‘আজ লিটনকে সবাই বাহবা দিচ্ছে, কিন্তু শুরুতে ও জঘন্য অবস্থায় ছিল’
বাংলাদেশ দলে মাশরাফি বিন মুর্তজা কেবল অধিনায়কই ছিলেন না; ছিলেন বড় ভাই, অভিভাবকও। দুঃসময়ে জুনিয়র ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস যোগানোর কাজটি দায়িত্ব নিয়ে করতে তিনি। অনেক ক্রিকেটারই সেটা নিজে থেকে জানিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) মাশরাফির দল সিলেট স্ট্রাইকার্সে খেলা নাজমুল হোসেন শান্তও কদিন আগে এমনটা জানিয়েছেন।
শান্ত বলেন, 'মাশরাফি ভাই সব সময় অনুপ্রাণিত করেন। বিপিএলে আমার প্রথম মৌসুমে উনি আমার অধিনায়ক ছিলেন। সব সময় অনুপ্রেরণামূলক কথা বলেন।' ব্যাপক সমালোচনাতেও খেই না হারানো বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছিলেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। চলতি বিপিএলেও ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে তিনি।
কেবল শান্তই নন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রল, সমালোচনার শিকার হন অনেক ক্রিকেটারই। লিটন কুমার দাসকে নিয়ে একটা সময়ে ব্যাপক ট্রল হয়েছে। নিন্দুকদের কথা কানে না তুলে নিজের কাজ করে যাওয়া লিটন এখন দেশের সেরা ব্যাটসম্যান। কঠিন সময় পেছনে ফেলে শান্তও সেই পথে হাঁটছেন। লিটনের মতো সফলতার পথে শান্তর কেমন উন্নতি হচ্ছে, এমন প্রশ্নে লিটনের দুঃসময়সহ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ঘটা অনেক কিছু নিয়ে কথা বলেন মাশরাফি।
বৃহস্পতিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে হাতেগোনা একজন-দুজন বা সর্বোচ্চ তিনজন ক্রিকেটার পেতে পারেন, যারা এই ধরনের আক্রমণ ছাড়াই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসে লম্বা সময় টিকে থেকেছে। ওই সময় যদি সোশ্যাল মিডিয়া থাকতো (এখনকার মতো), তামিম তাহলে তামিম হতে পারত না। মুশফিক আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিল। মাহমুদউল্লাহও একই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট যদি দেখেন, যারা ১০-১২ বছর খেলেছে, এভাবেই থিতু হয়েছে।'
লিটনকে নিয়ে হওয়া ট্রল-সমালোচনার ব্যাপারটি উল্লেখ করে মাশরাফি বলেন, 'লিটনের ক্ষেত্রেও একই জিনিস। তাকে তার ধর্ম টেনেও অনেক কিছু বলা হয়েছে একটা সময়। এসব চলেছেই। এসবের ভেতর দিয়েই ক্রিকেটারদের খেলতে হবে। কিছু করার নেই। কারণ আপনি তো আরেকজনকে বদলাতে পারবেন না। যেটা করতে পারবেন, তা হলো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং এসব থেকে দূরে থাকা। এই দেশে লোকে নেতিবাচকগুলোই বেশি পিক করে, পজিটিভ কিছু লিখে তো ফেইসবুকে ভালো কিছু পাওয়া যায় না। এ জন্য পজিটিভ জিনিসগুলো ফেইসবুকে কম পাবেন, ব্যক্তি আক্রমণের ক্ষেত্রে।'
সমালোচনার ঝড়ের মাঝে লিটনকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখতেন মাশরাফি। সাবেক কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহেও আশাবাদী ছিলেন। মাশরাফির ভাষায়, 'আজকে সবাই ওকে (লিটন) বাহবা দিচ্ছে। শুরুতে তো সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও জঘন্য অবস্থায় ছিল ও। আজকে বাংলাদেশ দলে থিতু হয়েছে। আমি যখন অধিনায়ক ছিলাম, তখন বিশ্বাস করতাম, লিটনের যে বেসিকস আছে, অনেক এগোবে। আজ অনেকেই বলেন যে, লিটন যতক্ষণ ব্যাটিং করে, টিভির সামনে থেকে উঠতে ইচ্ছে হয় না।'
'যখন হাথুরুসিংহে ছিলেন, আমি অধিনায়ক ছিলাম; আমরা বিশ্বাস করতাম যে এই ছেলেটা বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় ভবিষ্যৎ। আজ লিটন তা প্রমাণ করেছে। কিন্তু কে জানে, কাল লিটন আবার খারাপ খেললে একই জিনিস আবার হতে পারে। তবে লিটন এমন একজন, আমাদের বিশ্বাস যে দীর্ঘদিন পর একজন ওপেনার পেয়েছি, যে এখন যারা সিনিয়র হয়েছে, তারা যাওয়ার পর লিটন ওই জায়গাটা কভার করতে পারবে।' যোগ করেন মাশরাফি।
লিটনের মতো শান্তকেও সমালোচনা আঘাত করতে পারে না বলে মনে করেন মাশরাফি। বাঁহাতি এই ওপেনারকেও তাই লম্বা রেসের ঘোড়া মনে করেন তিনি, 'শান্তর ক্ষেত্রে কিন্তু একই জিনিস হয়েছে। যদি বিশ্বকাপ দেখেন, শান্ত কিন্তু পুরো দেশের, আমাদের সবার বিপক্ষে গিয়ে প্রায় দুইশ রান করে এসেছে। পরে আবার স্ট্রাগল করেছে, এখন আবার রান করছে। শান্তকে কিছুটা এসবের ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে।'
'আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্ট্রাগলিং পার্ট থাকতে পারে কিছুদিন। মানসিকভাবে শক্ত থাকা গুরুত্বপূর্ণ। যেটা শান্তর ক্ষেত্রে আমি দেখেছি যে, লিটনের মতোই বাইরের জিনিসগুলো ওকে বিরক্ত করে না। সেই ক্ষেত্রে আমার কেন জানি বিশ্বাস হয় যে এই ছেলেটা লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। এটা আমার মনে হয়। তবে দিনশেষে সবকিছু ওপর ওয়ালার রহমত প্রয়োজন হয়। আমি বিশ্বাস করি, এই ছেলেটা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনেক কিছু দিতে পারবে।' বলেন সাবেক এই অধিনায়ক।