সাকিব ভাই বাইরে থেকে চিলাচ্ছেন। সাকিব ভাই যখন বাইরে থেকে চিৎকার করছিলেন, আমিও বোলার বদলাচ্ছিলাম।'
দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেট খেলছেন সোহান। জাতীয় দলেই তার অভিষেকের সাত বছর হয়ে গেছে, পুরো ক্যারিয়ারের হিসাব করলে সময়কালটা আরও লম্বা। কিন্তু কোনো পর্যায়েই কখনও এমন ঘটনা দেখেননি বলে জানিয়েছেন তিনি। এমন ঘটনা আগে দেখেছেন কিনা, জানতে চাইলে সোহান বলেন, 'আজ দেখলাম, প্রথমবার।' নিয়ম না মেনে সাকিব মাঠে ঢুকে পড়ায় সাকিবের শাস্তি হওয়া উচিত কিনা? এই প্রশ্নটি অবশ্য এড়িয়ে যান তিনি, বলেন, 'কোনো মন্তব্য নেই। আমার আসলে ধারণা নেই।'
এমন ঘটনা কাম্য নয় জানিয়ে সোহান বলেন, 'আপনার দলের জন্য যতটুকু করা দরকার, আমার কাছে মনে হয় যে ফেয়ার এনাফ। যে যার দিক থেকে চেষ্টা করে। আমি অবশ্যই চাইব আমার সেরা বোলার সেরা ব্যাটারের সামনে বোলিং করুক। কেউ চায় না, এ রকম কিছু ঘটে যাক। এটা হয়, কারো এ রকম চিন্তা থাকে না। অনেক কিছু যা মাঝে মধ্যে হয়, আরেকটু বেটার হতে পারে সবকিছু।'
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বরিশালের বাঁহাতি ওপেনার চতুরঙ্গ ডি সিলভা স্ট্রাইক প্রান্ত নেন। বোলিং প্রান্তে তখন রংপুরের স্পিনার রকিবুল হাসান। কিন্তু চতুরঙ্গকে স্ট্রাইকে দেখে বোলার পরিবর্তন করে রংপুর। দলটির অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান বল তুলে দেন ডানহাতি অফ স্পিনার শেখ মেহেদী হাসানের হাতে।
রংপুরের বোলার পরিবর্তন দেখে প্রান্ত বদল করে নেন বরিশালের দুই ওপেনারও, স্ট্রাইকে যান এনামুল হক বিজয়। এরপর রংপুর আবারও বোলার পাল্টায়, ডানহাতি বিজয়ের বিপক্ষে বাঁহাতি স্পিনার রকিবুলকে আনে তারা। এ নিয়ে মাঠের মধ্যে শুরু হয় নাটক। যা ডাগআউট থেকে লক্ষ্য করেন সাকিব। কিছুক্ষণ বাইরে থেকে বিষয়টি দেখার পর বরিশাল অধিনায়ক হাত দিয়ে ইশারা করে দুই ওপেনারকে মাঠ থেকে বেরিয়ে আসতে বলেন।
বরিশালের দুই ওপেনার তখন আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলছেন, এক পর্যায়ে নিয়ম ভেঙে মাঠে ডুকে পড়েন সাকিব। তখন তার পায়ে খেলার জুতাও ছিল না, স্যান্ডেল পরা সাকিব মাঠে ঢুকে স্কয়ার লেগ আম্পায়ার গাজি সোহেলের দিকে তেড়েফুঁরে এগিয়ে যান। আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়ান তিনি। মিনিট পাঁচেক চলে এই ঘটনা। অবশেষে সাকিব মাঠ ছাড়েন। পরে চতুরঙ্গর বিপক্ষে রকিবুলকে দিয়েই বোলিং শুরু করায় রংপুর।